ননএমপিওদের কষ্ট কেউ বোঝে না!

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

'টানা নয় বছর ধরে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে না। সারাদেশের ৫ হাজার ২৪২টি নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সব শর্ত পূরণ করে অপেক্ষা করছে। অপেক্ষার প্রহর কিছুতেই ফুরাচ্ছে না। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮২ হাজার শিক্ষক ও কর্মচারী পরিবার-পরিজন নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামমাত্র আয় ভাগাভাগি করে তারা সামান্য বেতন নেন। কোথাও আবার প্রতিষ্ঠান থেকে বেতনই পান না। এমপিওভুক্তি চাইতে রাজধানীতে এসে তারা পুলিশের নির্মম লাঠিপেটা ও পেপার স্প্রের শিকার হয়েছেন। অনশন করে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে মরণাপন্ন হয়ে পড়েছেন। মানুষ গড়ার কারিগর এই শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের দুঃখ-দুর্দশা দেখার কেউ নেই। তাদের কষ্ট কেউ বোঝে না।'  বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সাব্বির নেওয়াজ। 

আক্ষেপের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন 'নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের' সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির দাবিতে গড়ে ওঠা এই সংগঠনের জন্ম ২০০৬ সালে। ২০১৭ সালে এ সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পান তিনি। ১০১ সদস্য বিশিষ্ট এ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ বিনয় ভূষণ রায়। সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার খুলনা শহরের সোনাডাঙ্গার খুলনা আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ।

মাহমুদুন্নবী জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির দাবিতে তাদের সংগঠন ২০০৬  থেকে এ পর্যন্ত এক যুগে মোট ৩০ বার রাজধানীতে এসে বড় ধরনের আন্দোলন করেছে। প্রতিবারই সরকারের বিভিন্ন তরফ থেকে কেবল আশ্বাসই দেওয়া হয়েছে। সরকারের শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব থেকে শুরু করে দেশের বিশিষ্টজন তাদের আশ্বাস দিয়ে ঘরে পাঠিয়েছেন। তাদের আশ্বাসে ভর করে তারা ফিরে গিয়ে পাঠদানে মনোনিবেশ করেছেন। তবে তাদের দাবি যেই তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। 

অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার জানান, সর্বশেষ এমপিওর দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পাওয়ার জন্য গত ২০ থেকে ২৪ মার্চ টানা ৫ দিন রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়ক থেকে কদম ফোয়ারার সামনে বসে দিনরাত লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। ২১ মার্চ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অভিমুখে পদযাত্রার কর্মসূচি দিয়ে রওনা হলে পুলিশ কদম ফোয়ারার সামনে ব্যারিকেড দেয়। এ সময় শিক্ষক-কর্মচারীরা সেখানেই অবস্থান নেন। প্রায় ১৫-২০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী ঢাকায় এসে এ আন্দোলনে অংশ নেন। এ দফায়ও আশ্বাস নিয়ে ফিরে যেতে হয় তাদের।

গোলাম মাহমুদুন্নবী মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বঞ্চনা-দুর্ভোগের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে পারলে, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) দীর্ঘদিনের ঝুলে থাকা নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো একযোগে এমপিওভুক্ত করে এই অনিশ্চয়তা থেকে অবশ্যই মুক্ত করবেন।

সংগঠনের এই নেতা জানান, কয়েক দফায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও কেন অজানা কারণে এখ এমপিওভুক্তির বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না? শিক্ষকদের বাঁচা-মরার এই যৌক্তিক ও মানবিক আবেদন পূরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীই তাদের একমাত্র অবলম্বন।

এই শিক্ষক নেতা বলেন, টানা নয় বছর ধরে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি বন্ধ থাকায় দুর্দশায় পড়েছেন তারা। নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সর্বশেষ এমপিওভুক্ত করা হয়েছে ২০০৯ সালের ১৬ জুন। সেদিন সারাদেশের এক হাজার ৬০৯টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি) এমপিওভুক্ত করা হয়। প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী সরকারি সে সময়ে বেতনের আওতায় এসেছিলেন। এরপর আর কোনো উদ্যোগ নেই। বর্তমানে সারাদেশের প্রায় সাড়ে সাত হাজার নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার জানান, সব মিলিয়ে গত ১৭ বছরে মাত্র দুই বার এমপিওভুক্তি দেওয়া হয়েছে। অথচ এ সময় নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেড়েছে কয়েক হাজার। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের এই সভাপতি বলেন, এমপিওভুক্তি না দিলেও সরকার প্রতি বছর নতুন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি দিয়ে যাচ্ছে।

বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত করতে সংসদ সদস্যরাও উচ্চকণ্ঠ। তারা প্রতিটি বাজেট অধিবেশনে এ খাতে অর্থ বরাদ্দের জোর দাবি জানিয়ে আসছেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052750110626221