২০১৯ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই ছাপার কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে সংসদ নির্বাচনে হতে পারে- বিষয়টি মাথায় রেখে নভেম্বরের মধ্যেই ৯০ শতাংশ বই ছাপার কাজ শেষ করার লক্ষ্য স্থির করেছে এনসিটিবি। আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য ৩৫ কোটি ২২ লাখ কপি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় পৌনে ৩ কোটি কপি বই উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে।
মানসম্মত বই ছাপতে এবার কঠোর অবস্থানে এনসিটিবি। সংস্থার চেয়ারম্যান, সদস্য ও অন্য কর্মকর্তারা নিয়মিত সারাদেশের ছাপাখানা পরিদর্শন করছেন। ইতোমধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের কিছু বই ফেরত দিয়ে পুনরায় তা ছাপাতে বাধ্য করা হয়েছে। আর মুদ্রণ কাজে বিলম্বের কারণে ৪/৫টি প্রতিষ্ঠানকে আজ কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা গতকাল বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের অবস্থা ভালো। বইয়ের মানও ভালো হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ হচ্ছে। তবে যাদের বইয়ে ভুলত্রুটি বা মান খারাপ হবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। মান রক্ষায় কোন ছাড় নয়।’
এনসিটিবির অপর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা নির্বাচনের বছর। শিক্ষার্থীদের ভালোমানের বই উপহার দেয়া হবে। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে বইয়ের মান খারাপ করে কেউ কেউ সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করতে পারে। এজন্য এনসিটিবি খুবই সতর্ক; কঠোর অবস্থানে রয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী নিজেও নিয়মিত পাঠ্যবই ছাপার কার্যক্রমের খোঁজখবর রাখছেন।’
এনসিটিবি জানায়, আগামী শিক্ষাবর্ষে সারাদেশের চার কোটি ২৬ লাখ ১৯ হাজার ৮৬৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত মোট বইয়ের সংখ্যা ৩৫ কোটি ২১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮২ কপি।
এসব বই ছাপাতে দেশি-বিদেশি প্রায় ৩০০ ছাপাখানার (প্রিন্টার্স) সঙ্গে চুক্তি করে কার্যাদেশ দিয়েছে এনসিটিবি। এর মধ্যে মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন) এবং এসএসসি ভোকেশনাল স্তরের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহ করতে কাগজ ছাড়া ৩৪০টি লটে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে।
আর মাধ্যমিক বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন, ইবতেদায়ি, দাখিল, এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল এবং কারিগরি (ট্রেড বই) স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য কাগজসহ ৩২০টি লটে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। ছাপাখানাগুলো পুরোদমে বইয়ের কাজ করছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এনসিটিবি’র বিতরণ নিয়ন্ত্রক প্রফেসর জিয়াউল হক জানান, এবার প্রায় ৩৫ কোটি ২২ লাখ কপি বই ছাপা হচ্ছে। এসব বই ছাপাতে প্রায় ৮৫ হাজার মেট্রিক টন কাগজ ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে এনসিটিবি কিনে দিয়েছে প্রায় ১৫ হাজার মেট্রিক টন কাগজ। বাকি কাগজ প্রিন্টার্স’রা কিনে বই ছাপিয়ে সরবরাহ করবে।
এনসিটিবি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গত ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাধ্যমিক ও প্রাক-প্রাথমিক স্তরের ২ কোটি ৭৬ লাখ ৭১ হাজার ৩৪ কপি বই উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ করেছে ছাপাখানাগুলো। এনসিটিবি’র নিয়োগ করা দুটি প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তারা বইয়ের মান যাচাই করে রিপোর্ট দেয়ার পরই বই সরবরাহে ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে। মানহীন বই সরবরাহের কোন সুযোগ নেই।
এনসিটিবি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ইতোমধ্যে রাজধানীর কেরানীগঞ্জে অনুপম প্রিন্টার্সের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর বেশকিছু নিম্নমানের বই ছাপার প্রমাণ পেয়েছে মান পরীক্ষা-নিরীক্ষার দায়িত্ব পাওয়া এনসিটির একটি কমিটি। পরে ওইসব বই ফেরত পাঠিয়ে নিষিদ্ধ নোট-গাইড বইয়ের ব্যবসা করে আসা ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পুনরায় বই ছাপাতে বাধ্য করা হয়েছে। অনুপমের বইয়ে ফর্মা কম দেয়া, একই ফর্মা দু’বার মুদ্রণ, ছাপায় অস্পষ্টতা ও নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের প্রমাণ পায় মনিটরিং কমিটি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এনসিটিবির উপ-সচিব সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘অনুপম প্রিন্টার্স আমাদের কয়েকটি সেম্পল বই দিয়েছিল, যেগুলোতে কিছু ত্রুটি পাওয়া যায়। পরবর্তীতে আমরা তাদের সরবরাহ করা সকল বই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি।’
২০১৯ শিক্ষাবর্ষের মোট পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক স্তরের বই ৬৮ লাখ ৫৬ হাজার ২০ কপি। আর প্রাথমিক স্তরের ৯ কোটি ৮৮ লাখ ৮২ হাজার ৮৯৯ কপি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষার বই ২ লাখ ৭৬ হাজার ৭৮৪ কপি, ইবতেদায়ির ২ কোটি ২৫ লাখ ৩১ হাজার ২৮৩ কপি এবং দাখিলের তিন কোটি ৭৯ লাখ ৫৮ হাজার ৫৩৪ কপি ছাপা হচ্ছে।
মাধ্যমিক (বাংলা ভার্সন) স্তরের ১৮ কোটি ৫৩ হাজার ১২২ কপি এবং একই স্তরের ইংরেজি ভার্সনের ১২ লাখ ৪৭ হাজার ৮২৬ কপি বই ছাপা হচ্ছে।
এছাড়া কারিগরি শিক্ষা স্তরের ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৯৪৮ কপি, এসএসসি ভোকেশনাল স্তরের ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৭৫ কপি, ব্রেইল পাঠ্যপুস্তক ৫ হাজার ৮৫৭ কপি এবং সম্পূরক কৃষি (৬ষ্ঠ-৯ম) স্তরের ১ লাখ ২৪ হাজার ২৬১ কপি বই ছাপা হচ্ছে।
সূত্র: সংবাদ