ঢাকার নামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম যেন পিছু ছাড়ছে না। প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ সময়ের সুনামকে পুঁজি করে যখন অর্থ আয়ের অন্যতম খাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তখনই শুরু হয় অনিয়ম। প্রতিষ্ঠানগুলোর গভর্নিং বডির কতিপয় সদস্য, প্রতিষ্ঠান প্রধান, কিছু শিক্ষক এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। নামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তির চাপ থাকে। এ কারণে অনৈতিকভাবে আর্থিক সুবিধা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। অধ্যক্ষ নিয়োগে হয় বড় অঙ্কের লেনদেন। বুধবার (২২ মে) দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন নিজামুল হক।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তহবিল তছরুপ, ভর্তি দুর্নীতি, কোচিং ও সেশন ফির নামে অভিভাবকদের কাছ থেকে গলাকাটা ফি আদায়, নিয়োগে অনিয়ম, কেনাকাটায় হরিলুট, নিম্নমানের সহায়ক বই শিক্ষার্থীদের গছিয়ে দিয়ে প্রকাশক প্রতিষ্ঠান থেকে কমিশন গ্রহণসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে অধ্যক্ষ ও গভর্নিং বডির কতিপয় সদস্যের বিরুদ্ধে।
গভর্নিং বডির অনিয়মের কারণে সঙ্কটে পড়েছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। নিয়মিত গভর্নিং বডি গঠনেও ব্যর্থ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্যর্থ হয়েছে নিয়মিত অধ্যক্ষ নিয়োগে। ৩০ এর মধ্যে সাড়ে ৩ পাওয়া এক প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে গিয়েই যত বিপত্তি ঘটেছে। এ কারণে এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অধ্যক্ষ নিয়োগ নিয়েও গভর্নিং বডি ছিল দ্বিধাবিভক্ত। যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নানা অসঙ্গতি ও নিয়োগ বাতিলের দাবিতে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দাখিল করেছেন সর্বশেষ গভর্নিং বডির সদস্য তাজুল ইসলাম এবং তিন্না খুরশিদ জাহান মালা। গভর্নিং বডির কতিপয় সদস্য হুমকি দিয়েছেন এমন অভিযোগে তিন্না খুরশিদ জাহান মালা স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছেন। এই বছরই গভর্নিং বডি ৪৫০ শিক্ষার্থী অতিরিক্ত ভর্তি করেছে। কিছু তদ্বিরে, কিছু অনৈতিক সুবিধা নিয়ে। কার নির্দেশে এত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে তা নিয়ে একে অপরকে দায়ী করেছেন প্রাক্তন অধ্যক্ষ হাসিনা বেগম ও গভর্নিং বডির প্রাক্তন সদস্য গোলাম আশরাফ তালুকদার। হাসিনা বেগম বলেছেন, আমি কিছুই জানতাম না। গভর্নিং বডিই এই কাজ করেছে। অন্য দিকে, গোলাম আশরাফ তালুকদার বলেছেন, ভর্তি আমার অগোচরে হয়েছে। এই নিয়োগের অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করছে শিক্ষামন্ত্রণালয় ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘সহকারী শিক্ষক’ হয়েও অধ্যক্ষের পরিচয় দেওয়া ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। অভিযোগ, শিক্ষা অধিদপ্তরের খাতায় তার পদ সহকারী শিক্ষক। নবম গ্রেডে বেতনভুক্ত শিক্ষক তিনি। তবে তার এমপিও স্থগিত আছে। অধ্যক্ষ পদ ব্যবহার করে এই শিক্ষক প্রতিষ্ঠান থেকে ইতোমধ্যে ২০ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন বলে প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্র ঘষামাজা করে নম্বর দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণ পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগমকে কারণ দর্শাতে বলেছে মন্ত্রণালয়। এ কারণে অধ্যক্ষের বেতন-ভাতা কেন বন্ধ করা হবে না তার ব্যাখ্যা অধ্যক্ষের কাছে চাওয়া হয়েছে চিঠিতে। অভিভাবকদের অভিযোগ, ২০১৮ সালে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষার বিভিন্ন খাতায় আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম ও সহকারী প্রধান শিক্ষক আ. ছালাম খান, কর্মচারী আতিকসহ বেশ কয়েকজন মিলে ভর্তিচ্ছুদের খাতাগুলোর ওপর ঘষামাজা করেন। বিষয়টি প্রমাণও হয়েছে বিভিন্ন তদন্তে। এ পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়।