অনেক অর্থকষ্টের মধ্যেও হবিগঞ্জের বানিয়াচং সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ (গোল্ডেন) পেয়েছে নাহিদা আক্তার। পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি এবং অষ্টম শ্রেণিতে জিপিএ ৫ পায় সে।
নাহিদা জেলার বানিয়াচং গ্রামের লুৎফর রহমান ও সেহেনা বেগমের মেয়ে। চার ভাই-বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। বাবা পেশায় দিনমজুর। নাহিদা যখন নবম শ্রেণিতে তখন দারিদ্র্যের কারণে তার বাবার পক্ষে মেয়ের পড়াশোনা চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। এ সময় সুফিয়া মতিন মহিলা কলেজের প্রভাষক দেবু ভট্টাচার্য নাহিদার পাশে দাঁড়ান। নবম ও দশম শ্রেণির পড়াশোনার খরচ তিনি একাই বহন করেন। একই সঙ্গে নাহিদাকে তিনি প্রাইভেটও পড়ান।
এত অভাব-অনটনের মধ্যে বড় হয়ে এসএসসিতে ভালো ফল করেও মুখে হাসি ফোটেনি নাহিদার। কলেজে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার মতো অর্থ তার পরিবারের নেই। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে নাহিদার পরিবার।
অবশেষে মেধাবী নাহিদার মুখে হাসি ফোটাতে পাশে দাঁড়ানোর আগ্রহ দেখিয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল। তিনি বানিয়াচং আজমিরীগঞ্জ আসনের (হবিগঞ্জ-২) সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম অ্যাডভোকেট শরীফ উদ্দিন আহমেদের ছেলে। তাঁর বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত শরীফ উদ্দিন আহমেদ পাঠাগারের মাধ্যমে নাহিদার আগামী দুই বছরের লেখাপড়ার খরচ বহন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার পাঠাগারের সদস্যরা নাহিদার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি তাদের জানান।
ময়েজ উদ্দিন বলেন, ‘আমার বাবা বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মারা যাওয়ার পর আমরা অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। চিন্তায় পড়েছিলাম আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। আমার বয়স তখন ১২ কি ১৩। তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের খাওয়া-দাওয়াসহ লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তখন আমার মা মাঝে মধ্যে ঢাকায় গিয়ে এসব নিয়ে আসতেন। সুতরাং আমি অসহায়ের কষ্ট বুঝি। আমি চাই, টাকার অভাবে কোনো মেধাবীর যেন লেখাপড়া বন্ধ হয়ে না যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘নাহিদার বিষয়টি আমি অনলাইনসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখতে পাই। তখন চিন্তা করলাম, এই মেয়েটিকে নিয়ে কিছু করার। তার পাশে কীভাবে দাঁড়ানো যায় ভাবতে থাকলাম। তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম পাঠাগারের মাধ্যমে তাকে সাহায্য-সহযোগিতা করার। নাহিদার পড়াশোনার আগামী দুই বছরের যাবতীয় খরচ আমার পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত শরীফ উদ্দিন আহমেদ পাঠাগারের পক্ষ থেকে বহন করা হবে।’ তিনি জানিয়েছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই আর্থিক অনুদান তুলে দেওয়া হবে।
মেধাবী নাহিদা বলে, ‘আমি কলেজে ভর্তি হতে পারব কি না সেই চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছিল মাথায়। আশা তো ছেড়েই দিয়েছিলাম। ভেবেছি, আমার বুঝি আর পড়ালেখা করা হবে না। কিন্তু এখন খবরটি জানতে পেরে নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু হলো।’