নিজস্ব অর্থায়নে ৬ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক: |

এবার নিজস্ব অর্থায়নে কারিগরি শিক্ষা খাতের ছয় লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেয়া হবে। একই সঙ্গে বই কেনার অর্থও তারা পাবে। এতদিন এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক আর্থিক সহায়তা করে আসছিল। 

কিন্তু মেয়াদ বাড়াতে সংস্থাটি সম্মত না হওয়ায় সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এ প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংকের বাইরে অন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে বৈদেশিক সহায়তা অনুসন্ধানের তাগিদ দেয়া হয়েছে। খবর দৈনিক যুগান্তরের। 

পরিকল্পনা কমিশনে ‘কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা-প্রশিক্ষণ উপবৃত্তি’ নামে প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বছরের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এটি বাস্তবায়নে ৯৮৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয় হবে। এ প্রকল্পের আওতায় তিন হাজার ৬৪৪টি সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, এসএসসি ভকেশনাল ও দাখিল ভকেশনাল কোর্স পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা থাকবে।

অনুমোদন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ২১ মার্চ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় নতুন প্রকল্পটির জন্য বিশ্বব্যাংকের বাইরে অন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে বৈদেশিক সহায়তা অনুসন্ধানের তাগিদ দেয়া হয়েছে।

১৭ এপ্রিল পিইসি সভার কার্যবিবরণী জারি করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় এসএসসি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ৩০০ টাকা, ডিপ্লোমা বা এইচএসসি ভোকেশনাল শিক্ষার্থীদের ৫০০ টাকা করে সহায়তার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া মেয়েদের শতভাগ বৃত্তি এবং ছেলেদের ৭০ শতাংশকে উপবৃত্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রকল্পভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে আট হাজার ৮২৪টি বায়োমেট্রিক ডিভাইস স্থাপন করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিশ্বব্যাংকসহ অন্য ছয়টি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সমন্বয়ে কারিগরি শিক্ষায় বৃহত্তর একটি কর্মসূচি হাতে নেয়ার বিষয়ে নেগোশিয়েশন চলছে। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হলে অনেক শিক্ষার্থী উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হবে।

ডিসেম্বরে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তাই সরকারি অর্থায়নে সেটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের মেয়াদ না বাড়ানোর কারণ কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার সঠিক মানে নেই।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রসার ও মান উন্নয়নে কারিগরি এবং শিক্ষা অধিদফতরের আওতায় স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট (স্টেপ) নামের একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এতে বিশ্বব্যাংক অর্থ সহায়তা দিচ্ছে। প্রকল্পটির আওতায় নির্বাচিত ১৬২টি (সরকারি ৫৩, বেসরকারি ১০৯টি) প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ডিপ্লোমা, এসএসসি (ভোকেশনাল) এবং সংক্ষিপ্ত কোর্সের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে।

এ বছরের ডিসেম্বরে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। এর ধারাবাহিকতা রক্ষায় সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য নতুন প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু পিইসি সভায় জানতে চাওয়া হয়, স্টেপ প্রকল্পে বৈদেশিক সহায়তা থাকলেও একই ধরনের প্রস্তাবিত প্রকল্পে তা নেই কেন?

এ সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি জানান, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে বিশ্বব্যাংককে স্টেপ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু বিশ্বব্যাংক মেয়াদ বাড়াতে সম্মত হয়নি।

তবে এ প্রকল্পের বাইরে ছয়টি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সহায়তায় কারিগরি শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি কর্মসূচি প্রণয়নের বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। এ পর্যায়ে পিইসি সভায় প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের পাশাপাশি ইআরডির মাধ্যমে বৈদেশিক সহায়তা অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে স্টেপ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক জয়দেব চন্দ্র সাহা বলেন, এ প্রকল্পের একটি কম্পোনেন্টের আওতায় ইতিমধ্যেই দুই লাখ ৪০ হাজার শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেয়া হয়েছে। এছাড়া আরও ৫৫ হাজার শিক্ষার্থীকে দেয়া হবে। সব মিলিয়ে প্রায় তিন লাখ শিক্ষার্থী বৃত্তি কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে। তবে নতুন প্রস্তাবিত প্রকল্পে পুরনোরা যুক্ত হবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সেটি এখনও জানি না।

প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সরকার বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছে। পারিবারিক আর্থিক দুরবস্থার কারণে কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হলে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং এ শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়ন ঘটবে। এসব বিবেচনায় স্টেপ প্রকল্পের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ‘কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা-প্রশিক্ষণ উপবৃত্তি’ প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

পিইসি সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে কিনা তা সভায় জানতে চাওয়া হলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা-প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তির হার ১৫ শতাংশ।

২০২০ সালের মধ্যে সেটি ২০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে। এজন্য দেশের অন্যসব সাধারণ শিক্ষা স্তরের চলমান বৃত্তি কার্যক্রমের মতো কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে উপবৃত্তি কার্যক্রম চালু রাখা অত্যাবশ্যক। এ কারণে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে সভায় বলা হয়, ২৫ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে হলে নতুন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে সম্ভাব্যতা যাচাই আবশ্যক।

এ অবস্থায় কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের নেতৃত্বে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনের প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে।

এছাড়া প্রকল্পটির ব্যয় প্রায় এক হাজার কোটি টাকা হলেও কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের একজন পরিচালককে প্রকল্প পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বের প্রস্তাব এবং ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি জিপ কেনার প্রস্তাব করা হয়।

এ পরিপ্রেক্ষিতে সভায় বলা হয়, প্রকল্পটির জন্য একজন পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক এবং প্রকল্প পরিচালকের প্রাধিকারসাপেক্ষে অর্থ বিভাগের পরিপত্র অনুযায়ী গাড়ি ক্রয়ের সংস্থান রাখার বিষয়ে একমত পোষণ করা হয়। একই সঙ্গে গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ (পেট্রোল ও লুব্রিকেন্ট) বাবদ প্রস্তাবিত ৮০ লাখ টাকার পরিবর্তে ৪০ লাখ টাকা রাখার মত দেয়া হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা - dainik shiksha রোজায় স্কুল: শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম, নজরদারিও ঢিলেঢালা পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha পেনশন প্রজ্ঞাপনে উদ্বিগ্ন ঢাবি উপাচার্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুদান করমুক্ত ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ - dainik shiksha ব্রাজিলে তীব্র গরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের নামে প্রতারণা, সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ - dainik shiksha উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান পেলো ‘হেট’ আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ - dainik shiksha আটকের ১৩ দিন পরেও বরখাস্ত হননি অধ্যক্ষ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032899379730225