দ্বিতীয় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত তার রোল নম্বর ১। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে সে জিপিএ ৫ পায়। রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলা শহরের রতনদিয়া রজনীকান্ত উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষাতেও পেয়েছে জিপিএ ৫। অত্যন্ত মেধাবী এ ছাত্রের নাম নিলয় কুমার নন্দী। সে রতনদিয়া গ্রামের বাতাসা বিক্রেতা নবকুমার নন্দী ও মাধবী রানী নন্দীর ছেলে।
নিলয় জানায়, তার বাবা একজন অত্যন্ত দরিদ্র মানুষ। তিনি রতনদিয়া বাজারে বাতাসা ও চা-পান বিক্রি করেন। নুন আনতে পানতা ফুরায় অবস্থা তাদের। এ কারণে বাবার দোকানে বসা এবং চার-পাঁচটি প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করে আসছে নিলয়। এসএসসি পরীক্ষার মধ্যেও সে চারজনকে প্রাইভেট পড়িয়েছে। এর পরও সে এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করেছে। সে তার শিক্ষক ও মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জানায়, সবার সহযোগিতা ছাড়া এমন ফল করা সম্ভব নয়।
নিলয় বলে, তার বাবা দরিদ্র হলেও তিনি তিন ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার প্রতি যত্নশীল। সামর্থ্য না থাকলেও কখনো তাদের পড়াশোনায় বাধা হয়ে দাঁড়াননি তিনি। ফলে নিলয়ের বড় বোন নিশিতা নন্দী এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে এবং প্রথম শ্রেণিতে পড়ছে ছোট ভাই মৃন্ময় নন্দী। আর নিলয়ের মায়েরও ছেলে-মেয়ের পড়ালেখায় নেই আগ্রহের কমতি।
মা মাধবী রানী নন্দী জানান, নিলয় অত্যন্ত মেধাবী। ওর রোল নম্বর কখনো ২ হয়নি। অথচ ওকে তিনি দুই বেলা দুমুঠো ভালো খাবার খাওয়াতে পারেননি। দিতে পারেননি ভালো পোশাক। বই, কলম, খাতা সব কিছুই নিলয় প্রাইভেট পড়িয়ে টাকা রোজগার করে কিনেছে। উল্টো মাঝেমধ্যে সে পরিবারে টাকা দিয়েছে। তবে এখন নিলয় কলেজে উঠল। ওর ব্যয় আরো বেড়ে গেল। এখন কিভাবে সে কলেজে ভর্তি হবে এবং নিজের পড়াশোনা চালিয়ে নেবে, তাই ভাববার বিষয়।
নিলয়ের শিক্ষক নাজমুল হাসান মামুন জানান, বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র নিলয়। ওর মেধা ও অধ্যবসায় অতুলনীয়। এ জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তার প্রতি ছিলেন যত্নশীল। তাঁরা গর্বিত নিলয়কে নিয়ে। তবে কলেজে পড়া নিলয়ের জন্য কষ্টকর। বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা তাকে সহযোগিতা করেছে সার্বক্ষণিক। এখন কলেজে ভর্তি হওয়া ও বইপত্র কেনা তার জন্য খুব কঠিন হয়ে যাবে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী জানান, পরীক্ষার বোর্ড ফি ছাড়া কখনো কোনো অর্থ নিলয়ের কাছ থেকে তাঁরা নেননি। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও প্রায় বিনা মূল্যে নিলয়কে পড়িয়েছেন। এবার এসএসসি পরীক্ষায় তার বিদ্যালয় থেকে ২৭১ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে ২০০ জন পাস করেছে। নিলয়সহ তিনজন পেয়েছে জিপিএ ৫।