নিজের ভাষায় পড়তে চায় আদিবাসী শিশুরা

পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি: |

শিশুরা নিজের মায়ের ভাষায় সহজে পড়া বুঝতে ও শিখতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কিছু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য নিজের পাঠ্যবই থাকলেও আদিবাসী শিশুদের নেই নিজেদের ভাষার কোন পাঠ্য পুস্তক। এ কারণে আদিবাসী শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার শুরুতেই বোঝার মতো চেপে বসেছে বাংলা ভাষা। ফলে একদিকে এসব জনগোষ্ঠীর শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভ থেকে। আবার অন্যদিকে বাংলা ভাষার পড়া আয়ত্ত করতে প্রতিনিয়ত অনেকটা মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে এসব শিশুদের।

সম্প্রতি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার আদিবাসী শিশু শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হয়। ‘ইয়া আলিয়া ভাষাতে কাথা বকুরচা বানা’(এরা আমাদের ভাষা বলতে দেয় না) এভাবেই খুব সহজে নিজের সাঁওতালি ভাষায় কথাগুলো বলছিল উপজেলার হঠাৎপাড়া গ্রামের ৩য় শ্রেণি পড়ুয়া সুজন টুডু। সে জানায় ,‘স্কুলে বাংলা ভাষায় তাকে কথা বলতে শিক্ষকরা বাধ্য করায়। নিজেদের সাঁওতালি ভাষায় কথা বলতে দেয় না।’

কথা হয় একই গ্রামের ২য় শ্রেণি পড়ুয়া উমিত হাজদা নামে আরেক আদিবাসী শিশুর সাথে। দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় সে। ছোট ভাই প্রাক্ প্রাথমিকে পড়ছে। ও বলে, ‘হামিই তো ইস্কুলে ভালা করে বাংলা পড়িতে পারি না। হামার ছোটা ভাই জিৎ হাজদা আমার কাছে বাংলা পড়া শিখাই নিতে চাইলে আমি শিখাই দিতে পারি না।’

দস্তমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণি পড়ুয়া প্রতিমা হাজদা নামে আরেকজন আদিবাসী শিক্ষার্থী জানায়,‘যখন নতুন ছিলাম তখন খুব কষ্ট হতো। এখন মোটামোটি পড়তে পারি।’

শেমলী মাট্টী নামে আরেক শিক্ষার্থী বলে, ‘যদি আমাদের নিজেদের সাঁওতালি ভাষায় পড়ানো হতো। তাহলে কষ্ট হতো না।’ কারিতাস নামে একটি বেসরকারি সংস্থার স্কুলে কথা হয় মিনতি হাসজা নামে এক আদিবাসী শিক্ষিকার সাথে। তিনি বলেন,‘প্রথম প্রথম একটু বাংলা পড়া বুঝতে আদিবাসী শিশুদের সমস্যা হয়। পরে আসতে আসতে বাংলা ভালোভাবে বলতে পারে।’ তবে যদি আদিবাসী শিশুরা তাদের নিজেদের ভাষায় পড়ালেখা শিখতে পারতো তবে সেটা আরো সহজ ও ভালো হতো বলে জানায় এই শিক্ষিকা।

বড়বাড়ি গ্রামের শিউলি কিসকু নামে এক অভিভাবক দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, ‘বিদ্যালয়গুলোতে আমাদের সাঁওতালি ভাষায় লেখাপড়া করাইলে ছেলে-মেয়েরা এই ভাষা সম্পর্কে ভালো করে জানতো।’

‘২০১৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে আদিবাসী শিশুদের জন্য তাদের ভাষায় পাঠ্যপুস্তক সরবাহ করার লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের তালিকা করে পাঠানোর কথা জানালেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম। তিনি দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন,এটা অবশ্যই ভালো হবে। আদিবাসী শিশুরা যেমন তাদের ভাষায় শিক্ষা লাভ করতে পারবে তেমনি তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি বিলুপ্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.017529964447021