সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের চিন্তামনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবন ৩ বছরের মধ্যে ছাদের একাধিক স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। একটু বৃষ্টি হলে ভবনের বিভিন্ন কক্ষে অঝোর ধারায় গড়িয়ে পড়ে পানি। এ রকম অবস্থার কারণে যেকোনো সময় দৃষ্টিনন্দন স্কুল বিল্ডিং কাম সাইক্লোন শেল্টারটি পরিত্যক্ত হয়ে দুর্ঘটনার আশংকা করছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ এলাকাবাসী।
উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের চিন্তামনি গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের শিক্ষার উন্নয়নে ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে স্থাপিত হয় চিন্তামনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ইউএসএআইডির অর্থায়নে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে শতবর্ষী চিন্তামনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন কাম সাইক্লোন শেল্টার ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে নির্মাণ কাজ শুরু করে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সিনাম ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে কাজ সমাপ্ত করে একই বছরের আগস্ট মাসে বিদ্যারয় কর্তৃপক্ষের নিকট ভবন হস্তান্তর করে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সিনাম।
আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্ভলিত ও দৃষ্টিনন্দন ভবেন ৩টি ক্লাস রুম, ১টি অফিস রুম ১টি স্টোর রুম, ৩টি অত্যাধুনিক ফিটিং সংবলিত ওয়াশ রুম, ২টি গভীর নলকুপ, বড় বড় ৫টি প্যানেল দিয়ে স্যোলার সিস্টেম বিদ্যুৎ সুবিধা, সাধারণ বিদ্যুৎ সুবিধা সহ ৩ হাজার বর্গ ফুটের বিল্ডিনং কাম সাইক্লোন শেল্টারে পুরো নিচ তলা ফাকা রাখা হয় সভা সমাবেশ সহ সাইক্লোন দুর্যোগ আক্রান্ত মানুষের গবাদি পশু সহ বিভিন্ন জিনিস আশ্রয় নেয়ার জন্য রাখা হয়।
সম্প্রতি বৃষ্টির সময় সরজমিন চিন্তামনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন কাম সাইক্লোন শেল্টারে গিয়ে দেখা যায়, বিল্ডিংয়ের উত্তর পাশের পঞ্চম শ্রেণি, দক্ষিণ পাশের তৃতীয় শ্রেণির ছাদের একাধিক স্থানের ফাটল দিয়ে বৃষ্টির মতো পানি পরছে। পানি পরার কারণে শিক্ষার্থীরা ক্লাশ করতে পারছে না।
এ ছাড়াও অফিস রুম, চতুর্থ শ্রেণি কক্ষের ছাদ বৃষ্টির কালে সব সময় ভেজা থাকে। ছাদের একাধিক স্থানে পানিতে ভিজে স্যাঁতসেঁতে হয়ে ছাদের কার্যকারি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থা বিরাজ করলে যেকোনো সময় ছাদ ধসে পড়ারও আশংকা করছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী ও পরিচালনা কমিটির দায়িত্বশীলসহ এলাকাবাসি।এ সময় বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের নিকট থেকে জানানা যায়, নির্মাণকারী প্রষ্ঠিান সিনাম ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের নিকট থেকে ভবন সমজিয়ে নেয়ার পর থেকে ৪ বার ঠিকাদারি সংস্থা ভবনের ফাটলকৃত ছাদের বিভিন্ন অংশ সংস্কার করার পরও ফাটল দিয়ে পানি পরা বন্ধ হচ্ছে না বর্তমানে পূর্বের চেয়ে আরো বেশি পানি পরছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, বৃষ্টির দিনে ছাদের ফাটল দিয়ে পানি পরার কারণে ক্লাশ করা যায় না। এ সময় খুব ভয় করে লাগে যদি ছাদ ডেম্প হয়ে কোনো দিন আমাদরে উপরে ভেড়ে পরে যায় এই আশংকায়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রনজিৎ কুমার দে বলেন, আমার বিদ্যারয়ের তৃতীয়, পঞ্চম শ্রেণি, অফিস রুম সহ প্রায় পুরো বিদ্যালয়েই ছাদ দিয়ে বৃষ্টির পানি পরে। এতে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। বিশেষ করে তৃতীয় শ্রেণিতে বেশী পানি পরে এ বিষয়ে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ভবন পরিত্যক্ত হয়ে যেতে পারে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপিত শাহ জামাল আহমদ বলেন, ঠিকাদরী সংস্থা সিনাম ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের নিকট থেকে ভবন সমজিয়ে পাবার পর থেকেই ছাদের বিভিন্ন অংশে ফাটল সৃষ্টির পর থেকেই পানি পরছে। এর মধ্যে ৪ বার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ছাদের ফাটল অংশ সংস্কার করলেও পানি পরা বন্ধ হচ্ছে না। মূলত নির্মাণ কাজে ত্রুটি থাকার কারণে এমন সমস্যা হচ্ছে বলে আমার ধারণা। এভাবে চরতে থাকলে যেকোনো সময় ছাদ ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আমি আশংকা করছি।
ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্টান সিনাম ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের প্লানিং ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল্লাহ আল মামুন বিদ্যালয়ের ফাঁদে ফাটল ধরার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, নির্মাণ ত্রুটির কারণে ছাদে ফাটল ধরেনি। বিল্ডিংয়ের ছাদ ঢালাইয়ের দিনে বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার কারণে কারণে ছাদে ইন্টারনাল ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয়ে ছাদে সংস্কার কাজ করেছি। আবারো সংস্কার করব তবে এ সমস্যার কারণে ছাদ ডেমেজ হবার কোনো আশংকা নেই।