বিসিএস পরীক্ষাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, ব্যাংক ও সরকারি চাকরির নিয়োগে ডিজিটাল জালিয়াতির অভিযোগে সরকারি কর্মকর্তাসহ ৯ জনকে আটক করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। বুধবার (৮ আগস্ট) দিনগত রাতে রাজধানীতে পৃথক অভিযানে তাদের গ্রেফতার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির কারণে এযাবতকালের সর্ববৃহৎ চক্রকে আটক করা হয়েছে। আটকদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তাও রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (০৯ আগস্ট) দুপুরে সিআইডি সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি'র অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মোল্যা নজরুল ইসলাম এই তথ্য জানান।
মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল চক্রটির মূল উৎপাটন করা। সর্বশেষ অভিযানে ৯ জনকে আটকের মধ্য দিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মূলোৎপাটন করা হয়েছে। এই নয়জন হলো—মাস্টারমাইন্ড বিকেএসপি'র সহকারী পরিচালক অলিপ কুমার বিশ্বাস, বিএডিসি'র সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল, ৩৬ তম বিসিএসে নন ক্যাডার পদে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত ইব্রাহিম ও ৩৮তম বিসিএসের প্রিলিতে উত্তীর্ণ আইয়ূব আলী বাঁধন, রাজধানীর অগ্রণী স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক গোলাম মোহাম্মদ বাবুল, পিওন আনোয়ার হোসেন মজুমদার, নুরুল ইসলাম, ধানমন্ডি গভ. বয়েজ স্কুলের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক হোসনে আরা বেগম ও পিওন হাসমত আলী শিকদার।
সংবাদ সম্মেলনে মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, তিনি বলেন, ‘আটক অলিপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ডিজিটাল জালিয়াতির মাস্টারমাইন্ড। সে কয়েক বছরে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি করে তিন কোটি টাকা আয় করেছে। তার সহযোগী ইব্রাহিম, মোস্তফা ও বাঁধন বিসিএসসহ সব নিয়োগ পরীক্ষার মূলহোতা হিসেবে কাজ করতো। তাদের চারজনের বিরুদ্ধে নগদ অর্থ প্রায় ১০ কোটি টাকার নগদ অর্থ ও অনেক সম্পদ থাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। আমরা সেগুলো তদন্ত করে দেখছি।’
সিআইডি'র এই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অলিপ, ইব্রাহিম, বাঁধন ও মোস্তফা জানায়, কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন ফাঁসের পর আলিয়া মাদ্রাসা ও ঢাবির এফ রহমান হলের দু’টি কক্ষে বসে অভিজ্ঞদের দিয়ে সমাধান করে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে তারা পরীক্ষার্থীদের সরবরাহ করতো।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, ইব্রাহিম বিলাসী জীবনযাপন করতো। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হলেও খুলনায় তার একটি চারতলা বাড়ি ও নড়াইলে ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে। রাজধানীতে রূপালী মানি এক্সচেঞ্জ নামে তার একটি অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। সে মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের ছিল। তবে তার যোগ্যতা না থাকলেও জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৬ তম বিসিএসে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয় সে।’
মোল্যা নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘গত কয়েক বছরে জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও সরকারি চাকরিতে শতাধিক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছে চক্রটি। জালিয়াতির মাধ্যমে যারা নিয়োগ পেয়েছে, তাদের বেশ কয়েকজনের তথ্যও আমরা পেয়েছি। এসব তথ্য আমরণ যাচাই-বাছাই করছি। যাচাই-বাছাই শেষে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এর আগে, গত বছরের ১৯ অক্টোবর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’টি হলে অভিযান চালানো হয়। এরপর বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে নাটোরের ক্রীড়া কর্মকর্তা রাকিবুল হাসানসহ এ পর্যন্ত ৩৭ জনকে আটককরে সিআইডি। বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্নফাঁসচক্রের মূলহোতারা ধরা পড়লেও ডিভাইসের মাধ্যমে ডিজিটাল জালিয়াতির হোতারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ছিল।