স্কুল যেতে ২০ মিনিটের রাস্তা শেষ হয় না দুই ঘন্টায়ও!

মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) |

মাত্র ২০ মিনিটের রাস্তা এখন দুই ঘন্টায়ও শেষ হয় না। স্কুল, বাজার, কিংবা বেড়ানো, যেখানেই যেতে হয় পায়ের জুতা হাতে করেই গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। সড়কের বেহাল দশার কারণে শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী কিংবা মুসুল্লিরা নির্দিষ্ট সময়ে নিজ নিজ গন্তব্যে উপস্থিত হতে পারছেন না। দিনের আলোতে কোনরকম ঝুঁকি নিয়ে চললেও প্রতিরাতেই গ্রামবাসীরা দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের লস্করপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন প্রধান এই সড়কটির দুই কিলোমিটার রাস্তা যেন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, লস্করপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দুটি ইটভাটা নির্মিত হয়েছে। লস্করপুর বেড়িবাঁধে এখনও ইট, কংকিটের প্রলেপ না পড়ায় দুটি ইটভাটার ইট পরিবহনে নিয়োজিত ট্রলি, ট্রাক, টমটম চলাচলের কারণে গোটা বেড়িবাঁধটি এখন চাষের জমিতে পরিণত হয়েছে। বাঁধের ওপর দেড়-আড়াই ফুট তিন সারি গর্ত। বর্ষায় ওই গর্তে পানি জমে এখন পায়ে হাটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ কারণে গোটা বাঁধটিই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা।

ফাইল ছবি

লস্করপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬৩ জন শিক্ষার্থী থাকলেও বুধবার (৪ জুলাই) স্কুলে উপস্থিত পাওয়া গেছে ৯১ জনকে। নীলগঞ্জ ইউনিয়নের লস্করপুর, হলদিবাড়িয়া, মোহনপুর, তাহেরপুর ও লস্করপুর গ্রামের শিক্ষার্থীরা এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কিন্তু স্কুলে আসার একমাত্র সড়কের দূরবস্থার কারণে এই বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে বলে জানালেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

স্কুল ছাত্র তরিকুল জানায়, ‘রোজই তো আমরা কাঁদা দিয়াই হাডি। অনেকবার বই খাতা লইয়া পইড়্যা গেছি। স্কুল ছুটির পর বেশি পোলাপান একলগে চলে। তহন বেশি পড়ে।’

কাঁধে স্কুল ব্যাগ, হাতে জুতা, ছাতি নিয়ে স্কুলে আসছিলো তানভীর, কামাল, তোফাজ্জেল, সাদিয়া, রাসেল, বেল্লাল ও মুজাহিদ এরা সবাই লস্করপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তারা জানায়, আগে স্কুলে আইতে ২০ মিনিটও লাগতো না, এ্যাহন দুই ঘন্টায়ও আইতে পারি না। তাঁদের ভাষায় স্কুলে আইতে যাইতে রাস্তায়ই আমাগো চাইর ঘন্টা (চার ঘন্টা) লাগে। আমরা পড়মু কখন আর খেলমু কখন।


লস্করপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি নিজাম সিকদার জানান, দুটি ইট ভাটার কারণে এখন চার গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাচ্ছে। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি কমে গেছে। এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে কিংবা কেউ অসুস্থ্ হলে তাকে কোলে করে দুই কিলোমিটার কর্দমাক্ত রাস্তা পার হয়ে হাসপাতালে নিতে হয়। রাস্তার দূরবস্থার কারণে কোন যানবাহন এখানে চলাচল করতে পারছে
না।

স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান, শুধু এই সড়কের কারণে সন্ধার আগেই ঘরে ফিরতে হয়। ইটভাটা মালিকদের খামখেয়ালিপনার কারণে আজ চার গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে। কিন্তু দেখার কেউ নেই। লস্করপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক তহমিনা রুবী জানান, আগে যেখানে স্কুলে উপস্থিতি ছিল ৮৫-৯০ ভাগ। এখন শিক্ষার্থীদের গড় উপস্থিতি ৫০-৬০ ভাগ। এই লস্করপুর বেড়িবাঁধ দিয়ে বয়স্ক মানুষকেই চলাচল করতে সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে হয়, সেখানে ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে কিভাবে চলাচল করবে। অনেক অভিভাবক রাস্তা ভালো না হওয়ার কারণে সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে পারছে না।

নীলগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির মাহমুদ জানান, ইটভাটার যানবাহনের কারণে এখন লস্করপুর বাঁধটিই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এর আগে দুই কিলোমিটার ইটের রাস্তা করা হলেও তাও ভেঙে একাকার। একই অবস্থা উমেদপুর-লস্করপুর দেড় কিলোমিটার সড়ক। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে বলে তিঁনি জানান।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054218769073486