নীতিমালায় গলদ, ফের যাচাইতে এমপিওভুক্তির তালিকা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

আবার যাচাই-বাছাই হচ্ছে এমপিওভুক্তির জন্য তৈরি করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা। তবে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এরই মধ্যে তালিকায় রাখা হয়েছে, তাদের মধ্য থেকেই ওই যাচাই-বাছাই হচ্ছে। নতুন করে কোনো প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ঢোকার সুযোগ নেই। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে জারি করা এমপিও নীতিমালায় (সংশোধিত) নানা ত্রুটি থাকায় তা সংশোধন করার কাজও শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নীতিমালার এসব গলদকে ‘করণিক’ ভুল হিসেবে দেখছে। 

 ন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র দৈনিক শিক্ষাকে জানায়, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী প্রায় দুই হাজার ৭০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির তালিকায় রাখা হয়েছিল। এসবের মধ্যে প্রায় ৫০০ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এক হাজারের মতো মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৬০টির বেশি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শতাধিক উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ, অর্ধশতাধিক ডিগ্রি ও অনার্স-মাস্টার্স কলেজ, ৫১২টি বিভিন্ন পর্যায়ের মাদরাসা এবং ৪৮৬টি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত মাসের মাঝামাঝি ওই সব প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সেই তালিকা ফেরত আসে।

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ‘তালিকা অধিকতর যাচাই-বাছাই চলছে। তবে যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম তালিকায় এসেছে, তার মধ্য থেকেই যাচাই-বাছাই চলছে। ভুলগুলো খুবই সামান্য। যেমন কোনও প্রতিষ্ঠানের নামের ইংরেজি ও বাংলায় গরমিল। আবার নতুন-পুরনো নীতিমালায় সামান্য হেরফের, তবে যেদিনই এমপিওভুক্তির যোগ্য প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা হোক না কেন, পহেলা জুলাই থেকেই তা কার্যকর হবে।’

অপর একটি সূত্রে জানা যায়, এমপিওভুক্তি চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের করার আগে তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি অথবা পরিচালনা কমিটির ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় খোঁজ নেওয়া হবে। কারণ অনেক যোগ্য প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের দখলে থাকার অভিযোগ আছে। আবার শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ঘাপটি মেরে আছে জমাতপন্থী কর্মকর্তারা।   

জানা যায়, এমপিও নীতিমালায় একটি প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তি পেতে প্রধান চারটি শর্ত রাখা হয়েছে। সেখানে প্রতিষ্ঠানের বয়স ২৫, শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫, পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫ এবং পাসের হারে ২৫ নম্বর করে মোট ১০০ নম্বরের গ্রেডিং করা হয়।

নীতিমালায় ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত নিম্ন মাধ্যমিক, নবম থেকে দশম পর্যন্ত মাধ্যমিক, একাদশ-দ্বাদশ উচ্চ মাধ্যমিক এবং এরপর ডিগ্রি ও অনার্স-মাস্টার্সসহ মোট চারটি স্তরের তথ্য চাওয়া হয়েছে। প্রতিটি স্তরে ন্যূনতম শিক্ষার্থীর সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে এবং পাসের হারের ওপর নম্বর রয়েছে। তবে কত শতাংশ পরীক্ষার্থীর অংশগ্রহণ করতে হবে, তা সব স্তরে নির্ধারণ না করায় নীতিমালায় অসংগতি রয়ে গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এমনকি কলা, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান বিভাগেও ন্যূনতম পরীক্ষার্থী নির্ধারণ করা নেই। এটিকেও নীতিমালার বড় অসংগতি বলে মনে করছেন তাঁরা।

কর্মকর্তাদের মতে, একটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী দেখানো সম্ভব, আবার স্বল্প শিক্ষার্থী থাকায় ভালো ফল করলে যথাযথ পাসের হার দেখানোও সম্ভব। কিন্তু কত পরীক্ষার্থীর অংশগ্রহণ করতে হবে সেই বাধ্যবাধকতা থাকলে এখন তালিকায় স্থান পাওয়া অনেক প্রতিষ্ঠানই ঝরে যাবে। এ ছাড়া মাধ্যমিক স্তর বলতে সাধারণত ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি বোঝানো হয়। কিন্তু এর মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক স্তরও রয়েছে। এখন মাধ্যমিক পর্যায়ের একটি স্কুল এমপিওভুক্ত হতে হলে তাকে নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক দুই স্তরের মানদণ্ডই অর্জন করতে হবে নাকি শুধু মাধ্যমিক স্তরের মানদণ্ড অর্জন করতে হবে, তা নীতিমালায় বলা নেই।

এ ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানের একাদশ-দ্বাদশ যদি এমপিওভুক্তির যোগ্যতা অর্জন করতে না পারে, তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রি অথবা অনার্স-মাস্টার্স স্তর কিভাবে এমপিওভুক্তির যোগ্যতা অর্জন করবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। দেখা গেল, একটি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে এমপিওভুক্তির প্রয়োজনীয় যোগ্যতা নেই; কিন্তু ডিগ্রি স্তরে আছে। তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানের কী হবে, তা নীতিমালায় বলা নেই। এ ধরনের নানা অসংগতি ধরা পড়েছে নীতিমালায়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এরইর মধ্যে নীতিমালার ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধনের কাজ শুরু হয়েছে। এরপর সংশোধিত নীতিমালার সঙ্গে মিলিয়ে যোগ্য প্রতিষ্ঠানের তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। তবে এরই মধ্যে তালিকায় থাকা বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের তথ্যে অসংগতি ধরা পড়েছে। তালিকা চূড়ান্ত করার পরও আরো অসংগতি থেকে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই নীতিমালায় আরো কিছু বিষয় যোগ করার চিন্তা করছে মন্ত্রণালয়। এমপিও দেওয়ার পরও যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের ভুল তথ্য দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিলের ক্ষমতা রাখবে মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া কয়েকটি উপজেলায় এমপিওভুক্তির যোগ্য কোনো প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়নি। এখন সেসব এলাকার ভৌগোলিক অবস্থা বিবেচনা করে কম শিক্ষার্থী থাকার পরও কিভাবে এমপিওভুক্তি দেওয়া যায়, সেই বিষয়টিও নীতিমালায় রাখার চিন্তা চলছে।

জানা যায়, ২০১০ খ্রিষ্টোব্দে সর্বশেষ এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করেছিল সরকার। এরপর শিক্ষকরা আন্দোলন করলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, বাজেটে অর্থ বরাদ্দ না থাকায় এমপিওভুক্তি সম্ভব হচ্ছে না। তবে শিক্ষকদের কঠোর আন্দোলনের মুখে এমপিও নীতিমালা ২০১৮ করা হয়। গত বছরের ৫ থেকে ২০ আগস্ট বেসরকারি স্কুল ও কলেজের কাছ থেকে অনলাইনে এমপিওভুক্তির আবেদন নেওয়া হয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0055618286132812