যৌন নিপীড়নকে 'নারীর নিয়তি' হিসেবে মেনে নিয়ে মুখ বুজে বাঁচতে চাননি নুসরাত জাহান রাফি। মাদরাসাছাত্রী হয়েও রক্ষণশীলতার দোহাই দিয়ে আড়াল করেননি নিজেকে। বরং মাদরাসা অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে তার বিচারের দাবিতে মামলাও করেছেন। ক্রমাগত হুমকি ও সামাজিকভাবে হেনস্থার ভয়ে চুপ না থেকে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে লড়াই করে বাঁচতে চেয়েছেন। লড়াইটা যে সহজ হবে না- সে কথাও জানা ছিল তার। তাই মানসিকভাবেও ছিলেন দৃঢ় প্রত্যয়ী। আগুনে ঝলসে যাওয়ার আগে দুই সহপাঠীকে লেখা এক চিঠিতে রাফি নিজের অবস্থান তুলে ধরে বলেছিলেন, 'আমি লড়ব শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। তাকে (সিরাজ) এমন শাস্তি দেব যে, তাকে দেখে অন্যরা শিক্ষা নেবে।'
আগুনে শরীরের ৭৫ শতাংশ ঝলসে যাওয়ার পরও রাফির মনোবল ছিল অটুট। গত সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। এর আগে মা ও ভাইয়ের সঙ্গে শেষ কথা হয়। সমকালের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেয়া হয়েছে। রিপোর্টটি লিখেছেন আতাউর রহমান।
তাদের কাছে বেঁচে থাকার আকুতি জানিয়ে রাফি বলেছিলেন, তার যা হয় হোক- দোষীরা যেন কোনোভাবেই ছাড় না পায়।
মঙ্গলবার রাতে রাফির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার পড়ার টেবিলের খাতা-বইয়ের মধ্য থেকে একটি চিঠি উদ্ধার করে সোনাগাজী থানা পুলিশ। তামান্না ও সাথী নামে দুই সহপাঠীর উদ্দেশে ক্লাস খাতার দুই পাতায় লেখা ওই চিঠিতে তারিখ উল্লেখ নেই। পুলিশের ধারণা, ২৭ মার্চ মাদরাসা অধ্যক্ষের কাছে শ্লীলতাহানির পর চিঠিটি লিখেছেন রাফি। কেন চিঠি পাঠানো হয়নি তা জানা যায়নি। চিঠিতে রাফি নিজের অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি অধ্যক্ষ সিরাজের কাছে যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার ঘটনাও তুলে ধরেছেন। চিঠিতে রাফি লিখেছেন, 'তামান্না ও সাথী। তোরা আমার বোনের মতো এবং বোনই। ওইদিন তোরা আমাকে বলেছিলি, আমি নাকি নাটক করছি। তোরা সিরাজ-উদ-দৌলার সম্পর্কে সব জানার পরও কীভাবে তার মুক্তি চেয়েছিস? আমি লড়ব শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। তাকে এমন শাস্তি দেব যে, তাকে দেখে অন্যরা শিক্ষা নেবে।' রাফি আরও লেখেন, 'তোরা সিরাজ-উদ-দৌলা সম্পর্কে সব জানার পরও কীভাবে তার মুক্তি চাইতেছিস, তোরা জানিস না ঐদিন ক্লাসে কি হইছে, উনি আমার কোন জায়গায় হাত দিয়েছে এবং আর কোন জায়গায় হাত দেওয়ার চেষ্টা করছে। উনি আমাকে বলছে, রাফি ঢং করিও না। তুই প্রেম করিস না, ছেলেদের সাথে প্রেম করতে ভালো লাগে? ওরা তোরে কি দিতে পারবে, আমি তোকে পরীক্ষার সময় প্রশ্ন দেব।'
সোনাগাজী থানার ওসি (তদন্ত) কামাল হোসেন বলেন, তদন্ত করতে গিয়ে রাফির পড়ার টেবিলের বই-খাতা নাড়াচাড়ার সময় একটি খাতার ভেতর ওই চিঠি পাওয়া গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে পাতাসহ খাতাটি আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। রাফি হত্যাচেষ্টা মামলায় এই চিঠি ডকুমেন্ট হিসেবে কাজে লাগবে। ওই খাতার ভেতরে আরও একটি লেখা পাওয়া গেছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।