প্রতিবাদী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার আসামিদের মধ্যে তিনজনকে পাঁচ দিন করে এবং আরো দুজনকে দুই দিন করে রিমান্ড দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন সময় টিভির ফেনী ব্যুরোর প্রতিবেদক আতিয়ার সজল।
গতকাল ফেনী মডেল থানায় এই সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এর আগে (প্রত্যাহার হওয়ার পাঁচ দিন পর) গত ১৪ এপ্রিল সোনাগাজী থানায় সজলকে জড়িয়ে একটি জিডি করেছিলেন সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম। বিষয়টি এত দিন গোপন থাকলেও গত বুধবার রাতে প্রকাশ্যে আসে। বিষয়টি জানার পর গতকাল দুপুর ১২টার দিকে সজল পাল্টা জিডি করেন মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে।
সাংবাদিক সজলের করা সাধারণ ডায়েরিতে বলা হয়, “সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন ওই থানা থেকে প্রত্যাহার হওয়ার পর একই থানায় গত ১৪ এপ্রিল তারিখে একটি সাধারণ ডায়েরি (নং-৫৬৭/ ১৯) করেন। তাতে বলা হয়, তাঁর (ওসির) ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনসেট স্যামসাং গ্যালাক্সি এএইট প্লাস থেকে গত ০৮/০৪/১৯ ইং তারিখে ‘শেয়ার ইট’ অ্যাপের মাধ্যমে গত ২৭ মার্চ তারিখে তাঁর রেকর্ড করা নুসরাত জাহান রাফির দুটি জবানবন্দির ভিডিও জনৈক সজল ট্রান্সফার করে নিয়ে যায়।
ওসির জিডিতে বলা হয়, গত ৬ এপ্রিল নুসরাতের শরীরে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটলে সাংবাদিকসহ অনেকেই থানায় যায়। ওই সময় ওসি তাঁর মোবাইল ফোনসেট অফিসের টেবিলে রেখে বাইরে ওয়াশরুমে অথবা নামাজ আদায় করতে যান। এই সুযোগে দুটি ভিডিও চুরি করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।”
সাংবাদিক আতিয়ার সজল বলেন, ‘ওসির মোবাইল ফোনসেট থেকে চুরি করে ভিডিও সংগ্রহ করা এবং তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো’র কথা একেবারেই ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ওসি নিজেই ওই ভিডিও ধারণ করেন এবং তা বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীদের সরবরাহ করেন। তিনি তা প্রচারেরও অনুরোধ জানান।
তিনি নিজেই এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ান। এর মাধ্যমে নুসরাত হত্যার বিষয়টিকে আত্মহত্যা বলে প্রচারের একটা চেষ্টা শুরু থেকে বিদ্যমান ছিল। কারণ নুসরাত ওই জবানবন্দিতে বলেছিল, যৌন পীড়নকারী অধ্যক্ষের বিচার না হলে আমি নিজের প্রাণ দিয়ে দেব।’
গতকাল সাংবাদিক সজলের জিডি দায়েরের সময় মডেল থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ ছাড়াও ছিলেন ফেনী প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি নুরুল করিম মজুমদার, সাবেক সভাপতি ও সময় টিভির ফেনী ব্যুরোপ্রধান বখতেয়ার মুননা সহ স্থানীয় সাংবাদিকরা।
এর আগে সোনাগাজী থানা থেকে প্রত্যাহার হওয়ার কয়েক দিন পর গত ১৪ এপ্রিলে করা সাধারণ ডায়েরিতে ওসি মোয়াজ্জেম স্বীকার করেন যে ২৭ মার্চ তিনি নুসরাতের জবানবন্দিটি থানায় বসে ভিডিওতে ধারণ করেছিলেন।
প্রসঙ্গত, এই ভিডিও ধারণ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানোর দায়ে পরবর্তী সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়। এ পর্যন্ত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনস ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) তাঁকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে। সম্প্রতি নুসরাত হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এস এম রুহুল আমিনের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটিও ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশ করে।
পাঁচ আসামির রিমান্ড
সোনাগাজীর আলোচিত মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলার আসামিদের মধ্যে তিনজনকে পাঁচ দিন করে এবং আরো দুজনকে দুই দিন করে রিমান্ড দেওয়া হয়েছে।