ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির হত্যা মামলায় তার দুই বান্ধবী ও মাদরাসা পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিবের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার এই সাক্ষ্য দানকালে নুসরাতের দুই বান্ধবী সাথী ও তামান্না আদালতে তার হাতে লেখা একটি চিঠির বিষয়বস্তু তুলে ধরেন।
চিঠিতে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা কীভাবে তার শ্লীলতাহানি করেছে, তার বর্ণনা ও বিচার দাবি করা হয়েছে। ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ চিঠির বিষয়বস্তু সাক্ষ্য হিসেবে লিপিবদ্ধ করেছেন। আদালত সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ বুধবার ধার্য করে আরও চার সাক্ষীকে আদালতে হাজির রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
সাক্ষ্য গ্রহণকালে সিরাজ-উদ-দৌলাসহ ১৬ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। নুসরাতের বান্ধবী তানজিনা বেগম সাথী ও বিবি জাহেদা তামান্না আদালতে জানান, অধ্যক্ষের হাতে শ্লীলতাহানির শিকার হওয়ার পর নুসরাত সাথী ও তামান্নাকে উদ্দেশ করে নিজ হাতে একটি চিঠি লেখেন। কিন্তু চিঠিটি তাদের হাতে পৌঁছার আগেই ৬ এপ্রিল নুসরাতের গায়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার ষড়যন্ত্র হয়। নুসরাতের এ চিঠি তার খাতা থেকে উদ্ধার করে ফেসবুকে পোস্ট করে দেওয়া হয়।
তামান্না ও সাথী জানান, চিঠিতে নুসরাত লিখেছেন, অধ্যক্ষ তাকে পিয়নের মাধ্যমে ডেকে নিয়ে বলে, তুই অন্য ছেলেদের সঙ্গে প্রেম করবি কেন? তারা তোকে কী দেয়। আমি তোকে সব দিতে পারি, প্রশ্ন দিতে পারি। তুই শুধু আমাকে তোর দেহ দিবি। বলতে বলতেই সিরাজ তার গায়ে হাত দেয়।
এর আগে আদালত সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব মো. নুরুল আফসার ফারুকীর জবানবন্দি নেন। ফারুকী জানান, ৬ এপ্রিল সকাল পৌনে ১০টার দিকে তিনি পরীক্ষার প্রশ্ন কেন্দ্রওয়ারি ভাগ করছিলেন। এ সময় শোরগোল শুনে বাইরে এসে একটি মেয়ের শরীরে দুর্বৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বলে জানতে পারেন। পরে তিনি জানতে পারেন, অগ্নিদগ্ধ নুসরাত আলিম পরীক্ষার্থী। এ সময় পিপি হাফেজ আহাম্মদ আদালতে আলামত হিসেবে জব্দ করা দিয়াশলাই কাঠি, পুড়ে যাওয়া বোরকার অংশ আদালতে উপস্থাপন করেন। কেন্দ্র সচিব এসব আলামত তার সামনে পুলিশ জব্দ করেছে ও তাতে তার স্বাক্ষর নিয়েছে বলে আদালতে স্বীকার করেন।
সাক্ষ্য শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী কামরুল হাসান, গিয়াস উদ্দিন নান্নু, আহসান কবির বেঙ্গল, ফরিদ উদ্দিন নয়ন, মাহফুজুল হক ও সিরাজুল ইসলাম মিন্টু ১৬ আসামির পক্ষে সাক্ষীদের জেরা করেন।
পিপি হাফেজ আহাম্মদ ও বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু জানান, বুধবার মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করে সাক্ষী খুজিন্তা খানম, বেবী রানী দাস, আকলিমা আক্তার ও মো. কায়ছার মাহমুদকে সাক্ষ্য দিতে উপস্থিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নুসরাত হত্যার ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১৬ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পিবিআই। এরপর ২০ জুন থেকে লাগাতারভাবে আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। এ পর্যন্ত ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ২১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।