ফেনীর আলোচিত মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার মামলায় দুজন সাক্ষীকে আবার জেরা করতে চান আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এ দুজন হলেন ১ নম্বর সাক্ষী নিশাত সুলতানা ও ২ নম্বর সাক্ষী নাসরিন সুলতানা ফুর্তি। আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আজ রোববার দিন ধার্য করেছেন।
জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হাফেজ আহাম্মদ বলেন, মামলার গুরুত্বপূর্ণ দুই সাক্ষী নিশাত সুলতানা ও নাসরিন সুলতানা ফুর্তি। তারা নুসরাতের সহপাঠী ও বান্ধবী। তাদের মধ্যে নিশাত গত ২৭ মার্চ মাদরাসায় নুসরাতের শ্লীলতাহানির সময় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার কক্ষের বাইরে অপেক্ষমাণ ছিল। আবার ফুর্তি নিজে অধ্যক্ষের যৌন হয়রানির শিকার হয়। তারা এর আগে গত ৩০ জুন ও ১ জুলাই ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেয়। ওই সময় আসামিপক্ষের পনেরজন আইনজীবী তাদের জেরাও করেছিলেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানান, সাক্ষীদের মধ্যে নিশাত ও ফুর্তি ১৪১ ধারায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছিল। তারা আমলি আদালতের বিচারকের কাছেও বয়ান দিয়েছে। পাশাপাশি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হলে তারা নারী ও শিশু নির্যতন দমন ট্রাইব্যুনালেও জবানবন্দি দিয়েছে। এই তিনটি বয়ানে বেশ কিছু অমিল রয়েছে। তারা একেক জায়গায় একেক ধরনের কথা বলেছে।
আইনজীবীরা বলেন, নিশাত আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে বলেছে যে ৬ এপ্রিল সকালে আগুনের ঘটনার পর পরীক্ষা হলে মামলার আসামি কামরুন নাহার মনি তাকে বলেছে, ‘তোদের বান্ধবী নুসরাত নাকি ছাদের ওপর গায়ে আগুন দিয়েছে? তা আত্মহত্যাই যদি করবে, তাহলে বাড়িতেও করতে পারত, মাদরাসায় কেন?’ কিন্তু এর আগে তদন্ত কর্মকর্তা ও আমলি আদালতের বিচারকের কাছে দেয়া বয়ানে এমন কোনো কথার উল্লেখ ছিল না। তাই আসামিপক্ষের আইনজীবীরা মনে করছেন, এই দুই সাক্ষীকে আরও জেরা করার প্রয়োজন রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে তাঁরা বিচারকের কাছে এই দুই সাক্ষীকে পুনরায় আদালতে হাজির করার জন্য আবেদন করেন।
আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী আহসান কবির বেঙ্গল বলেন, ‘আমরা মনে করি মামলার ন্যায়বিচারের স্বার্থে এই দুই সাক্ষীকে অধিকতর জেরা করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই আমাদের আবেদনের ভিত্তিতে আদালত আজ রোববার তাদের আবার আদালতে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছেন।’
পিপি হাফেজ আহাম্মদ বলেন, ন্যায়বিচারের স্বার্থে বিচারক এই দুই সাক্ষীকে পুনরায় হাজিরের নির্দেশ দিয়ে সমন পাঠিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ জুন থেকে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে নুসরাত হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। মামলার ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক শাহ আলমের জেরা শেষ হয়।