নুসরাত হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক শুরু কাল

ফেনী প্রতিনিধি |

ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণ পর্ব শেষ হয়েছে। গতকাল সোমবার আদালতে ১৬ আসামিকে ৩৪২ ধারায় সরাসরি ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে মামলার মূল পর্ব শেষ হয়। সকালে আসামি পক্ষের আইনজীবীদের আবেদনে আদালতে বাদী ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে পুনরায় জেরা করা হয়। আদালত সন্তানসম্ভবা আসামি কামরুন নাহার মনিকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। আগামীকাল বুধবার থেকে বাদী-বিবাদী পক্ষের যুক্তিতর্কের তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।

সকালে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে মামলার বাদী নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক শাহ আলমকে জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। জেরা শেষে আদালত ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩৪২ ধারায় আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও যাচাই-বাছাই পর্ব শুরু করেন।

আদালত প্রত্যেক আসামিকে পৃথক পৃথকভাবে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। প্রত্যেক আসামিকে পিপি হাফেজ আহাম্মদ তার কৃতকর্ম, অপরাধ, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি, সাক্ষীদের বক্তব্য ও নুসরাত হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ বর্ণনা করেন। প্রথমেই মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে তার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, সাক্ষীদের বক্তব্য ও প্রমাণ বর্ণনা করেন পিপি। 

এভাবে এক এক করে প্রত্যেক আসামিকে তার অপরাধের বর্ণনা শোনান। পরে বিচারক প্রত্যেক আসামির কাছে তার বক্তব্য জানতে চান। আসামিদের বক্তব্যের পর প্রত্যেক আসামিকে ৩-৪টি প্রশ্ন করেন বিচারক। তিনি জড়িত কি-না, নুসরাতের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। কেন তাকে আসামি করা হয়েছে। আদালত এ সময় বলেন, আসামিদের বক্তব্যের মাধ্যমে সত্য উদ্ঘাটিত হবে।

নির্যাতনের অভিযোগ : আদালতে প্রত্যেক আসামি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বক্তব্য দেন। আসামিদের কয়েকজন অভিযোগ করেন, পিবিআই নির্যাতনের মাধ্যমে ১৬৪ ধারায় তাদের স্বীকারোক্তি আদায় করেছে।

সিরাজ দাবি করেন, তার সঙ্গে কারাগারে কোনো আসামি সাক্ষাৎ করেননি, তিনি কাউকে হত্যার নির্দেশ দেননি, পিবিআই বৈদ্যুতিক শকসহ শারীরিক নির্যাতন করে তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করে। তিনি নিজেকে নির্দোষ এবং নুসরাতকে নিজের মেয়ের মতো দাবি করে তার হত্যার বিচার চেয়ে সাফাই সাক্ষী দেবেন না জানিয়ে লিখিত বক্তব্য আদালতে পেশ করেন।

এরপর পিপি আসামি নুর উদ্দিনের অপরাধ বর্ণনা করে তার বক্তব্য জানতে চাইলে সে জানায়, তাকে গ্রেফতারের পর স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য ঢাকা পিবিআই সদর দপ্তরে তার ওপর দু'দিন ধরে শারীরিক নির্যাতন চালায়। এ সময় তাকে বৈদ্যুতিক পাখার সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখে এবং বৈদ্যুতিক শক দেওয়া দেয়। স্বীকারোক্তি আদায় করতে ব্যর্থ হয়ে তাকে চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে ক্রসফায়ারের ভয় দেখায়।

তাকে ফেনীর আদালতে এনে পিবিআই কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ম্যাজিস্ট্রেট তার কাছে লিখিত কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলে। সে নিজেকে নির্দোষ বলে স্বাক্ষর দিতে অস্বীকার করলে ম্যাজিস্ট্রেট তাকে লাথি দিয়ে ফেলে দিয়ে পুনরায় রিমান্ডে দেওয়ার ভয় দেখায়। পরে বাধ্য হয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের লিখিত কাগজে স্বাক্ষর করে। সে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সাফাই সাক্ষী দেবে না জানিয়ে আদালতে লিখিত বক্তব্য জমা দিয়ে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করে।

আসামি কামরুন নাহার মনি আদালতকে জানায়, সে ঘটনার সময় পাঁচ মাসের গর্ভবতী ছিল, পিবিআই তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে স্বীকারোক্তি প্রদানের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে। তার ওপর নির্যাতন দেখে সহ্য করতে না পেরে হেফাজতে থাকা অপর আসামি যোবায়ের তাকে মনির পরিবর্তে নির্যাতনের জন্য পিবিআই কর্মকর্তার কাছে অনুরোধ জানায়। একপর্যায়ে তার পেটে লাথি মেরে গর্ভের সন্তান নষ্টের ভয় দেখিয়ে তাদের লিখিত কাগজে স্বাক্ষর আদায় করে।

আসামিরা তাদের এ বক্তব্য লিখিতভাবেও আদালতে দাখিল করে। কয়েক আসামিকে এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়। আদালত আসামিদের দাখিল করা আবেদন গ্রহণ করেন ও বক্তব্যের সারবস্তু লিপিবদ্ধ করেন।

পিপি হাফেজ আহাম্মদ জানান, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালত আগামী বুধবার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য করেছেন। পিপি আরও জানান, এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ, জেরা ও ৩৪২ ধারায় কার্যক্রমের সমাপ্তির মাধ্যমে মূল পর্ব শেষ হয়েছে। বুধবার আসামিদের কথোপকথনের রেকর্ড আদালতে প্রদর্শনের পর শুরু হবে বাদী ও বিবাদী পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক। যুক্তিতর্ক শেষ হলে রায়ের তারিখ ঘোষণা করবেন আদালত।

গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার একদল দুর্বৃত্ত নুসরাত জাহান রাফির শরীরে আগুন দিলে তার শরীর ঝলসে যায়। পরে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পিবিআই ১৬ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট প্রদান করে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0059440135955811