ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি কে এনামুল করিমের ভূমিকা নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্তের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়- পুলিশ সদর দপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটি, তার কার্যপরিধি এবং তদন্ত কমিটি এডিএমের ব্যাপারে তদন্ত করেছে কি-না, করে থাকলে কোন এখতিয়ার বলে করেছে, তা স্পষ্ট করতে হবে।
চিঠিতে স্বাক্ষর করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব মল্লিকা খাতুন। চিঠির বিষয়বস্তু হিসেবে লেখা হয়, 'সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার গভর্নিং বডির সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি কে এনামুল করিমের দায়িত্বে অবহেলার ব্যাপারে বিশেষ প্রতিবেদন।'
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এমন চিঠিতে পুলিশের ভেতরে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে পুলিশের কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, নুসরাতের ঘটনায় কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে তদন্ত করা হয়নি। এ ঘটনায় প্রশাসনিকভাবে যারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি, তা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। নুসরাতের পরিবারের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রশাসনিকভাবে যারা এ ঘটনায় গাফিলতি করেছিল, তাদের ব্যাপারে তথ্য উঠে আসে।
এদিকে নুসরাতের ঘটনায় সদর দপ্তরেরই এক ডিআইজিকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ফেনীর এসপি, সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি, দুই এসআইর দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির বিষয় উঠে আসে। তদন্ত কমিটি চারজনের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশও করেছে। এ ছাড়া ফেনীর তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ও সোনাগাজী ফাজিল মাদরাসার গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি পি কে এনামুল করিমের দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। পুলিশ সদর দপ্তরের এ প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, শুরু থেকেই এসপি-এডিএম এবং ওসিসহ স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নেওয়ার অপচেষ্টা চালান।
৪ এপ্রিল নুসরাত ও তার মা অধ্যক্ষ সিরাজের বিচার চাইতে যান মাদরাসার গভর্নিং বডির সভাপতি এনামুল করিমের অফিসে। বিচার তো দূরের কথা, তিনি ঘটনাটি চেপে যেতে বলেন নুসরাতকে। এনামুল তাদের বলেন, 'এখন কেন এসেছেন। আপনারা তো মামলা করে ফেলেছেন। মামলা করার আগে এলে দেখতাম, কী করা যায়।'
নুসরাতকে তিনি আরও বলেন, 'প্রিন্সিপাল খারাপ, সবাই জানে। তুমি তার কাছে গেছ কেন। যখন গেছ, তখন হজম করতে পারলে না কেন? তোমার বাবাকে মাদরাসায় বসানোর জন্য এ রকম নাটক সাজিয়েছ।'
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদরাসার গভর্নিং বডির প্রধান হিসেবে এনামুল করিম শুরুতেই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে নুসরাতের এ পরিণতি হতো না। উল্টো তিনি নুসরাতের পরিবারের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। আবার নুসরাতের ঘটনার পর এনামুলকে প্রধান করেই তদন্ত করে জেলা প্রশাসন।