নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

মানুষ মানেই তার মাঝে থাকবে মনুষ্যত্ব। সে তার মনুষ্যত্ব দিয়ে বিশ্ব জয় করবে। অন্য দিকে অমানুষ বলা হয় তাদেরকেই যাদের মাঝে নেই কোনো মনুষ্যত্ব। একজন মানুষ জন্মের পর থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত শিক্ষা লাভ করে থাকে। যে সুশিক্ষা লাভ করে তার মাঝেই মনুষ্যত্বের পূর্ণ বিকাশ হয় এবং তা তাকে পরিপূর্ণ মানুষ হতে সাহায্য করে। একজন ব্যক্তি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের পূর্বে পারিবারিক নৈতিক শিক্ষা লাভ করে। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

নিবন্ধে আরও জানা যায়,  যে শিক্ষা তার ভবিষ্যত্ জীবন আলোকিত করতে তাত্পর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটা শিশু জন্মের পর থেকে তার পরিবার হতে নৈতিক মূল্যবোধ অর্জন করে থাকে। যে পরিবারের সদস্যদের নৈতিকতা ও মূল্যবোধ সম্পর্কে কোনো শিক্ষা দেওয়া হয় না সে পরিবারে দুঃখ কষ্টের কোনো সীমা নেই। ফলে সে পরিবারের কেউ নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ অর্জন করতে পারে না। যখন কারো মাঝে মনুষ্যত্ব থাকে না তখন তার মাঝে পশুত্ব এসে ভর করে। এভাবেই একটি পরিবারে অমানুষের জন্ম হয়।

যার দরুন এভাবে শুধু যে একটি পরিবারেরই ক্ষতি হয় বিষয়টি তা নয়। সাপে কামড়ালে যেমন বিষ পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে ঠিক তেমনি সমাজে একজন খারাপ মানুষ থাকলে তার দ্বারা পুরো সমাজ প্রভাবিত হয়। তখন সামাজিক জীবন সাপের বিষের মতো বিষাক্ত হয়ে পড়ে। তাছাড়া রাষ্ট্রের এমনকি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ও ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক হারে র্যাগিং নামক কুপ্রথা চালু রয়েছে, যার মাধ্যমে মেধাবী ও নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীদের নির্মমভাবে অত্যাচার করে হত্যা করা হচ্ছে। কতটা অমানবিক, পাষণ্ড হলে অমানুষগুলো র্যাগিং এর নামে পাশবিক অত্যাচার করে নির্মমভাবে মানুষ মেরে ফেলতে পারে! বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা মনে হলে আজও সেদিনের মতো একইভাবে জাতির টনক নড়ে যায়।

সম্প্রতি একের পর এক ঘটে যাওয়া ধর্ষণ নামক সর্বনাশা ঘটনাগুলো জাতিকে বিভত্সভাবে ভাবিয়ে তোলছে। কতটা বর্বর, অসভ্য, মুর্খ ও মানসিক প্রতিবন্ধী হলে তারা এরকম ঘৃণিত কাজ করতে পারে তা বিবেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। যারা এসব কাজ করছে তারা টেরও পাচ্ছে না কতটা নিকৃষ্ট কাজ করছে। কারণ একটাই তাদের মাঝে নেই কোনো মনুষ্যত্ব, নেই কোনো মানবিক মূল্যবোধ। মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ফলে সমাজে নিষ্ঠুর ও অশ্লীল কাজগুলোর পুনরাবৃত্তি ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার দরুন দেশ ও জাতিকে আজ এত বড়ো সংকটাপন্ন অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। বিশ্বের দরবারে মুখ দেখানো আজ বড়োই কঠিন পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।


অপরদিকে একজন মানুষ যদি নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন হয় তাহলে তার জীবন হয় সহজ, সুন্দর ও আলোকিত। তাই সমাজের একটা মানুষ ও যেন অমানুষ না হয় প্রত্যেকটি পরিবারকে অনুরোধ করব, ছোটো বেলা থেকেই আপনার সন্তানকে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলুন। তার মননে প্রবেশ করিয়ে দিন নিম্নোক্ত নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন বিখ্যাত পঙিক্তগুলো। যেমন-

‘বিনয় উন্নতির পথে প্রধান সোপান,

বিনয়ে মানব হয় মহা মহীয়ান,

মধুর ভাষায় কাজ হবে সফল,

তিক্ত ভাষী পাবে মনে বেদনা কেবল।’

(শেখ সাদী)

সন্তান সন্ত্রাস, জঙ্গি অমানুষ হোক তা কখনো কোনো বাবা-মার কাম্য নয়, তবু যদি এমনটি হয়ে যায় তাহলে তাকে নিয়মিত কাউন্সিলিং করুন, তাকে ঘৃণা না করে বুঝিয়ে সুপথে ফিরিয়ে আনার আপ্রাণ চেষ্টা করুন। তার মাঝে মনুষ্যত্ববোধ জাগিয়ে তুলুন। তাহলে ভালো থাকবেন আপনি, ভালো থাকবে সমাজ, দেশ ও সর্বস্তরের মানুষ।

লেখক : নিগার সুলতানা, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি - dainik shiksha কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.010241985321045