রাজধানীর মধ্য বাড্ডার ন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ৪৩০ সেট বিনামূল্যের বই জব্দ করেছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্মকর্তারা। ১৬ জুলাই এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ বিষয়ক এক প্রতিবেদনে বিনামুল্যের বই বিক্রি এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার দায়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি। বাড্ডার ন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের সরকারি বই অতিরিক্ত বরাদ্দ নিয়ে বিভিন্ন প্রাইভেট স্কুল এবং খোলা বাজারে বিক্রির অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
বাড্ডা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও গুলশান থানা প্রথমিক শিক্ষা অফিসের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ অনিয়ম ও দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগও দীর্ঘদিনের। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেন পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের তিন কর্মকর্তা। বুধবার (১৮ জুলাই)এনসিটিবির চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা মো: জাকির হোসেন বলেন, ১৬ জুলাই থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত সরেজমিনে বই বিক্রির অভিযোগ তদন্ত করা হয়। ন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বই অতিরিক্ত বরাদ্দ রেখে বিভিন্ন প্রাইভেট স্কুল চড়া দামে বিক্রি করে অর্থ আত্নসাতের অভিযোগের সত্যতা পাঠ্যপুস্তক বিতরণের চালানের মাধ্যমে পাওয়া যায়। তদন্ত চলাকালে প্রতিষ্ঠানের একটি রুমে পাওয়া ৪৩০ সেট বই জব্দ করে রূমটি সিলগালা করা হয়।
জানা গেছে, তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোট ৫১৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য একহাজার ৪৬০ সেট পাঠ্যপুস্তক উত্তোলন করেছে ন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ। ৯৪২ সেট অতিরিক্ত বই উত্তোলন করেছেন। তদন্ত চলাকালে ৪৩০ সেট বই জব্দ করা হলেও বাকি ৫১২ সেট সরকারি বইয়ের হদিস দিতে পারেননি প্রতিষ্ঠান প্রধান। ন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজে ১ম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৪ জন হলেও সরকারের কাছ থেকে উত্তোলন করা হয়েছে ৯০ সেট বই। প্রথম শ্রেণির অতিরিক্ত ৫৬ সেট বই উত্তোলন করেছেন তারা।
এ ছাড়া দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৩৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য পাঠ্যপুস্তক ৯০ সেট উত্তোলন করা হয়, যার মধ্যে অতিরিক্ত পাঠ্যপুস্তকের সংখ্যা ৫৫ সেট। ৩য় শ্রেণিতে ৫৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১০০ সেট বই উত্তোলন করা হয়। এর মধ্যে অতিরিক্ত বই ৪১ সেট। ৪র্থ শ্রেণিতে ৪৫ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত কিন্তু ৯০ সেট বই উত্তোলন করা হয়। অর্থাৎ অতিরিক্ত ৪৫ সেট। ৫ম শ্রেণিতে ৪০ জন শিক্ষার্থীর জন্য উত্তোলন করা হয় ৯০ সেট, অর্থাৎ অতিরিক্ত ৫০ সেট। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ৭১ জন শিক্ষার্থীর জন্য ২৫০ সেট বই উত্তোলন করা হয়, এর মধ্যে অতিরিক্ত ১৭৯ সেট বই। ৭ম শ্রেণিতে অতিরিক্ত উত্তোলন করা হয়েছে ১৯২ সেট বেই। ৮ম অতিরিক্ত রয়েছে ১৭৫ সেট এবং ৯ম শ্রেণিতে ১৪৯ সেট।
ন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক এস এম ফয়জুল হক অতিরিক্ত পাঠ্যপুস্তক গ্রহণের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যাও দিতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে শিক্ষার্থী বৃদ্ধির কথা চিন্তা করে অতিরিক্ত পাঠ্যপুস্তক গ্রহণ করেছে।’ এ বক্তব্যের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই বলেও জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
প্রধান শিক্ষককে বই বিক্রি করে অর্থ আত্নসাতের কথা প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। যদি বিক্রি না করেন তবে জব্দকৃত ৪৩০ সেট পাঠ্যপুস্তক ছাড়া আরো ৫১২ সেট কোথায় রেখেছেন, এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি। তাছাড়া ৪৩০ সেট পাঠ্যপুস্তক কেন নিজের প্রতিষ্ঠানের গুদামে সংরক্ষণ করেছেন, এ প্রশ্নেরও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। অতিরিক্ত পাঠ্যপুস্তক গ্রহণের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানাননি এ প্রতিষ্ঠান প্রধান।
গুলশান থানার সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার জানান, লোকবল সংকটের কারণে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চাহিদাপত্র যাচাই বাছাই করা সম্ভব হয়নি এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত বই সম্পর্কে তাকে কোনকিছু অবহিত করেনি। পাঠ্যপুস্তক বিতরণে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কৃষ্ণচন্দ্র নম দাস, শিক্ষার্থীর তুলনায় অতিরিক্ত পাঠ্যপুস্তক বন্টনসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোন ব্যাখ্যা প্রদান করেননি। স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ও মো: আকতারুজ্জামান অতিরিক্ত বই গ্রহণের বিষয় স্বীকার করেছেন।