এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা শিক্ষাজীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই পরীক্ষার ফলাফলের ওপর নির্ভর করে একজন শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের বিষয়টি। আর এই পরীক্ষায় যারা অকৃতকার্য হয়েছে, তাদের জন্য আমাদের চিন্তা ও উৎকণ্ঠা অনেক বেশি। যদিও এ বছর পাসের হার গতবারের থেকে ভালো তারপরেও এই সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। শনিবার (২৪ আগস্ট) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন মো. তারিকুল ইসলাম।
একজন শিক্ষক হিসাবে যখন দেখি ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা করে ভালো রেজাল্ট করেছে তখন খুব আনন্দিত হই; আর যখন খারাপ রেজাল্ট করে তখন খুবই খারাপ অনুভূতি হয়। এই অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কী? সকল পাবলিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর বিষয়টি কর্তৃপক্ষের আলাদাভাবে বিবেচনা করা উচিত। কারণ প্রতিবছরের এই বিশাল সংখ্যার শিক্ষার্থী অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসাবে পরিগণিত হবে এবং তাদের ব্যাপারে কোনো প্রতিষ্ঠানের চিন্তাভাবনা থাকবে না, যা সত্যিই দুঃখজনক। সাধারণত দেখা যাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো গতবারের খারাপ ফলাফলের কারণ বিশ্লেষণ করে নতুন শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে নানা পদক্ষেপ নেবে। যেমন টিউটরিয়াল ক্লাস, বিশেষ ক্লাস, ক্লাস টেস্ট ইত্যাদি। কিন্তু গত বছরের অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে কারো কোনো ভাবনা বা পরিকল্পনা থাকবে না। তারা হয়তো নিজ উদ্যোগে চেষ্টা করে কিছুটা ভালো ফলাফল করার চেষ্টা করবে আর অধিকাংশই ঝরে পড়া শিক্ষার্থী হিসাবে পরিসংখ্যানে রেকর্ডভুক্ত হয়ে যাবে।
এসব অকৃতকার্য শিক্ষার্থী কি আমাদের সমাজ ও পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে থাকবে, নাকি বিশেষ শিক্ষাদান ও প্রেষণার মাধ্যমে তাদের সম্পদে পরিণত করা যাবে? এ ব্যাপারে কিছু পরামর্শ তুলে ধরলাম—
প্রথমত, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এমন একটা কোয়ালিটি অ্যাসুয়ারেন্স সেল থাকবে যারা প্রতিবছর যে কোনো পাবলিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নের কাজ করবে। দ্বিতীয়ত, প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে নিজ নিজ অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ পাঠদানের ব্যবস্থা করা। তৃতীয়ত, শিক্ষার্থীরা যেন পড়াশোনায় উৎসাহ হারিয়ে না ফেলে সেজন্য অভিভাবক, শিক্ষক ও বন্ধুমহলের অনুপ্রেরণা ও সহায়তার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তা ছাড়া যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই, সেখানে দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেয়া; একইসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা; সৃজনশীল পদ্ধতির যথাযথ জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষকসহ সহায়ক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি কারিগরি ও কর্মমুখী শিক্ষাকে যুগোপযোগী করা, যাতে এই শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে দেশে বিদেশে চাকরির সুযোগ পায়।
সুতরাং পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীরা ভালো ফলাফল করলে আমরা যেমন সাধুবাদ জানাই, তেমনি যারা অকৃতকার্য হয়েছে তারা কেন খারাপ ফলাফল করল এবং তাদের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে তা যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত জরুরি।
মো. তারিকুল ইসলাম : বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।