পরীক্ষার্থীদের টাকা ফেরত দেবে শিক্ষা বোর্ডগুলো

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার জন্য বোর্ড-ফি ও কেন্দ্র-ফি মিলিয়ে বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছিল আড়াই হাজার টাকা করে। এর মধ্যে কেন্দ্র-ফি ৮০৫ টাকা। মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে বোর্ড-ফি ১ হাজার ৯৪০ টাকা এবং কেন্দ্র-ফি ৪৪৫ টাকা হারে আদায় করেছে শিক্ষা বোর্ড। এর বাইরে কলেজগুলো টিউশন-ফির নাম দিয়ে ইচ্ছেমতো টাকা আদায় করেছে। বুধবার (২১ অক্টোবর) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, এ বছর এই পরীক্ষা না হওয়ায় ফির নামে নেয়া টাকার বেশির ভাগ অংশ খরচ হয়নি। খরচ না হওয়া টাকার বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডগুলো বলছে, ফির মাধ্যমে নেয়া টাকার কিছু অংশ খরচ হয়েছে। কত খরচ হয়েছে আর কত উদ্বৃত্ত থাকছে তার হিসাব এখনো হয়নি। তবে হিসাব না হলেও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের টাকা ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। তবে কবে থেকে পরীক্ষার্থীদের কাছে এই টাকা ফেরত দেয়া শুরু হবে তা এখনো নির্ধারণ হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, পরীক্ষা না হলেও পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া বোর্ড-ফির বেশ টাকা খরচ হয়ে গেছে। উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য বরাদ্দ করা টাকা এবং কেন্দ্র-ফিসহ কিছু টাকা খরচ হয়নি। এই টাকার বিষয়ে কী করা হবে সেই সিদ্ধান্তের জন্য বোর্ড চেয়ারম্যানরা সরকারের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। অর্থাৎ সরকার নির্দেশ দিলে পরীক্ষার্থীদের কাছে তারা টাকা ফেরত দেয়া শুরু করবেন। তিনি বলেন, কেন্দ্র-ফি বোর্ডে আসে না। এটি প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছেই থাকে। বোর্ড থেকে যেদিন টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলা হবে সেদিন কেন্দ্র থেকে পরীক্ষার্থীদেরও ফেরত দেয়া হবে।

জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, পরীক্ষার আনুষঙ্গিক ব্যয় বাবদ কত খরচ হয়েছে, আর কত টাকা রয়েছে তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। তবে বেঁচে যাওয়া টাকা পরীক্ষার্থীদের ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। তবে কে কত টাকা ফেরত পাবেন তার হিসাব এখনো হয়নি। ঠিকঠাক হিসাব বের করার জন্য শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকের মূল্যায়নের ফলাফল দেয়ার পর টাকা ফেরত দেয়ার কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফরম ফিলাপের জন্য যে নীতিমালা জারি করা হয়েছিল তাতেও বলা হয়েছে, কেন্দ্র-ফি বাবদ আদায় হওয়া টাকা দিয়ে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্র অথবা কলেজ কর্তৃপক্ষ তত্ত্বীয় এবং ব্যবহারিক উভয় পরীক্ষার যাবতীয় খরচ মেটাবেন। এক্ষেত্রে বোর্ড থেকে কোনো টাকা দেয়া হবে না। আদায় হওয়া কেন্দ্র-ফির ১০ শতাংশ টাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ খরচ করতে পারবে। বাকি ৯০ শতাংশ টাকা পরীক্ষা কেন্দ্র বা ভেন্যুর খরচের জন্য ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দিতে হবে। কিন্তু চলতি বছর পরীক্ষা না হওয়ায় এই টাকা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কী করেছেন?

সারাদেশে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন। এর মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থী ১০ লাখ ৭৯ হাজার ১৭১ জন আর অনিয়মিত পরীক্ষার্থী ছিল ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫০১ জন। পরীক্ষায় অংশ নিতে শিক্ষা বোর্ডে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে ফরম পূরণ করতে হয় শিক্ষার্থীদের। হিসাব করে দেখা গেছে, ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পরীক্ষার ফরম পূরণ বাবদ প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা নিয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলো।

পরীক্ষা বাদ দিয়ে জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে এইচএসসির ফলাফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়ায় ফরম পূরণের এই বড় অঙ্কের টাকা কীভাবে ব্যয় হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষরা বলছেন, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, মডারেশন আর প্রশ্নপত্র পাঠানো বাবদ ট্রান্সপোর্ট খরচ ছাড়া বড় অংশের টাকাই এখনো শিক্ষা বোর্ডের ফান্ডে রয়ে গেছে।

রাজধানীর সেন্ট্রাল উইম্যান্স কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী দীপিকা সাহা বলেন, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের পরিবার সংকটে পড়েছে। পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণের টাকা ফেরত দিলে অনেক উপকৃত হব।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027039051055908