ভর্তি পরীক্ষায় অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর নাম মেধা তালিকার ১২ স্থানে আসায় সমালোচিত হয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) প্রশাসন। এ ঘটনার দায় এক শিক্ষার্থীর ওএমআর বৃত্ত ভরাটের ভুল ও কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্বহীনতার ওপর চাপিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ভর্তি পরীক্ষায় এক শিক্ষার্থীর ওএমআর বৃত্ত ভরাটের ভুলে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর নাম মেধা তালিকায় ১২তম স্থানে চলে আসে দাবি করে মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি। ভর্তিতে কোন জালিয়াতি হয়নি বলেও দাবি করা হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে। একই সাথে তদন্ত প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়েছে। আরও আজ ৪ ডিসেম্বর থেকে স্থহিত থাকা ভর্তি কার্যক্রম শুরুর ঘোষণাও দেয়া হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে।
গত ৩০ নভেম্বর এ ঘটনা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। একই সাথে ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমানকে আহ্বায়ক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বজল চন্দ্র মজুমদারকে সদস্য ও ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. এমদাদুল হককে সদস্য সচিব করে এ কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিটি দাবি করে, গত ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ২০৬০৫০ রোলধারী সাজ্জাদুল ইসলামকে অনুপস্থিত দেখালেও ১২ নভেম্বরের প্রকাশিত ফলাফলে সে মেধা তালিকায় ১২তম স্থান অধিকার করেন। এ ঘটনায় ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি স্থগিত করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আল মোস্তাকীন নামে এক ছাত্র (রোল নং ২০৬১৫০) কোটবাড়ী টির্চাস ট্রেনিং কলেজ কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা দেয়। ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ওএমআর শিটে তার নির্ধারিত রোল নম্বরের জায়গায় তার প্রকৃত রোল ২০৬১৫০ লিখলেও ওএমআর শীটে বৃত্ত ভরাটের ক্ষেত্রে ভুলক্রমে ‘১’ এর জায়গায় ‘০’ বৃত্তটি ভরাট করে।
তদন্ত কমিটি আরও জানায়, ওএমআর শিট রিডার ম্যানুয়েল রোল নম্বর স্ক্যান করে না। শুধুমাত্র বৃত্ত ভরাট অংশটুকু রিড করে। তাই, মেশিনের মাধ্যমে প্রক্রিয়া করা ফলে প্রকৃত আল মোস্তাকীনের (রোল নম্বর ২০৬১৫০) স্থানে মো: সাজ্জাদুল ইসলামের (রোল নম্বর ২০৬০৫০) নাম প্রকাশিত হয়। কক্ষ পরিদর্শক যদি ছাত্রটির প্রকৃত রোল নম্বর ২০৬১৫০ ওএমআর শিটে সঠিকভাবে বৃত্ত ভরাট করেছে কিনা তা নিশ্চিত হয়ে ওএমআর শিটটি স্বাক্ষর করতেন তাহলে এ ভুলটি কোনভাবেই হত না বলে মন্তব্য করেছে তদন্ত কমিটি।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, ‘বি’ ইউনিট কমিটির কোন রকম জালিয়াতি কিংবা অনিয়ম তদন্ত কমিটির কাছে প্রতিয়মান হয়নি। পরীক্ষার্থী ও কক্ষ পরিদর্শকের ‘বি’ ইউনিটের ফলে অসামঞ্জস্য সংঘঠিত হয় বলে তদন্ত কমিটি নিশ্চিত হয়। তদন্ত কমিটি ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি কার্যক্রম শুরু করার সুপারিশ করেন। সেই মোতাবেক ৪ ডিসেম্বর থেকে ভর্তি কার্যক্রম চালু হচ্ছে। ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি প্রক্রিয়া আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।
উল্লেখ্য, গত ৮ নভেম্বর কুবির কলা ও মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান ও আইন অনুষদ নিয়ে গঠিত বি ইউনিটে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরে ১২ নভেম্বর প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, এতে ১২তম হয়েছেন ২০৬০৫০ রোলধারী ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। সিট প্ল্যান অনুযায়ী তার সিট পড়েছিল কোটবাড়ির টিচার্স ট্রেনিং কলেজে। তবে ওই কেন্দ্রে বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ২০৬০৫০ রোলধারী শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। পরীক্ষা হলের উপস্থিতির তালিকায় তার স্বাক্ষরও নেই। এ তালিকায় তার নাম দেয়া আছে মো. সাজ্জাতুল ইসলাম। তবে মেধাতালিকায় স্থান পাওয়া এ ভর্তিচ্ছু সাক্ষাৎকারও দিতে আসেননি।