প্রতারণার মাধ্যমে বিএ পরীক্ষায় অংশ নেয়ার অভিযোগে নারী সাংসদ তামান্না নুসরাত বুবলীকে নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (২২ নভেম্বর) নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগের একাধিক সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। নরসিংদীর সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি বুবলী।
এর আগে প্রতারণার মাধ্যমে বিএ পরীক্ষায় অংশ নেয়ার অভিযোগে নারী সাংসদ তামান্না নুসরাত বুবলীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার এবং ছাত্রত্ব বাতিল করেছে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) কর্তৃপক্ষ। তার সব পরীক্ষা বাতিলের পর নিবন্ধন ও প্রবেশপত্রও বাতিল করা হয়েছে। প্রতারণার পুরো ঘটনা তদন্ত করতে চার সদস্যের কমিটি গঠনও করে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। নরসিংদীর সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি বুবলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন বাউবির ভিসি অধ্যাপক ড. এম এ মান্নান।
বিষয়গুলো তুলে ধরে তামান্না নুসরাত বুবলীর বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া জানতে চেয়ে গত ২৮ অক্টোবর সকালে সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। উত্তরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জানান, তার বিষয়ে পরবর্তী দলীয় সিদ্ধান্ত ওয়ার্কিং কমিটির সভায় নেয়া হবে। বিষয়টিতে স্পিকার অবগত আছেন। সংসদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন।
আগেই প্রতারণার আশ্রয় নেয়ায় বুবলীর সব পরীক্ষা বাতিল করা হয়। একই সঙ্গে জালিয়াতির বিষয়টি অনুসন্ধানে নরসিংদী সরকারি কলেজের পক্ষ থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান আকন্দ। বুবলীর বিএ পরীক্ষায় পরপর ৮টি বিষয়ে প্রক্সি দিয়েছেন অন্য শিক্ষার্থী। নিজে পরীক্ষা না দিয়ে অন্যের পরীক্ষা দেয়ায় এশা নামের সেই ছাত্রীকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার শেষ পরীক্ষা দিতে গিয়ে হলে এশা হাতেনাতে ধরা পড়েছেন। গত ১৮ অক্টোবর দৈনিক শিক্ষাডটকমে ‘মহিলা এমপির বিএ পরীক্ষা দিচ্ছে আট ভাড়াটে ছাত্রী’ এই শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর তার সব পরীক্ষা বাতিল করা হয়। এমপি ববুলীর এই জালিয়াতির খবরে সারাদেশে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় বইছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নরসিংদী ও গাজীপুর আসনের সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি তামান্না নুসরাত বুবলী। তিনি নরসিংদী পৌরসভার প্রয়াত মেয়র ও সাবেক শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেনের স্ত্রী। তার দেবর কামরুজ্জামান কামরুল নরসিংদী পৌরসভার মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি। অপর দেবর শামীম নেওয়াজ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। পুরো পরিবারই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
নির্বাচনের সময় হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী বুবলী এইচএসসি পাস। উচ্চ শিক্ষার সার্টিফিকেট লাভের আশায় তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) ৩ বছর মেয়াদি ব্যাচেলর অব আর্টস (বিএ) প্রোগ্রামে ভর্তি হন। এ পর্যন্ত চারটি সেমিস্টারের ১৩টি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে- ১৩টি পরীক্ষার একটিতেও স্ব-শরীরে তিনি অংশ নেননি। তার পক্ষে একেক সময় একেক জন অংশ নিয়েছে। আর এমপির প্রক্সি পরীক্ষার্থীকে সুবিধা দিতে পরীক্ষার কেন্দ্রসহ হল পাহারায় থাকতেন এমপির লোকজন। তাই ভয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেউই মুখ খুলতে পারেননি।
প্রক্সি পরীক্ষার্থী এশা নিজেকে তামান্না নুসরাত বুবলী বলে দাবি করেন। তবে তার ছবি সংবলিত প্রবেশপত্র দেখাতে পারেননি। এমপি বুবলীর পরীক্ষা কীভাবে দিচ্ছেন তা জানতে চাইলে তার কোনো সঠিক জবাব দিতে পারেননি এশা। প্রক্সি পরীক্ষায় অংশ নেয়া একজন পরীক্ষার্থীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার বিধান থাকলেও এর কিছুই করেননি কর্তৃপক্ষ। অনেকটা বীর দর্পেই হল থেকে বেরিয়ে যান ওই পরীক্ষার্থী।
অন্যকে দিয়ে পরীক্ষা দেয়ানোর দায় ব্যক্তিগত কর্মকর্তার ওপর চাপিয়েছেন আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি তামান্না নুসরাত বুবলী। অসুস্থতার কারণে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি বলে দাবি করেন তিনি। গত ২০ অক্টোবর বিকেলে এমপি হোস্টেলে গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। বুবলী দাবি করেন, আগের পরীক্ষাগুলো তিনি নিজে দিয়েছেন। কিন্তু অসুস্থতার কারণে সর্বশেষ পরীক্ষা দিতে যেতে পারেন নি। সেই পরীক্ষা অন্যকে দিয়ে দেয়ানোর ব্যবস্থা করেছেন তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা। এটা কি সে নিজে থেকে করেছে নাকি অন্য কেউ তাকে দিয়ে করিয়েছে সেটা এখনো স্পষ্ট নয় বলে জানান তিনি। বলেন, এটাতো অবশ্যই কেউ করিয়েছে। এটাতো বোঝাই যাচ্ছে। আমার সুনাম নষ্ট করার জন্য একটা পক্ষ এই কাজ করিয়েছে, এটা সত্য। ভুলের জন্য ব্যক্তিগত কর্মকর্তা তার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমি তাকে ক্ষমা করিনি। এই ভুলের জন্য এলাকাবাসী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন এমপি বুবলী।