ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তিতে বয়সের বাধা তুলে দেয়া ও ভর্তির যোগ্যতা শিথিল করার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ আইডিইবি। শনিবার আইডিইবি ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সভায় বলা হয়েছে, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাকে ধ্বংস করার নতুন আত্মঘাতী ভর্তি নীতিমালা ২০২০ বাতিল করে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ভর্তি নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে। নতুন সিদ্ধান্ত দেশের কারিগরি শিক্ষাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে। কোনো স্টাডি ছাড়া এ ধরনের হটকারী নীতিমালা গ্রহণযোগ্য নয়।
এর আগে গত বুধবার এক সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং বিদেশফেরত দক্ষ কর্মীদের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়ার জন্য পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তির ক্ষেত্রে কোনো রকমের বয়সের সীমাবদ্ধতা রাখা হবে না। মন্ত্রী বলেন, অনেক ব্যক্তির হয়ত প্রয়োজনীয় কারিগরি দক্ষতা আছে কিন্তু তার প্রাতিষ্ঠানিক কোনো সার্টিফিকেট নেই এবং সার্টিফিকেট না থাকার কারণে ভালো চাকরি পাচ্ছে না অথবা চাকরি পেলেও ভালো বেতন পাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে সে ব্যক্তি যদি চায় এবং যদি তার প্রয়োজনীয় একাডেমিক যোগ্যতা থাকে তাহলে সে ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হতে পারবে।
মিটিংয়ে তিনি ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তির ক্ষেত্রে ছেলেদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম যোগ্যতা জিপিএ ৩ দশমিক ৫ থেকে কমিয়ে ২ দশমিক ৫, মেয়েদের ক্ষেত্রে জিপিএ ৩ থেকে কমিয়ে ২ দশমিক ২৫ করার সিদ্ধান্ত দেন। পাশাপাশি ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি ফি এক হাজার ৮২৫ টাকা থেকে এক হাজার ৯০ টাকা করার সিদ্ধান্ত দেন।
গতকাল শনিবার শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও পলিটেকনিকে ভর্তিতে বয়সসীমা তুলে দেয়ার চিন্তার কথা জানিয়েছেন।
মন্ত্রণালয়ের এ ঘোষণার বিষয়ে শনিবার আইডিইবি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সভা থেকে বলা হয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে হটকারী সিদ্ধান্ত বাতিল করে ২০১৯-এর বিধিমালা তথা জিপিএ ৩ দশমিক ৫০ ও গণিতে জিপিএ ৩ এবং ২০১৮-২০১৯-২০২০ (৩ বছরের)-এর শিক্ষার্থীদের ভর্তির যোগ্যতা নির্ধারণ করে ভর্তির নীতিমালা চূড়ান্ত করতে হবে।
আইডিইবি বলেছে, আইডিইবি গভীর উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ করছে যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তির নীতিমালায় বয়স অবারিত করা এবং গত বছরের ন্যূনতম জিপিএ ৩ দশমিক ৫০ এর পরিবর্তে হ্রাস করে ২ দশমিক ৫০ করার মতো আত্মঘাতী ও হটকারী সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। এ ঘোষণা দেশের কারিগরি শিক্ষা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে দাঁড়াবে। ঘোষিত হটকারী নীতিমালা বাতিল করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের নীতিমালা অনুযায়ী দেশের সকল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ছাত্র ভর্তি করা করতে হবে। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ভর্তি নীতিমালায় ন্যূনতম জিপিএ ৩ দশমিক ৫০ ও গণিতে জিপিএ ৩ এবং ২০১৭-১৯ (৩ বছরের) এর শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ ছিল।
নেতারা আরও বলেন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তিতে বয়সের সীমা তুলে দিলে সরকারি পলিটেকনিকের শিক্ষার পরিবেশ কলুষিত হবে ও বয়সের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে সরকারি পলিটেকনিকে ৪৯ হাজার আসনের বিপরীতে ৯৮ হাজার আবেদন পড়েছিল, তাহলে কি কারণে ৩ দশমিক ৫০-এর পরিবর্তে এ বছর ২ দশমিক ৫০ এ নামানো হলো তা কারো বোধগম্য নয় এবং তা কারিগরি শিক্ষার মান নিম্নমুখী করার ষড়যন্ত্র।
আইডিইবি আরও বলেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই বিতর্কিত ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের কারণে দেশের সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্রছাত্রী-শিক্ষক এবং সর্বস্তরের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে এবং যা সঙ্কট তৈরি করতে পারে।