পহেলা বৈশাখঃ বেসরকারি শিক্ষকদের অপমান দিবস!

মোস্তাফিজুর রহমান শামীম |

বাংলা নামের ছোট্ট দেশটি আমাদের। যার নাম বাংলাদেশ। ভাষার নামে যে জাতীর পরিচয় সে জাতির নাম বাঙালি। আমারা সেই বাঙালি যাদের একান্ত নিজস্ব উৎসব ঐতিহ্যবাহী পহেলা বৈশাখ। বাঙালি সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় উৎসব। বৈশাখ ঘনিয়ে এলেই যেন বাঙালি জাতি তাদের চিরাচারিত বাঙ্গালিয়ানাকে প্রাণপনে আঁকড়ে ধরার প্রয়াস প্রকট হয়ে উঠে। কিন্তু আজ দেশের বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীর সেই প্রয়াস ধ্বংস হতে চলেছে।

পহেলা বৈশাখ বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী একটি দিন। শুধু বাঙালি না বাংলাদেশে অবস্থানরত অন্যান্য দেশের মানুষও এই দিনটি বিশেষভাবে পালন করেন। প্রশ্ন থেকে যায়, শুধু বেসরকারি শিক্ষকদের বেলায়। প্রশ্ন থেকে যায়, বৈশাখী ভাতা চালু হওয়াই। বেসরকারি শিক্ষকরা যেন অন্য একটি জাতি। তবে কি নয় এরা বাঙালি!? আমাদের কি এভাবেই অপমানিত হতে হবে নববর্ষের শুরুতে!? এটাই কি আপনাদের পক্ষ থেকে বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য নববর্ষের শুভেচ্ছা?!

অষ্টম পে-স্কেলের আওতাভুক্ত সরকারি চাকরিজীবীরা সবাই বৈশাখী ভাতা পেয়ে আসছেন। এবারও পাবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। গালভরা হাসি নিয়ে খুশিতে গদগদ হয়ে পহেলা বৈশাখ পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বাজারের সবচেয়ে বড় ইলিশ কেনার টার্গেট নিয়ে আছেন। তারা হয়তো ভাবছেন বৈশাখী ভাতা কিভাবে আরও বৃদ্ধি করা যায়? আরও কি কি ভাতা বেতনের সাথে যোগ করা যায়? অন্যদিকে বেসরকারি শিক্ষকরা অপলক দৃষ্টিতে সেই হাসি নিজেদের গালে হাত দিয়ে উপভোগ করছেন। অনেক ক্রন্দন আর আর্তনাদের পর নতুন পে-স্কেলে বেতন হয়েছিল দুঃখিত, অনুদান হয়েছিল বেসরকারি শিক্ষকদের। তাই প্রথমবার বৈশাখী ভাতার উপলদ্ধি ঠিকমত করতে পারেননি বেসরকারী শিক্ষক সমাজ।

কিন্তু আমরা আজ নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। এক দেশ এক সরকার, বৈষম্য কেন তোমার আমার? আমরা শুধু পহেলা বৈশাখ নয়, প্রতিদিনিই পান্তা ভাত খায়। কিন্তু এখন পান্তা খেতে ভয় পাচ্ছি। মনে হচ্ছে পান্তা ভাতের মধ্যে বিষ আছে। অপমানের বিষ। বৈশাখী ভাতার প্রচলন যখন ছিলনা তখনই বরং শিক্ষক সম্প্রদায় মনের আবেগ, অনুভূতি ভালোবাসা দিয়ে এই দিনটি পালন করতেন। এখনও করেন, তবে যন্ত্রমানবের মতো।

বেসরকারি শিক্ষকরাও অষ্টম পে-স্কেলের আওতাভুক্ত। এজন্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা। কিন্তু আমাদের বৈশাখী ভাতা নেই। তবে কি বৈশাখ দু’রকমভাবে পালিত হবে? সরকারি ও বেসরকারি!?

বৈশাখী ভাতা চালুর পর থেকে পহেলা বৈশাখের বাজারে সরকারি চাকরিজীবীদের হাতে ঝোলানো রূপালি ইলিশের চোখ ধাঁধানো ঝলকানিতে বেসরকারি শিক্ষকরা চোখে ঝাপসা দেখেছেন। এবারও কি তাই দেখতে হবে? বিবেকের তাড়নায় শিক্ষকরা মঙ্গল শোভাযাত্রা করেন। দুঃখভরাক্রান্ত মন নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা কতুটুকু শোভনীয়। এসব ঘটনা কি আপনাদের অনুভূতিতে কোন আঘাতই দেয় না!? নাকি বিবেকের বিসর্জন দিয়ে সব কিছুকে ভুলে থাকার চেষ্ঠা করেন। বয়সের ভারে বেসরকারি শিক্ষকরা একসময় দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু বিবেকের চোখ সক্রিয় থেকে যায়। পারেননা দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে। আপনারাও তো শিক্ষকদের কাছেই বিদ্যা বুদ্ধি অর্জন করেছেন। তবে কিভাবে পারেন শিক্ষকদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে!

বৈষম্যের বেড়াজালে শুধু সরকারি চাকরিজীবীদের বৈশাখী ভাতা প্রদান করে আমাদের হেওপ্রতিপন্ন করাটাই কি আপনাদের মনতৃপ্তি? যদি তাই হয় তবে অনুরোধ একটাই, এবার নতুন আমেজে পহেলা বৈশাখ পালন করুন বেসরকারি শিক্ষকদের বেদরকারি মনে করে।

লেখকঃ মোস্তাফিজুর রহমান শামীম, শিক্ষক ও কলামিস্ট।

 

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়]


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030391216278076