মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের অত্যাচারের রূপ কতটা ভয়াবহ ছিল তা নতুন প্রজন্ম জানে না। কারণ আমাদের পাঠ্য পুস্তকে সেগুলো লেখা নাই। তাই পাঠ্য পুস্তকে মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরব গাঁথার পাশাপাশি পাকিস্তানি হানাদার বাাহিনী ও তাদের দোসর– জামায়াতে ইসলামী, আল-বদর আল শামস্ ও রাজাকারসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের বিভৎস নির্যাতনের কাহিনী লেখা থাকতে হবে, যাতে তারা (নতুন প্রজন্ম) বুঝতে পারে– কারা আমাদের ভালো করেছে, আর কারা মন্দ করেছে।’
বগুড়ায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের উদ্বোধন উপলক্ষে বুধবার বিকেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (জিয়াউর রহমান) সেক্টর কমান্ডার হলেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে ছিলেন না। তার সব কাজই ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী। যে কারণে তিনি তার মন্ত্রিসভায় স্বাধীনতার পক্ষের কোনো লোককে স্থান দেননি।’
মুক্তিযোদ্ধাদের 'উদাসীনতা' পরিহার করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে আবারও গর্জে ওঠার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের (মুক্তিযোদ্ধা) সন্তানদের যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে তোমার বাবা কোন সেক্টরে যুদ্ধ করেছে, তাহলে তারা বলতে পারে না। আমাদের উদাসীনতার কারণেই এমনটা হচ্ছে। এটা পরিহার করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে– আমরা বঙ্গবন্ধুর ডাকে অস্ত্র জমা দিয়েছি, কিন্তু চেতনা ও টেনিং জমা দেইনি।’
সারাদেশে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বাড়ি নির্মাণের কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যারা অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা তাদেরকে বাড়ি নির্মাণের জন্য ১৬ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হবে। ২০২০ ও ২০২১ সালে ১৪ হাজার করে সারাদেশে একই ডিজাইনের মোট ২৮ হাজার বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হবে, যাতে ডিজাইন দেখে সবাই বুঝতে পারে সেটি একজন মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি। এই প্রকল্পের আওতায় বগুড়ায় ৪৫০টি বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হবে। তবে অসচ্ছল নয়– এমন মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি নির্মাণের জন্য ১৫ লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়া হবে।
বগুড়া শহরের কারবালা এলাকায় সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন উদ্বোধনকালে একইসঙ্গে জেলার গাবতলী ও আদমদীঘি উপজেলায় নবনির্মিত দু’টি ভবনও উদ্বোধন করেন মন্ত্রী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বগুড়া জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ। স্বাগত বক্তব্য দেন মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হাকিম। সভায় মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে বেশ কিছু দাবি-দাওয়া তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানের অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বগুড়া-৭ আসনের সাংসদ রেজাউল করিম বাবলু, বগুড়া জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. মকবুল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, সহ-সভাপতি টি জামান নিকেতা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বগুড়া কমান্ডের সাবেক কমান্ডার রুহুল আমিন বাবলু।