রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ পুরো জুন মাস জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে না এসে ঢাকায় অবস্থান করার পর অবশেষে ৩৩ দিন পর গতকাল মঙ্গলবার (৩ জুলাই) ক্যাম্পাসে এসেছিলেন এক ঘণ্টার জন্য। সকাল পৌনে এগারটায় ঢাকা থেকে বিমানে করে ক্যাম্পাসে আসেন এক ঘণ্টা অবস্থান করে আবার দুপুর ১২টায় বিমানযোগে ঢাকায় ফিরে যান।
বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের নিয়োগ বাছাই পরীক্ষা বিভিন্ন পদে ১৫২ জন আবেদনকারীর সাক্ষাৎকার উপাচার্যের নিজস্ব সরকারি বাংলোতে কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে গ্রহণ করা হয়। সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হলেও নিয়োগ বাছাই কমিটির প্রধান উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ পুরোটা সময় অনুপস্থিত ছিলেন। তার অনুপস্থিতিতে নিয়োগ বাছাই কমিটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছে। কিন্তু নিয়োগ বাছাই কমিটির প্রধান উপাচার্য নিজে অনুপস্থিত থাকায় পুরো কার্যক্রমকে প্রহসন বলে উল্লেখ করেছে চাকরি প্রার্থীরা। তাদের অভিযোগ আসলে আগেই যাকে নেয়া হবে তার নাম চূড়ান্ত হবার কারণে কমিটির প্রধান অনুপস্থিত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল থেকে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীর বিভিন্ন নিয়োগ বাছাই পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষা প্রশাসনিক ভবনে হবার কথা থাকলেও পরে তা উপাচার্যের সুরক্ষিত বাংলোতে নিয়ে যাওয়া হয়। আজ ৫টি বিভাগে ১৫২ জন আবেদনকারীর বাছাই পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে এমএলএসএস পদে ৫০ জন সেমিনার সহকারী ৫০ জন ল্যাব এটেনডেন্ট ৫০ জন এবং আপগ্রেডেশন পদে একজন মেকানিক ও একজন ড্রাইভার অংশ নেয়।
উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ এক বছর আগে উপাচার্য হিসেবে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। রাষ্ট্রপতি কতৃক নিয়োগ লাভের সময় ৩টি শর্তে তাকে নিয়োগ দেয়া হয় এর মধ্যে অন্যতম শর্ত হচ্ছে তাকে সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে হবে। শর্ত মেনেই তিনি উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু গত এক বছরে তিনি মাত্র ৯৭ দিন ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলেন বাকীটা সময় ঢাকায় অবস্থান করেছেন। যে ৯৭ দিন তিনি ছিলেন সেটাও ঢাকা থেকে সকালে বিমানে এসে হয় ২/১ দিন অবস্থান করেছেন অথবা বিকেলেই ঢাকায় বিমানে ফিরে গেছেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তারপরেও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আগের মতোই আসা যাওয়া করছেন। সর্বশেষ গত ৩১ মে তিনি ঢাকা থেকে বিমানে ক্যাম্পাসে আসেন আবার বিকেলেই ঢাকায় ফিরে যান। এরপর দীর্ঘ এক মাস তিনি আর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি। এর মধ্যে ১৩ জুন কয়েক ঘণ্টার জন্য বিমানে করে তিনি ক্যাম্পাসে আসেন তার উপাচার্য হিসেবে এক বছর পূর্তি উপলক্ষে ক্যাম্পাসে শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে ফুলের শুভেচ্ছা গ্রহণ করে আবারও ঢাকায় ফিরে যান। এরপর দীর্ঘ ২০ দিন পর গতকাল ঢাকা থেকে বিমানযোগে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসেন। এসেই বিভিন্ন পদে নিয়োগ বাছাই কমিটির প্রধান হিসেবে প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ কার্যক্রম শুরু করে দিয়ে এক ঘণ্টার মতো অবস্থান করে দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্পাস ত্যাগ করে বিমানে করে আবারো ঢাকায় ফিরে যান।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক কর্মকর্তা জানান চতুর্থ শ্রেণীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োগ দেবার জন্য নিয়োগ বাছাই কমিটি গতকাল থেকে পরীক্ষা নেয়া শুরু করলেও কমিটির প্রধান হিসেবে উপাচার্য যদি অনুপস্থিত থাকেন তাহলে সেটা প্রহসনে পরিণত হতে বাধ্য। কারণ তার অনুপস্থিতি মানে যাদের নিয়োগ দেয়া হবে তা আগে থেকে চূড়ান্ত হয়ে গেছে। তা ছাড়া নিয়োগ দেয়া নিয়ে কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সার্বিক বিষয়ে নিয়োগ বাছাই কমিটির সদস্য সচিব বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ইবরাহিম কবীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিয়োগ বাছাই কমিটির পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবার কথা স্বীকার করে বলেন উপাচার্য কিছুক্ষণ থেকে তার ঢাকায় জরুরি কাজের কথা বলে চলে গেছেন। তিনি দাবি করেন একজন এক্সপার্ট ও একজন শিক্ষকসহ তিনিতো আছেন সমস্যা নেই। তবে উপাচার্য থাকলে ভালো হয় কিন্তু তিনি তো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য ঢাকায় থাকতে হয় এতে কোন সমস্যা তিনি দেখছেন না বলে জানান। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও জানান আরও ৩ দিন নিয়োগ বাছাই পরীক্ষা চলবে। বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেয়া হবে। উপাচার্যের দীর্ঘ অনুপস্থিতির বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে উপাচার্য কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ প্রতিনিধিকে জানান উপাচার্য স্যার বলেছেন তিনি উপাচার্য ছাড়াও জাতীয় অনেক দায়িত্ব তাকে পালন করতে হয় বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীও জানেন সে কারণে কোথায় কি রিপোর্ট ছাপা হলো তা দেখার সময় তার নেই।
সৌজন্যে: সংবাদ