পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে ভর্তির জন্য সারাদেশে একযোগে পরীক্ষার আয়োজন করা হবে। এ পরীক্ষা সকাল ও বিকাল-দুই বেলা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দিন সকালে বিজ্ঞান বিভাগের জীববিজ্ঞান, রসায়ন ও গণিত এবং চারুকলার চিত্রাঙ্কন পরীক্ষা বিকালে অনুষ্ঠিত হবে।
দ্বিতীয় দিন মানবিক ও ব্যবসায় বিভাগের ইংরেজি, বাংলা ও সাধারণ জ্ঞান পরীক্ষার আয়োজন করা হবে। ব্যবসায় বিভাগের জন্য অ্যাপটিটিউড (স্বাভাবিক জ্ঞান) বিষয়ের পরীক্ষা নেয়া হবে বিকালে।
এক একটি পরীক্ষার জন্য ১০ সেট প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হবে। সেখান থেকে লটারির মাধ্যমে একটি সেট নির্বাচন করে পরীক্ষা নেয়া হবে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একযোগে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করার এমন প্রস্তাবনা করেছে। বিষয়টি চূড়ান্ত করতে বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে আগামী সপ্তাহে আবারও বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে ইউজিসিতে। প্রস্তাবনায় না থাকলেও আবেদনে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় ও একাধিক বিষয় নির্বাচনের অপশন রাখার চিন্তা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুুন: সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিপক্ষে ঢাবি শিক্ষকের যত যুক্তি
ইউজিসির আয়োজনে ভর্তি পরীক্ষা হবে। পরীক্ষার জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা নির্দিষ্ট করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ের অপশন চেয়ে আবেদন আহ্বান করা হবে এবং প্রতিটি গুচ্ছের জন্য অপশনসহ মেরিট লিস্ট তৈরি করা হবে। শিক্ষার্থীদের দুই দিনের মধ্যে বিষয় ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণ করে সেন্ট্রাল মনিটিরিং কমিটিকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে জানাতে বলা হবে। ডিপার্টমেন্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত হলে ভর্তি শুরু হবে। ঢাকায় বড় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসংক্রান্ত বুথ তৈরি করা হবে যেখান থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ থাকবে।
ইউজিসির কর্মকর্তারা জানান, পরীক্ষা সমন্বিত হবে না গুচ্ছ- সেটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বিদ্যমান ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয় ৬ ধরনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এগুলো হচ্ছে : সাধারণ, কৃষি, প্রকৌশল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, মেডিকেল এবং বিশেষায়িত।
এর মধ্যে ১০টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৬টি, ১৫টি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় আর কৃষি ও কৃষি সম্পৃক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ৭টি, যেগুলোয় চলতি শিক্ষাবর্ষের ভর্তিতে পরীক্ষামূলকভাবে সমন্বিত পরীক্ষা নেয়া হয়।
এ ছাড়া মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ৪টি। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শিক্ষা ও গবেষণা হয়ে থাকে। বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আরও আছে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি, জাতীয় এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।
আরও পড়ুন: সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা : বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় প্রাপ্তিতে মেধাই ভিত্তি
খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার জন্য একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা হবে। ভর্তিচ্ছুরা ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে অনলাইনে আবেদন করবেন। তবে গুচ্ছ ভর্তির সিদ্ধান্ত হলে উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যে ভাগ করে আবেদন নেয়া হবে।
আলাদা পরীক্ষায় মেধাতালিকা অনুযায়ী নির্বাচিতদের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। ভর্তি সংক্রান্ত কাজের জন্য ঢাকায় বড় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অফিস খোলা হবে।
প্রস্তাবে পরীক্ষা আয়োজনের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ভর্তি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে মনিটরিং কমিটি গঠন করা হবে। কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান ইউজিসির সদস্য অথবা বড় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি থাকবেন। অন্য ভিসিরা সদস্য হিসেবে থাকবেন। সদস্য সচিব ভিসিদের মধ্য থেকে নির্বাচন করা হবে। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় কমিটিতে প্রশাসনিক এবং কারিগরি কমিটি গঠন করা হবে। ভর্তি প্রক্রিয়া শুরুর আগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসন সংখ্যা কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠানো হবে। তার ভিত্তিতে মেধাতালিকা তৈরি করা হবে।
উভয় কমিটির কয়েকজন সদস্য মিলে একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নপত্র তৈরি, ভিন্ন ভিন্ন গুচ্ছের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে আবেদনপত্র আহ্বান ও যাচাই-বাছাইকরণ, শিক্ষার্থীদের নামের পাশে কোড দেয়া, মেধাতালিকা তৈরি করবে।
এ ছাড়া স্থানীয় কমিটিতে খাতা দেখা এবং ফলাফল প্রক্রিয়ায় সাব-কমিটি গঠন করা হবে। কড়া নিরাপত্তার মাধ্যমে পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। পরীক্ষা গ্রহণের আগে এসব কমিটি গঠন করা হবে। অন্যদিকে স্থানীয় কমিটি পরীক্ষা নেয়া, খাতা মূল্যায়নে কোডিং, ফল প্রণয়ন প্রক্রিয়াকরণ ও তা যথাস্থানে পাঠানোর কাজ করবে।
ইউজিসির তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৪৬টি।