পাল্টে যাচ্ছে শিক্ষাক্রম

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শিক্ষাক্রমে আবারো পরিবর্তন আসছে। প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত চলমান শিক্ষাক্রমের ভুলত্রুটি সংশোধন, আন্তর্জাতিক মান ও সময়ের চাহিদা বিবেচনা করে এ পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। শিক্ষাক্রম পাল্টে গেলে স্বাভাবিকভাবে বইও বদলে যাবে। তবে একসঙ্গে সব শ্রেণিতে নতুন বই প্রবর্তন করা হবে না। ২০২১ সালে প্রথম, দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ শ্রেণি, ২০২২ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, সপ্তম, নবম ও একাদশ শ্রেণি এবং ২০২৩ সালে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে নতুন শিক্ষাক্রমের বই। প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে সর্বশেষ শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। এর আগে ১৯৯৫ ও ১৯৭৬ সালে আরো দুই বার শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয়। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন নিজামুল হক। 

সূত্র জানায়, শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই প্রণয়নে ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), রূপকল্প-২০৪১, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, আওয়ামী লীগের সর্বশেষ নির্বাচনী ইশতেহার বিবেচনায় আনা হচ্ছে। অন্যান্য দেশের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শিক্ষাক্রমগুলোও এবার বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। এনসিটিবির সদস্য (মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. মো. মশিউজ্জামান এ প্রসঙ্গে  বলেন, শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে। সারাদেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলোর এখন বিচার-বিশ্লেষণ চলছে। তথ্য অনুযায়ী, শিক্ষাক্রম পরিবর্তনে প্রথমে নিড অ্যাসেসমেন্ট করা হবে। এ লক্ষ্যে দেশের ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ইতোমধ্যে দেশের নয়টি শিক্ষা অঞ্চলের ১৮টি জেলার ৩৬টি উপজেলার দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এ তথ্যগুলো এখন বিশ্লেষণ করার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অগ্রসর, অনগ্রসর, দুর্গম অঞ্চলসহ সব বিবেচনায় আনা হয়েছে বলে জানান ড. মো. মশিউজ্জামান। এনসিটিবির বক্তব্য, বিশ্বে প্রতি ৫-৬ বছর পর পর শিক্ষাক্রম পর্যালোচনা ও পরিমার্জনের রেওয়াজ আছে। তারই অংশ হিসেবে আমরাও শিক্ষাক্রম পর্যালোচনার কাজ শুরু করেছি।

তবে ঘন ঘন পাঠ্যবই পরিবর্তনের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শিক্ষাবিদ ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর কারিকুলাম ভারি হয়ে যাচ্ছে। বই প্রণয়নে প্রয়োজনে ৫ বছর লাগুক। কিন্তু ভালো বই প্রণয়ন করতে হবে। যাতে ২০-৩০ বছরে আর বইয়ের পরিবর্তন আনার প্রয়োজন না হয়। তিনি আরো বলেন, আজকাল দেখা যায় বই বেশ মোটা। কিন্তু বইয়ে ম্যাটারিয়াল উন্নত নয়।

রফিকুল ইসলাম নামের এক অভিভাবকও বলেন, মাধ্যমিকের প্রতিটি শ্রেণিতে বইয়ের পৃষ্ঠা বেশি। এছাড়া সিলেবাসও কঠিন। সিলেবাস শেষ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা কোচিংমুখী হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। পাঠ্যবই সহজ করা এবং সিলেবাস কমানোর দাবি জানিয়েছেন এই অভিভাবক।

তবে অভিভাবকদের এই বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে শিক্ষাক্রম প্রণয়নের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ড. মো. মশিউজ্জামান বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী বছরে কত ঘণ্টা শ্রেণিকক্ষে সময় পায়, বছরে কতদিন ক্লাস হয় এবং প্রতি ক্লাসে কত মিনিট সময় পায়-সে হিসাবেই বইয়ের সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়। যে সব প্রতিষ্ঠানে বছরের দুই মাস ক্লাস হয় না তারা বইয়ের সিলেবাস শেষ করবে কি করে?’

উল্লেখ্য, বর্তমানে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ২৪টি পাঠ্যবই পড়ানো হয়। এছাড়া ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ১৩টি বই, নবম-দশম শ্রেণিতে ২৭টি বই ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে ৩৯টি পাঠ্যবই আছে।

বাধ্যতামূলক হচ্ছে বৃত্তিমূলক শিক্ষা

ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই বাধ্যতামূলক ভোকেশনাল (বৃত্তিমূলক) শিক্ষা চালু হতে যাচ্ছে দেশে। হাতে-কলমে শিক্ষা দিয়ে নতুন প্রজন্মকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে এই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির প্রতিটি শিক্ষার্থী গ্রহণ করবে এই প্রাক-বৃত্তিমূলক শিক্ষা। এছাড়া নবম-দশম শ্রেণির প্রত্যেক বিভাগের শিক্ষার্থীকেও নিতে হবে এই শিক্ষা।

পাশাপাশি বৃত্তিমূলক শিক্ষার বিস্তারে নতুন করে আরো ৬৪০টি প্রতিষ্ঠানে ভোকেশনাল শাখা খোলা হবে। বর্তমানে ১ হাজার ৯৯৩টি প্রতিষ্ঠানে এই শাখা চালু আছে। মাধ্যমিকে ভোকেশনাল শিক্ষা গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025579929351807