ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজপিছিয়ে গেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও, দুর্ভোগ এবার ফল পেতে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সাতটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত হয় ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। এরপর নানা কারণেই সেশনজটে পড়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও পিছিয়ে পড়েছে এ কলেজগুলো। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে চার বছরের সম্মান কোর্স নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করছে সেখানে এ সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রায় দেড় বছর পিছিয়ে থাকছেন। এ ছাড়া পরীক্ষার পর ফল প্রকাশে রয়েছে দীর্ঘসূত্রতা। অনেক বিভাগের ফল পেতে পেরিয়ে যায় ছয় মাসের বেশি সময়। সব মিলে শিক্ষাজীবনে সেশনজটের সম্মুখীন হচ্ছেন এসব কলেজের ছাত্রছাত্রী। শনিবার (২৯ জুন) বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আকতারুজ্জামান।

মিরপুরে সরকারি বাঙলা কলেজের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ডিগ্রি ছাত্র এহসানুল হক রুবেল বলেন, ‘দ্বিতীয় বর্ষেই আমাদের কেটে গেছে প্রায় দুই বছর। এরপর গত বছরের অক্টোবরে দ্বিতীয় বর্ষের লিখিত পরীক্ষা শেষ হলেও এ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়নি এখনো। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া আমাদের বন্ধুরা তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষাও শেষ করেছেন। অথচ আমরা দ্বিতীয় বর্ষেরই ফলাফল পেলাম না।’

সরকারি তিতুমীর কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের মনজুরুল ইসলাম জানান, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয়েছে গত বছরের ৫ ডিসেম্বর। এখন পর্যন্ত রেজাল্ট হয়নি। তিনি বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া আমাদের বন্ধুদের চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ। কিন্তু আমরা তৃতীয় বর্ষের রেজাল্টই পাইনি।’ ইডেন কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সামিরা খানম জানান, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সম্মান চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এরপর চার মাস পেরিয়ে গেলেও ফল প্রকাশ করা হয়নি। ফল প্রকাশ না করার কারণে কোনো চাকরির পরীক্ষায় আবেদন করতে পারছেন না তিনি। এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, একই শিক্ষাবর্ষে পড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তার বন্ধুবান্ধবীরা স্নাতক  শেষ করে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছেন।
সমাজবিজ্ঞান ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে পড়ুয়া ইডেন কলেজের এক ছাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের দ্বিতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা গত জানুয়ারিতে নির্ধারিত ছিল। কিন্তু হঠাৎ পিছিয়ে যায়। পরে ছয় মাস পিছিয়ে ২০ জুন এ পরীক্ষা ফের শুরু হয়েছে। এভাবেই শিক্ষাজীবন থেকে গুরুত্বপূর্ণ সময়, বছর চলে যাচ্ছে এসব কলেজে পড়ুয়ার।

অধিভুক্ত এসব কলেজে ফলাফল দেরিতে দেওয়ার পাশাপাশি ফল টানিয়ে তা আবার প্রত্যাহারেরও নজির রয়েছে। সরকারি তিতুমীর কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ গত ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ করেন। এর আগে তৃতীয় বর্ষের ফলাফলে একটি বিষয়ে খারাপ করলে মানোন্নয়ন পরীক্ষা দেন। গত মে মাসে তার মানোন্নয়নের ফলাফল প্রকাশিত হয়। অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন কাক্সিক্ষত ফল না পাওয়ার। এর দুই দিন পরই ফল সরিয়ে নেওয়া হয় ওয়েবসাইট থেকে। এরপর সংশোধিত ফলাফল এখনো প্রকাশ করেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

অধিভুক্ত এই সাত কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের গণহারে ফেল করানো হচ্ছে বলে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ ছাত্রছাত্রীদের। ফেল করার পর পুনর্মূল্যায়ন পরীক্ষা দিলেও তারা পরীক্ষা অনুযায়ী কাক্সিক্ষত রেজাল্ট পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ তাদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর প্রকাশিত কোনো কোনো শিক্ষাবর্ষের প্রায় ৮০ শতাংশ বা তার বেশি ফেল করেছেন। এসবের প্রতিবাদে রাস্তায় আন্দোলনও করেছেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি বলে মন্তব্য তাদের।

শিক্ষার্থীরা জানান, সরকারি তিতুমীর কলেজে ২০১২-১৩ সেশনের চতুর্থ বর্ষে পরীক্ষার্থী ছিলেন মোট ২২৫ জন। ফল প্রকাশের পর দেখা গেছে এর মধ্যে পাস করেছেন মাত্র ৩৫ জন। এমন চিত্র দেখা গেছে অন্য বিভাগেও। দর্শন বিভাগে ১৫০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৩৪ জন ফেল করেছিলেন বলে জানা গেছে। অন্যান্য কলেজের ছাত্রছাত্রীরাও অভিযোগ করেছেন গণহারে ফেল করানোর।

শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘সাত কলেজ অধিভুক্ত হওয়ার পর নানা ব্যবস্থা নিয়েছি। কলেজগুলোকে কিছু দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। যেসব ভোগান্তি, দুর্ভোগ, জট হয়েছে সেগুলো কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। আশা করছি ভবিষ্যতে এই সাত কলেজের ছাত্রছাত্রীদের আর ভোগান্তি পোহাতে হবে না।’

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সাতটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এগুলো হচ্ছে-  ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। অধিভুক্ত কলেজগুলোর ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি প্রক্রিয়া, পরীক্ষা, শিক্ষা কার্যক্রম এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিচালিত হচ্ছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025041103363037