পিপিই কী, কারা এবং কেন পরবেন, কোনটা সঠিক ও ঝুঁকিমুক্ত?

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মানুষের মৃত্যুর ঘটনার পর সম্প্রতি যে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে, তা হলো পিপিই। পিপিই-র পুরো মানে হলো পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট বা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম। বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন রায়হান মাসুদ।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, একদিকে চিকিৎসকরা অভিযোগ করেছেন যে তারা যথেষ্ঠ পরিমানে পিপিই পাচ্ছেন না, অন্যদিকে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাব বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যাংকে কর্মরত ব্যক্তি থেকে শুরু করে সরকারি দপ্তরের কর্মীদেরকেও পিপিই পরতে দেখা গেছে। আর এ নিয়ে বেশ সমালোচনাও হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার বলেছেন, যাদেরকে পিপিই পরতে দেখা যাবে, তাদেরকে চিকিৎসার কাজে পাঠিয়ে দেয়া হবে।

অর্থাৎ পিপিই মূলত ব্যবহার করেন ওইসব রোগের চিকিৎসার সঙ্গে জড়িতরা, যেখানে সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে পিপিই হিসেবে যা ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো ভাইরাস, বিশেষ করে অত্যন্ত ছোঁয়াচে করোনা ভাইরাস কতটা ঠেকাতে সক্ষম তা নিয়ে প্রশ্নও তোলা হচ্ছে।

কেন পিপিই?

কোনো ব্যক্তি যদি এমন কোনো জায়গায় কাজ করেন যেখানে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তাহলে তার জন্য পিপিই আবশ্যক। কারণ এক্ষেত্রে শুধু তিনিই সংক্রমিত হবেন না, বরং তার মাধ্যমে আরো অনেকেই সংক্রমিত হতে পারেন।

পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট অনেক ধরনের হতে পারে - তবে এটা নির্ভর করে কী ধরণের কাজে তা ব্যবহার করা হচ্ছে, তার ওপর। ছোঁয়াচে রোগের চিকিৎসা করেন এমন চিকিৎসকদের জন্য পিপিই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর একটা বড় কারণ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে যে প্রতি ১০ জন রোগীর মধ্যে একজন রোগী চিকিৎসকদের মাধ্যমেই সংক্রমিত হন।

অন্যদিকে, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীরাও রোগীদের মাধ্যমে আক্রান্ত হতে পারেন। ইতালিতে দেখা গেছে যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের অনেকেই স্বাস্থ্য কর্মী, যারা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে নিজেরাই আক্রান্ত হয়েছেন।

চিকিৎসা দিতে গিয়ে প্রায় সব দেশেই স্বাস্থ্য কর্মীদের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যথাযথ মাত্রায় সুরক্ষার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে সংক্রমণ প্রায় ৩০ ভাগ কমিয়ে আনা যেতে পারে। বৈশ্বিক এই প্রতিষ্ঠান দুটি তথ্যচিত্রের মাধ্যমে দেখিয়েছে যে পিপিই-তে কী থাকে এবং পিপিই কীভাবে পরিধান করতে ও খুলতে হয়।

পিপিই কীভাবে পড়তে হয় | ছবি : বিবিসি বাংলা

পিপিই-তে কী থাকে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, পর্যাপ্ত সুরক্ষার জন্য পিপিই-তে মোট পাঁচটি উপকরণ থাকতে হয়। এগুলো হলো -

  • গাউন
  • গ্লাভস
  • মুখের আবরণ (ফেস শিল্ড)
  • চোখ ঢাকার জন্য মুখের সাথে লেগে থাকে এমন চশমা, এবং
  • মাস্ক

একজন ব্যবহারকারীকে সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করে পিপিই পরতে এবং খুলতে হয়, কারণ এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই অনেক সময় পিপিই দূষিত হয়ে পড়তে পারে। এর মধ্যে মুখের আবরণটি তখনই আবশ্যক, যখন ভাইরাস বাতাসে ভেসে বেড়ায়।

যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস - যা এনএইচএস নামে পরিচিত, তারা বলছে যে করোনা ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার কারণে আগামী দিনগুলোতে দেশটিতে প্রচুর পিপিই প্রয়োজন হবে।

তাদের ওয়েবসাইটে পিপিই সম্পর্কে যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে যে করোনা ভাইসের জন্য যে পিপিই তৈরি করা হচ্ছে সেটি যাতে অবশ্যই মুখ, নাক ও চোখ রক্ষা করে। শ্বাস নেয়ার জায়গাও রাখতে হবে বলে নির্দেশনা দিয়েছে এনএইচএস।

যুক্তরাজ্যের এই স্বাস্থ্যসেবা সংস্থাটি করোনা ভাইরাসের জন্য পিপিই-তে নির্দিষ্ট করে চারটি উপকরণ রাখার কথা বলছে। এগুলো হলো -

  • সার্জিকাল মাস্ক
  • পুরো শরীর ঢাকে এমন অ্যাপ্রোন
  • গ্লাভস, এবং
  • চোখের জন্য সুরক্ষাকারী চশমা

তবে সব ক্ষেত্রে এমন পিপিই দরকার নেই, বরং সরাসরি স্বাস্থ্যসেবার সাথে জড়িত থাকলেই এ ধরণের পিপিই প্রয়োজন বলে মনে করছে এনএইচএস।

উদাহরণ হিসেবে এনএইচএস বলছে যে যদি আপনি সংক্রমণের সময় চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে সাথে জড়িত থাকেন কিন্তু আপনার কাজটি রোগীর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত নয়, তাহলে আপনার পুরো সেট প্রয়োজন নেই। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন সার্জিকাল মাস্ক এবং গ্লাভস।

পিপিই বানানোর উপকরণ

পিপিই ঠিক কোন কাপড়ের তৈরি হতে হবে, এমন কোনো সুনির্দিষ্ট ধারণা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও এনএইচএস-এর পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি। কিন্তু এনএইচএস বলছে, পিপিই তৈরিতে এমন কাপড় ব্যবহার করতে হবে, যা কোনোভাবেই তরল শুষে নেবে না। এটা এমন পদার্থে তৈরি হওয়া উচিৎ, যাতে তা কোনো ধরনের তরলকে ধারণ না করে এবং সেটা গড়িয়ে পরে যায়। অর্থাৎ পিপিই-কে সম্পূর্ণ শুষ্ক রাখবে, এমন পদার্থ ব্যবহার করাটাই এখানে গুরুত্বপূর্ণ।

এখানে আরও যে বিষয়টির দিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, তা হলো পিপিই নিয়মিত পরিবর্তন করা। একজন রোগীর একটি নির্দিষ্ট কাজের পরই পিপিই পরিবর্তন করার উপদেশ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এটি যাতে অতি অবশ্যই একবার ব্যবহার করে ফেলে দেয়া হয়।

বাংলাদেশে ব্যবহার করা পিপিই কতটা সুরক্ষা দিতে সক্ষম

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সের একজন মহামারি বিশেষজ্ঞ ড. প্রদীপ কুমার সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, পিপিইর কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। একেক রোগের পিপিই একেক রকম। আগে আমরা যেসব মহামারির কথা শুনেছি, তার সঙ্গে করোনা ভাইরাসের মিল নেই। আসলে কোনো সংক্রমকের সাথেই অন্য সংক্রমকের মিল নেই।

তিনি বলেন, সংক্রমণের মাত্রা এটা রোগ ও রোগের ভয়াবহতা অনুযায়ী বদল হয়, এবং সংক্রমণের উপায়ের ওপর নির্ভর করে এটা।

মি. সেনগুপ্ত বলেন, সরকারিভাবে যে পিপিই দেয়া হয়েছে, সেগুলো ৯০ থেকে ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত ভাইরাস ঠেকাতে সক্ষম। তবে ভাইরাস রোগীকে কতটা সংক্রমিত করেছে, কিংবা যে ডাক্তার রোগীর কাছে যাচ্ছেন তার নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা - সেটাও একটা ব্যাপার।

পিপিই সঠিক না হলে ঝুঁকি কতটা

এই মহামারি বিশেষজ্ঞ বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন সঠিকভাবে বানানো পিপিই ব্যবহারের উপর। তিনি বলেন, সঠিকভাবে যদি পিপিই না বানানো হয়, তাহলে ঝূঁকি এমনিই বেড়ে যায়। কারণ চিকিৎসকরা যদি না জানেন যে তিনি যেটা পরে আছেন সেটা ড্রপলেট দূরে রাখতে পারছে না, তাহলে তারাও ততটা কেয়ার করবেন না।

তিনি মনে করেন যে অনেক সময় না জেনে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ভাইরাস সুস্থ মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারেন। ডব্লিউএইচও যেভাবে পিপিই বানানোর পরামর্শ দিয়েছে, সেটিই শেষ কথা বলে মত দেন মি. সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, যুগ এগিয়েছে, পিপিই-ও এগিয়েছে। ডব্লিউএইচও যে পরামর্শ দিয়েছে, সেটা মেনেই তৈরি করা হচ্ছে চিকিৎসাকর্মীদের জন্য পিপিই।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031290054321289