প্রতিবাদী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যাপীড়নের মামলায় খেপে গিয়েছিলেন এডিসি এনামুল

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি যৌন নিপীড়নের ঘটনায় অধ্যক্ষ (বরখাস্ত) সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা করার পর ফেনীর দায়িত্বশীল চার পুলিশ কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেননি। এ কারণেই নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা এড়ানো যায়নি। হত্যার ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালানোরও চেষ্টা করে সিরাজের সহযোগীরা।

প্রশাসনের পাঁচ কর্মকর্তা তখন এমন কাজ করেন এবং কথা বলেন, যার ফলে অভিযুক্তরা ঘটনা ধামাচাপার অপচেষ্টায় সুবিধা পায়। পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদনে ওই সব তথ্য উঠে এসেছে। শুক্রবার (০৩ এপ্রিল) দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন  এস এম আজাদ।

প্রতিবেদন মতে, মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতির পদে থেকেও ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পি কে এম এনামুল করিম এনামুল কার্যকর ব্যবস্থা নেননি। ঘটনার তদন্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে মামলা করায় উল্টো তিনি খেপে যান নুসরাতের পরিবারের ওপর। প্রশাসনের পাঁচ কর্মকর্তা কার্যকর ব্যবস্থা নিলে নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা এড়ানো যেত। 

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাতে দাখিল করা ওই প্রতিবেদনে ফেনীর পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, অ্যাডিশনাল এসপি রবিউল ইসলাম, ফেনীর এডিসি (রাজস্ব) পি কে এম এনামুল করিম, সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগে করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইকবাল হোসেনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নিপীড়নের মামলা করার পর আসামি সিরাজকে রক্ষার চেষ্টা করেন ওসি মোয়াজ্জেম। নুসরাত হত্যার পর তিনি আত্মহত্যা বলে প্রচার করেন।

এসপি জাহাঙ্গীর ঘটনার তদন্তে কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়ে ওসির মতোই আত্মহত্যার তথ্য দেন। অভিযোগ ওঠার পর তিনি ওসি মোয়াজ্জেমকে রক্ষার চেষ্টা করেন। সার্কেলের দায়িত্বে থাকা অ্যাডিশনাল এসপি রবিউল ইসলামও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেননি। নুসরাতের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেননি মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ইকবাল। এমনকি ঘটনার তদন্তেও অবহেলা করেন তিনি।

পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২৭ মার্চ নুসরাতকে যৌন হয়রানির ঘটনাকে সোনাগাজীর ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন সাজানো নাটক বলেছিলেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। ৬ এপ্রিল নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনাকে বলেন আত্মহত্যার চেষ্টা। আর ফেনীর এসপি এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার যৌন নিপীড়নের ঘটনার পর কোনো পদক্ষেপই নেননি। নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার পরও তিনি ঘটনাস্থলে যাননি। ঘটনার দিন পুলিশ সদর দপ্তরে

মৌখিকভাবে আত্মহত্যার চেষ্টা বলে বার্তা দেন এসপি। ঘটনাস্থলে যান চার দিন পরে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির সঙ্গে। এসপি জাহাঙ্গীর ১১ এপ্রিল পুলিশ সদর দপ্তর, বিশেষ শাখা ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির দপ্তরে পাঠানো এক চিঠিতে ঘটনার যে বিবরণ দেন, তাতে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার কোনো কথাই লেখেননি। তিনি জানান, ওই ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে পরিবারকে বারবার অনুরোধ করা হলেও তারা মামলা করতে কালক্ষেপণ করে।

প্রতিবেদন মতে, ওসিকে প্রত্যাহার করতেও নারাজ ছিলেন এসপি। তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘প্রত্যাহার নয়, বদলি।’ রাফিকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় কার্যকর ব্যবস্থা নেননি সোনাগাজী সার্কেলের দায়িত্বে থাকা অ্যাডিশনাল এসপি রবিউল ইসলাম। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইকবালকে রাফির ভাই ও বাবা নিরাপত্তা জোরদার করতে বলেছিলেন। তিনি বিষয়টি আমলেই নেননি। পি কে এম এনামুল করিম মাদরাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি হয়েও ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেননি। রাফির স্বজনরা তাঁর কাছে গেলে মামলা করার কারণে উল্টো তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। 

তদন্ত কমিটির প্রধান ডিআইজি (মানবসম্পদ) এস এম রুহুল আমিন বলেন, ‘পুলিশের যা যা করার কথা ছিল, সেটা ঠিকমতো করেছে কি না, সেটা পুলিশ ও নুসরাত জাহান রাফির পরিবারসহ স্থানীয়দের জবানবন্দিতে খতিয়ে দেখা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে, তাদের ব্যাপারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে আমরা সুপারিশ করেছি।’

রাফির ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, ‘তদন্ত কমিটিকে আমরা পুলিশ প্রশাসন যা যা করেছে তার সব কিছু বলেছি। এসপির চিঠির কথা আমরা শুনেছি, সেটাতে তো মনে হয় আমার বোন নিজে ছাদে গিয়ে মরেছে। ৮ তারিখে পুলিশ একটা মামলা সাজিয়ে আমাদের কাছে ঢাকায় পাঠায়। সেখানেও অনেক কিছু গোপন করা হয়। আমরা নাম বললেও সন্দেহভাজনদের নাম তখন লেখা হয়নি।’

নুসরাতকে নিপীড়নের ঘটনায় তার মায়ের করা মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজকে ২৭ মার্চ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল পরীক্ষা দিতে মাদরাসাকেন্দ্রে গেলে তাকে কৌশলে ছাদে ডেকে নিয়ে যায় সিরাজের আত্মীয় ও সহযোগীরা। সেখানে চারজন মিলে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যায় নুসরাত। ওই ঘটনায় ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে থানার পুলিশ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত - dainik shiksha ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল - dainik shiksha শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে - dainik shiksha ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল - dainik shiksha ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0058810710906982