বই মানুষের পরম বন্ধু। পরম এ বন্ধু বইকে আগলে রাখার ও তা মানুষের কল্যাণে ব্যবহারের অনন্য নজির স্থাপন করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোসাম্মৎ হোসনে আরা ও তার পরিবার। তার নিজের এবং সন্তানদের শিক্ষা জীবনে ব্যবহৃত জমিয়ে রাখা বইয়ের সংখ্যা প্রায় তিন শতাধিক। গত ১৭ নবেম্বর জমিয়ে রাখা বইগুলো খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলে দান করেছেন তিনি। এর মধ্যে একাডেমিক বইয়ের পাশাপাশি ডিকশনারি, আইইএলটিএস, আইন এবং কম্পিউটার সম্পর্কিত বই রয়েছে। রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র বাংলাদেশে সংগঠিত গণহত্যা ও নির্যাতনের সচিত্র বিবরণ সংবলিত বই ‘১৯৭১ গণহত্যা-নির্যাতন।’ কোন কোন বইয়ের বয়স পেরিয়েছে তিন দশকের গণ্ডি। রোববার (২২ ডিসেম্বর) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মো. শফিকুল ইসলাম।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, বই সংগ্রহের এই উদ্যোগের কথা জানতে চাইলে ড. মোসাম্মৎ হোসনে আরা অনুযোগের সুরে বলেন, শিক্ষা জীবনের শুরু থেকে আমৃত্যু জ্ঞান আহরণে আমরা একাডেমিক বইয়ের পাশাপাশি নানাবিধ বই পড়ে থাকি। সময়ের পরিক্রমায় অযত্ন আর অবহেলায় কখনও উইপোকার আক্রমণ কখনও মনের অজান্তেই জীবন থেকে হারিয়ে যায় এসব মূল্যবান বই। যার অন্যতম কারণ বই সংরক্ষণে উদাসীনতা। অথচ যথাযথভাবে সংরক্ষণ করলে বইগুলোর মাধ্যমে অসংখ্য অসচ্ছল শিক্ষার্থীর বইয়ের চাহিদা পূরণ সম্ভব।
দীর্ঘদিনের পরিচিত বইগুলো দিয়ে দিতে তার কোন আক্ষেপ নেই, নেই কোনো দোটানা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে জ্ঞানে-গুণে ও শিক্ষায় এগিয়ে নিতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা যদি ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও এ কার্যক্রমের সঙ্গে শামিল হয়; তাহলে সরকারের কাজ অনেকটা সহজ হয়ে যায়। বইয়ের অভাবে কেউ জ্ঞানবিমুখ হবে না।’ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০১০ থেকে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকে ২৬০ কোটি ৮৬ লাখ ৯১ হাজার ২৯০ কপি বই বিনামূল্যে বিতরণ করেছে সরকার।
তিনি সকলকে বই সংরক্ষণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা জ্ঞান আহরণ শেষে বইগুলো অন্যের হাতে তুলে দেয়ার মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তুলে পারি।
বই পেয়ে উচ্ছ্বসিত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা। এ স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার অসচ্ছল পরিবারের সন্তান। লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজনীয় গাইডবই কেনার সামর্থ্য নেই অনেকের। স্কুলের গণিতের সহকারী শিক্ষিকা রীতা মজুমদার বলেন, প্রাপ্ত বইগুলো আমাদের অনেক অসচ্ছল শিক্ষার্থীর উপকারে আসবে। এ ছাড়া কিছু দুষ্প্রাপ্য বই রয়েছে। যা আমাদের কাছে সম্পদ হয়ে থাকবে।