পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় মামলার প্রথম রায় : ৩ পুলিশের যাবজ্জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ইশতিয়াক হোসেন জনি হত্যা মামলায় রাজধানীর পল্লবী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান জাহিদ, সহাকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রাশেদুল ও কামরুজ্জামান মিন্টুসহ তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া পুলিশের দুই সোর্স সুমন ও রাশেদকে সাত বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। এটিই দেশে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় মামলার প্রথম রায়। 

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ আজ বুধবার এ আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) তাপস কুমার পাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ইশতিয়াক হোসেন জনি। ছবি সংগ্রহীত

তাপস কুমার পাল বলেন, ‘আজ দুপুরে রায় ঘোষণার সময় আসামিদের আদালতে আনা হলেও এজলাসে তোলা হয়নি। দুপুরে বিচারক রায় ঘোষণা করেন।’

তাপস কুমার পাল আরো বলেন, ‘এ মামলায় পল্লবী থানার সাবেক এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদ, এএসআই রাশেদুল ও কামরুজ্জামান মিন্টুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা দিতে ব্যর্থ হলে আরো ছয় মাস অতিরিক্ত কারাভোগের নির্দেশ দেন আদালত।’

তাপস কুমার পাল আরো বলেন, ‘এ ছাড়া এ মামলায় পুলিশের সোর্স সুমন ও রাশেদকে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।’

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৪ এ ৭ আগস্ট তৎকালীন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জহুরুল হকের আদালতে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ এনে নিহত জনির ছোট ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে একটি নালিশি মামলা করেন। পরে বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।

নির্দেশ অনুযায়ী, ঢাকা মহানগর হাকিম মারুফ হোসেন এ মামলার তদন্ত শেষ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ২০১৫ এর ১৭ ফেব্রুয়ারি পাঁচজনকে অভিযুক্ত ও পাঁচজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্তকালে পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রাশেদুল ও কামরুজ্জামান মিন্টুকে নতুন করে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

অব্যাহতির সুপারিশ করা পাঁচ আসামি হলেন—পল্লবী থানার ওসি জিয়াউর রহমান, এসআই আবদুল বাতেন, রাশেদ ও শোভন কুমার সাহা ও কনস্টেবল নজরুল।

অন্যদিকে অভিযুক্ত পাঁচ আসামি হলেন—পল্লবী থানার এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদ, এএসআই রাশেদুল ও কামরুজ্জামান মিন্টু, সোর্স সুমন ও রাশেদ।

এ প্রতিবেদন ২০১৫ এ ১৩ জুলাই ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা আমলে নিয়ে পল্লবী থানার এএসআই রাশেদুল ও কামরুজ্জামান মিন্টু, পুলিশের সোর্স সুমন ও রাশেদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১৪ তে ৮ ফেব্রুয়ারি মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনে জনির প্রতিবেশী সাদেকের ছেলের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান চলাকালে পুলিশের সোর্স সুমন অনুষ্ঠানে মেয়েদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এ সময় জনি ও তার ভাই পুলিশের সোর্স সুমনকে চলে যেতে অনুরোধ করেন। সোর্স সুমন ওই দিন চলে গেলেও পরদিন এসে আবার আগের মতো আচরণ করতে থাকেন। তখন জনি ও তার ভাই তাকে আবারও চলে যেতে বললে সোর্স সুমন পুলিশকে ফোন করে তাদের ধরে নিয়ে যেতে বলেন।

দুই ভাইকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় এলাকার লোকজন পুলিশকে ধাওয়া দিলে পুলিশ পাল্টা গুলি ছুড়তে থাকে।
জনি ও তার ভাইকে থানায় নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। পরে তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ। জনির অবস্থা খারাপ হলে তাকে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আরো খারাপ হলে জনির মা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0055480003356934