পূর্বাচলে ঢাবি ক্যাম্পাসের জন্য ৫২ একর জমি দিচ্ছে সরকার

বিভাষ বাড়ৈ |

দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণে পূর্বাচলে ৫২ একর জায়গা প্রদানে সম্মতি দিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। চলতি মাসেই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) জমির বরাদ্দপত্র পাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আবদুর রহমান বলেছেন, কাজের অবস্থা অত্যন্ত পজেটিভ। আমরাও চাই আমাদের পূর্বাচলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠুক। এদিকে নতুন জমির খবরে খুশি শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, ক্রমশ ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং শিক্ষার পরিধি বিস্তারের ফলে নানা সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাসের জন্য নতুন জায়গা পাওয়া গেলে তা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি মাইলফলক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর অদূরে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৫২ একর জায়গাজুড়ে হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুুনিক একাডেমিক অবকাঠামোসম্পন্ন দ্বিতীয় ক্যাম্পাস। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বাধুনিক আবাসিক সুবিধা নিয়ে এ ক্যাম্পাসে পরিচালিত হবে পূর্ণাঙ্গ মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টিসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম। স্থানান্তর হতে পারে ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টি ও বিভাগের কার্যক্রমও। ১৯২১ সালে ৬৪০ একর জমি নিয়ে যাত্রা শুরু করে আজ মাত্র ৩০০ একর জায়গা অবশিষ্ট থাকায় অবকাঠামোসহ নানা সঙ্কটে রীতিমতো ধুঁকছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। রাজউক ইতোমধ্যেই ৫২ একর জমি দেয়ার বিষয়ে আগেই সম্মতি দিয়েছিল। রাজউকের চিঠির প্রেক্ষিতে বিধি অনুসারে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা বলেছেন, রাজউকের চিঠির প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। এখন রাজউক বোর্ডের অনুমোদন দিয়ে মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠালেই দ্রুত অনুমোদন দেয়া হবে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই বরাদ্দপত্র বিশ্ববিদ্যালয়কে দেয়া হবে উল্লেখ করে রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আবদুর রহমান বলেছেন, চলতি মাসেই এসব প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের পরিধি যেমন বেড়েছে তেমনি কমেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব জমি। ৬৪০ একর থেকে আজ আছে মাত্র ৩০০ একর। অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার আশানুরূপ অগ্রগতি করতে পারছে না, এটা হলো বাস্তবতা। এমন এক পরিস্থিতিতে নতুন করে ৫২ একর জমি; অনেক বড় একটা পাওয়া হবে। ২০২১ সালের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা একাডেমিক ও অবকাঠামোগতভাবে বিশ্বের আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করতে চাই। পূর্বাচলে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুুনিক একাডেমিক অবকাঠামোসম্পন্ন ক্যাম্পাস। সর্বাধুনিক আবাসিক সুবিধা নিয়ে এ ক্যাম্পাসে পরিচালিত হবে পূর্ণাঙ্গ মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টিসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম। মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টির জন্য হবে আধুনিক হাসপাতাল। যদি জায়গা সংকুলান হয় তবে সেখানে স্থানান্তর হতে পারে ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকল্টি ও বিভাগের কার্যক্রমও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সব সময়েই অভিযোগ করে আসছেন, বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রমের বিস্তৃতির বিপরীতে অবকাঠামো বাড়ার পরিবর্তে ক্রমেই কমেছে। ফলে আজ হাজার হাজার ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়ে রীতিমতো ধুঁকছে বিশ্ববিদ্যালয়, যার আছে কয়েক শ’ বিভাগ ও ইনস্টিটিউট ও প্রতিষ্ঠান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিধি ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। ভয়াবহ জমি সঙ্কটে পড়েছে দেশের গৌরবোজ্জ্বল প্রতিষ্ঠানটি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, নতুন জমি হলে তা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বড় একটি পাওয়া। যা অনেক সমস্যার সমাধান দেবে। সরকারের নতুন জায়গা প্রদানের উদ্যোগের খবরে খুশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তিলোত্তমা সিকদার সন্তোষ প্রকাশ করে বলছিলেন, সময় যত যাচ্ছে ততই ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধির চাপ বাড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর। প্রতিষ্ঠার সময় যে জায়গা ছিল এখন তার অর্ধেকই বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে নেই। অথচ এই সময়ে শিক্ষার পরিধি বেড়েছে বহুগুণ। এ অবস্থায় ক্যাম্পাসের জন্য নতুন জায়গা পাওয়া গেলে তা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিরাট একটা পাওয়া। কারণ এই জায়গা পাওয়া নিয়ে ইতোপূর্বে বহু খবর এসেছে। কিন্তু এবার সেটি দৃশ্যমান হচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।

ম্যানেজমেন্ট এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নোটন সরকার খুশি নতুন জায়গা পাওয়ার খবরে। তিনি বলছিলেন, নতুন জায়গা হলে আবাসন সংকটের একটা সমাধান হবে। সমাধান হবে অবকাঠামো অন্যান্য কিছু সংকটেরও। কারন অবকাঠামো সংকট আজ এমন পর্যায়ে গেছে যে, ক্যাম্পাসে এখন প্রয়োজনীয় কোন ভবন করতে চাইলেও জায়গা পাওয়া যায়না। পূর্বাচলে নতুন জায়গার খবর আমাদের জন্য অত্যন্ত ভাল একটি খবর।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরানের মতে, দিন দিন জায়গা হারিয়ে ক্যাম্পাসের পরিবেশ ঘিঞ্জি করে তোলা হয়েছে। বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারের বিষয়ে বিভিন্ন সরকারের সময়ে কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা কামনা করেছেন। কতটুকু জমি বেদখল হয়েছে তার হিসাবও হয়েছে বিভিন্ন সময়। কিন্তু অগ্রগতি তেমন হয়নি কখনই। এবার ৫২ একর জায়গা পাওয়ার বিষয়টি কাছাকাছি চলে এসেছে বলেই মনে হচ্ছে। নতুন জায়গা হলে বেশ কিছু সমস্যার সমাধান হবে বলেই আশা এ শিক্ষার্থীর।

পূর্বাচলে নতুন জায়গা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ কমাবে বলে মনে করছেন দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী জামাল হোসেন। বলছিলেন, পূর্বাচলে নতুন জায়গা হবে-এটা আমাদের জন্য বড় একটা খবর। কারণ বছরের পর বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর শিক্ষার চাপ বেড়েছে কিন্তু অবকাঠামো বাড়ার পরিবর্তে কমেছে। তাই নতুন জায়গার খবর আমাদের জন্য অনেক বড় একটি খবর।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী জিনাত শারমিন বলছিলেন, আমি নিজেই আবাসন সঙ্কটের কারণে হলে সিট পাইনি প্রথম বর্ষে। কিন্তু একজন শিক্ষার্থীর জন্য এটা যে কত বড় একটা সমস্যা তা আসলে বলে বোঝানো যাবে না। পূর্বাচলে নতুন জায়গা তাই আমাদের জন্য অনেক বড় একটা বিষয়। তবে আমার চাওয়া, নতুন এ ক্যাস্পাস যে শিক্ষার্থীবান্ধব হয়।

জানা গেছে, ১২টি বিভাগে ৮৭৭ ছাত্র এবং ৬০ শিক্ষক নিয়ে ১৯২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু হয়েছিল। প্রায় ১০০ বছর হতে চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষক আছেন এক হাজার ৭০০। ছাত্রছাত্রী ৩৪ হাজার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০ গুণ এবং শিক্ষকের সংখ্যা ২৫ গুণ বেড়েছে। কিন্তু কমে গেছে জমির পরিমাণ।

এমন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান বলছিলেন, প্রায় সাড়ে তিন শ’ একর জমি হাতছাড়া হয়েছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে। বর্তমান মিন্টো রোড এবং হেয়ার রোডের লাল বাংলোগুলো ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বসবাস করতেন। পাকিস্তান আমল মূলত ১৯৪৭ সালের পর থেকেই জমি হাতছাড়া হতে থাকে। এসব বলে তো এখন লাভ নেই। এখন আমরা আশা করছি, পূর্বাচলে নতুন জমিটা পেলে আমাদের বিশাল একটা কাজ হবে। আমরা অপেক্ষা করছি। শীঘ্রই আমরা বরাদ্দপত্র পাব বলে আশা করছি।

 

সৌজন্যে: জনকণ্ঠ


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0061230659484863