পূর্বাচলে ঢাবি পেল ৫২ একর জমি, হবে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস

বিভাষ বাড়ৈ/মুনতাসির জিহাদ |

দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের পথে আরও একধাপ এগিয়ে গেল দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণে পূর্বাচলে প্রায় ৫২ একর জায়গার বরাদ্দপত্র দিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। বরাদ্দপত্র অনুসারে অর্থ সমন্বয়ের জন্য ইতোমধ্যেই সরকারের কাছে আবেদনপত্রও দিয়েছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। ফলে ১৯২১ সালে ৬৪০ একর জমি নিয়ে যাত্রা শুরু করে আজ মাত্র ৩শ’ একর জায়গা থাকায় নানা সঙ্কটে পড়া এ বিশ্ববিদ্যালয় নতুন করে আশার আলো দেখছে। নতুন জমির খবরে খুশি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিধি ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। ভয়াবহ জমি সঙ্কটে পড়েছে দেশের গৌরবোজ্জ্বল এই প্রতিষ্ঠানটি। বারোটি বিভাগে ৮৭৭ ছাত্র এবং ৬০ শিক্ষক নিয়ে ১৯২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু। প্রায় ১০০ বছর হতে চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষক এক হাজার ৭শ’। ছাত্রছাত্রী প্রায় ৩৪ হাজার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০ গুণ এবং শিক্ষকের সংখ্যা ২৫ গুণ বেড়েছে। কিন্তু কমে গেছে জায়গার পরিমাণ। এ অবস্থায় নতুন জায়গায় আশার আলো দেখছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, ’২১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের পরিধি যেমন বেড়েছে তেমনি কমেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব জমি। ৬৪০ একর থেকে এখন মাত্র ৩শ’ একর। অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার আশানুরূপ অগ্রগতি করতে পারছে না এটাই হলো বাস্তবতা। এমন পরিস্থিতিতে প্রায় ৫২ একর নতুন জমি অনেক বড় একটি পাওয়া। আমরা বরাদ্দপত্র পেয়েছি। সরকারের কাছে অর্থ সমন্বয়ের জন্য চিঠিও দিয়েছি। ২০২১ সালের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা একাডেমিক, গবেষণা ও অবকাঠামোগতভাবে বিশ্বের আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপান্তর করতে চাই।

ঢাবি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর অদূরে নতুন প্রকল্প শহর পূর্বাচলে ৫২ একর জায়গাজুড়ে হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুুনিক একাডেমিক অবকাঠামো সম্পন্ন দ্বিতীয় ক্যাম্পাস। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বাধুনিক আবাসিক সুবিধা নিয়ে এ ক্যাম্পাসে পরিচালিত হবে পূর্ণাঙ্গ মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টিসহ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম। স্থানান্তর হতে পারে ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টি ও বিভাগের কার্যক্রমও। ১৯২১ সালে ৬৪০ একর জমি নিয়ে যাত্রা শুরু করে আজ মাত্র ৩শ’ একর জায়গা অবশিষ্ট থাকায় অবকাঠামোসহ নানা সঙ্কটে রীতিমতো ধুঁকছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জমি পাওয়ার আবেদনে রাজউক আগেই ৫২ একর জমি দেয়ার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছিল। রাজউকের চিঠির প্রেক্ষিতে বিধি অনুসারে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে সম্মতি দেয় মন্ত্রণালয়। এরপর রাজউক বোর্ডের অনুমোদন দিয়ে মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠালে দ্রুতই অনুমোদন দেয়া হয়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর বরাদ্দপত্র বিশ্ববিদ্যালয়কে দেয়া হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান বলছিলেন, প্রায় সাড়ে তিন শ’ একর জমি হাতছাড়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই। বর্তমান মিন্টো রোড ও হেয়ার রোডের লাল বাংলোগুলো ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে, যেগুলোয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বসবাস করতেন। পাকিস্তান আমল, বিশেষ করে ১৯৪৭ সালের পর থেকেই জমি হাতছাড়া হতে থাকে। এসব বলেও তো এখন লাভ নেই। এখন আশা করছি পূর্বাচলে নতুন জমিটা পেলে আমাদের বিশাল একটা কাজ হবে। আমরা অপেক্ষা করছি।

পূর্বাচলে জমি পেলে সেখানে ক্যাম্পাসের কার্যক্রম বিস্তৃত করার পরিকল্পনা সম্পর্কে উপাচার্য বলেন, পূর্বাচলে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুুনিক একাডেমিক অবকাঠামো সম্পন্ন ক্যাম্পাস। সর্বাধুনিক আবাসিক সুবিধা নিয়ে এ ক্যাম্পাসে পরিচালিত হবে পূর্ণাঙ্গ মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টিসহ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম। মেডিক্যাল ফ্যাকল্টির জন্য হবে আধুনিক হাসপাতাল। যদি জায়গা সংকুলান হয় তবে সেখানে স্থানান্তর হতে পারে ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টি ও বিভাগের কার্যক্রমও।

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামাদ বলছিলেন, আমরা জমির বরাদ্দপত্র পেয়েছি। এখনও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা হয়নি তবে একটি আন্তর্জাতিক মানের মেডিক্যাল ও মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি নতুন জায়গায় আমরা করতে চাই। একটি আন্তর্জাতিক মানের কৃষি অনুষদও আমাদের পরিকল্পনায় আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সব সময়েই অভিযোগ করে আসছেন বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রমের বিস্তৃতির বিপরীতে অবকাঠামো বাড়ার বদলে ক্রমেই কমেছে। ফলে আজ হাজার হাজার ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে রীতিমতো ধুঁকছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যার আছে কয়েক শ’ বিভাগ ইনস্টিটিউট। নতুন জমির খবরে তাই খুশি শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, ক্যাম্পাসের জন্য নতুন জায়গা পাওয়া গেলে তা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি মাইলফলক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তিলোত্তমা সিকদার সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, নতুন জমি হলে তা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বড় একটি পাওয়া। এতে অনেক সমস্যার সমাধান দেবে। কারণ সময় যতই যাচ্ছে ততই ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধির চাপ বাড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর। প্রতিষ্ঠার সময় যে জায়গা ছিল এখন তার অর্ধেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে নেই। অথচ এই সময়ে শিক্ষার পরিধি বেড়েছে বহুগুণ। এ অবস্থায় ক্যাম্পাসের জন্য নতুন জায়গা পাওয়া গেলে তা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিরাট একটা পাওয়া।

নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর হাসান সৈকত খুশি নতুন জায়গা পাওয়ার খবরে। তিনি বলেন, নতুন জায়গা হলে আবাসন সঙ্কটের একটা সমাধান হবে। সমাধান হবে অবকাঠামো ও অন্যান্য কিছু সঙ্কটেরও। কারণ অবকাঠামো সঙ্কট আজ এমন পর্যায়ে গেছে যে ক্যাম্পাসে এখন প্রয়োজনীয় কোন ভবন করতে চাইলেও জায়গা পাওয়া যায় না। পূর্বাচলে নতুন জায়গার খবর আমাদের জন্য অত্যন্ত ভাল একটি খবর।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরানের মতে, দিনে দিনে জায়গা হারিয়ে ক্যাম্পাসের পরিবেশ ঘিঞ্জি করে তোলা হয়েছে। বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারের বিষয়ে বিভিন্ন সরকারের আমলে কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা কামনা করেছেন। কতটুকু জমি বেদখল হয়েছে তার হিসাবও হয়েছে বিভিন্ন সময়। কিন্তু অগ্রগতি তেমন হয়নি কখনোই। তবে এবার নতুন জায়গা পাওয়ায় আশার সঞ্চার হয়েছে। নতুন জায়গা হলে বেশ কিছু সমস্যার সমাধান হবে।

ইতিহাস বিভাগের ছাত্র আব্দুল আজিজ বলেন, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সঙ্গে ৫০ একরের বেশি জায়গা যুক্ত হওয়া অত্যন্ত গৌরবের। ঢাবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বর্তমান ক্যাম্পাসে চাপ কমে যাবে। এখানে যে অবকাঠামো গড়ে উঠেছে তাতে আর দ্বিতীয় ক্যাম্পাস অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। আবু ইয়াসীন বলেন, পূর্বাচলে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস স্থাপনের ফলে বর্তমান ক্যাম্পাসে অবকাঠামোগত চাপ কমে যাবে। ঢাবির শতবর্ষ উদযাপনে প্রায় ৫১ একর যুক্ত হওয়া যেন আমাদের আনন্দ আরও বাড়িয়ে দেয়।

ম্যানেজমেন্ট এ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নোটন সরকার খুশি নতুন জায়গা পাওয়ার খবরে। তিনি বলেন, নতুন জায়গা হলে আবাসন সঙ্কটের একটা সমাধান হবে। সমাধান হবে অবকাঠামোও অন্যান্য কিছু সঙ্কটেরও। পূর্বাচলে নতুন জায়গার খবর আমাদের জন্য অত্যন্ত ভাল একটি খবর। কারণ বছরের পর বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর শিক্ষার চাপ বেড়েছে কিন্তু অবকাঠামো বাড়ার পরিবর্তে কমেছে। তাই নতুন জায়গার খবর আমাদের জন্য অনেক বড় একটি খবর। তবে আমার চাওয়া নতুন এ ক্যাম্পাস যেন শিক্ষার্থীবান্ধব হয়।

 

 

সৌজন্যে: জনকণ্ঠ


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002669095993042