চাকরিতে নিয়োগসহ ছয় দফা দাবিতে রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউ রাস্তায় আমরণ অনশনে নেমেছে প্রতিবন্ধীরা। বুধবার সকাল ৯টা থেকে অনশনরত প্রতিবন্ধীরা এ সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।
এর আগে গত ৭ জুলাই থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটদের মাসিক ১০ হাজার টাকা বেকার ভাতা প্রদান, বিশেষ ব্যবস্থায় নিয়োগসহ ৬ দফা দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তিন দিন অবস্থান ধর্মঘট পালন করছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটরা। এ ছাড়া জটিলতা নিরসনে জাতীয় সংসদে প্রস্তাব উত্থাপনের জন্য ৩৪৯ জন সংসদ সদস্যের কাছে লিখিত সুপারিশ করেছেন তাঁরা।
‘জেগেছে রে জেগেছে প্রতিবন্ধীরা জেগেছে’, ‘দাবি পূরণ না হলে ঘরে ফিরে যাব না’, ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ ইত্যাদি মুহুর্মুহু স্লোগানে এখন মুখরিত মানিক মিয়া এভিনিউ উত্তর পাশের রাস্তা। এ সময় শত শত ছোট বড় বাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, জিপ গাড়ি, মোটরসাইকেল ও রিকশা থমকে দাঁড়িয়ে থাকে। কর্তব্যরত পুলিশ অফিসাররাও ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবি মধ্যে রয়েছে, স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর চাকরিতে যোগদান করার আগ পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা করে গ্র্যাজুয়েট দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের মাসিক বেকার ভাতা প্রদান, নবম থেকে ২০তম গ্রেডভুক্ত সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা সরকারি, বেসরকারি চাকরিতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিশেষ ব্যবস্থায় নিয়োগ, গত ১৭ এপ্রিল সরকারি কর্ম কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত দশম গ্রেডভুক্ত রিসোর্স শিক্ষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল এবং এসব পদে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ব্রেইল পদ্ধতিতে পাঠদানের জন্য উপযুক্ত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের ব্যক্তিদের নিয়োগ প্রদান, সরকারি-বেসরকারি চাকরি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রুতিলেখক নীতিমালা মেনে চলার নিশ্চয়তা প্রদান, বিশেষ ব্যবস্থায় চাকরির সুযোগ প্রদানের প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের প্রেক্ষিতে প্রতিবছর একবার বিশেষ ব্যবস্থায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সরকারি-বেসরকারি চাকরির নিয়োগ প্রদান, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সর্বস্তরে সুযোগ প্রদান।
প্রতিবন্ধী চাকরি প্রত্যাশীরা জানান, গত ৩০ মার্চ ৪০তম বিসিএস পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে পিএসসির হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হয়। পিএসসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে এ বিষয়ে বৈঠক করেও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। এরমধ্যেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক সরকারি চাকরি ‘রিসোর্স শিক্ষককে’ ৪৫টি শূন্যপদ পূরণ করার জন্য গত ১৭ এপ্রিল একটি সার্বজনীন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরফলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা সে নিয়োগে পিছিয়ে পরে। তাই, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মক্ষেত্রে যোগদানের জন্য প্রহসনমূলক ব্যবস্থা দূর করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়োগ ও যোগদানের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূর করার দাবি জানাচ্ছি।
তাঁরা আরও জানান, এই জটিলতা নিরসনে বিভিন্ন সময় সংবাদ সম্মেলন, আলোচনা সভা, অবস্থান ধর্মঘট পালন করে প্রতিবন্ধদের কর্মস্থলে যোগদানে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা নিরসন ও বিশেষ ব্যবস্থায় নিয়োগসহ ছয় দফা দাবি জানিয়েছি। দাবিগুলো জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু জটিলতা নিরসনে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় প্রেসক্লাবের সামনে ৭ জুলাই থেকে লাগাতার অবস্থান নিয়েছি। ছয় দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিবন্ধী চাকরি প্রত্যাশীদের অবস্থান ধর্মঘট চলবে। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের জটিলতা নিরসনে জাতীয় সংসদে প্রস্তাব উত্থাপনের জন্য ৬ দফা দাবি জানিয়ে ৩৪৯ জন সংসদ সদস্যের কাছে গত ৭ জুলাই লিখিত সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবন্ধীদের সড়ক অবরোধে ভোগান্তি বেড়েছে নগরবাসীর। রাজধানীর আজিমপুরের বাসিন্দা ওয়াহিদুজ্জামান জানান, তিনি তার অসুস্থ ভাইকে নিয়ে প্রাইভেটকারে করে গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে রওনা হন। প্রতিবন্ধীদের রাস্তা অবরোধের কারণে এক ঘণ্টারও বেশি সময় প্রাইভেটকার এক জায়গায় স্থির দাঁড়িয়ে থাকে। একঘণ্টা পর সব যানবাহন উল্টো পথে ঘুরে গন্তব্যে রওনা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেরে বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম মুন্সি বলেন, ‘প্রতিবন্ধীরা সড়কের একপাশে অবস্থান নিয়েছে। একদিকে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।’
একপাশে যান চলাচল বন্ধ থাকায় অন্যপাশ দিয়ে সব যান চলাচল করছে। ফলে তেমন ভোগান্তি হচ্ছে না বলেও জানান ওসি জানে আলম।