দৈনিক প্রথম আলোর উদ্যোক্তা লতিফুর রহমান আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ বুধবার সকালে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে নিজস্ব বাসভবনে তিনি ইন্তেকাল করেন।
লতিফুর রহমান স্ত্রী, পুত্র, দুই কন্যাসহ আত্মীয়স্বজন, গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি প্রথম আলোর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান মিডিয়াস্টার লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। তিনি ডেইলি স্টার পত্রিকারও অন্যতম অংশীদার।
লতিফুর রহমানের জন্ম জলপাইগুড়িতে, ১৯৪৫ সালের ২৮ আগস্ট। তিনি ঢাকায় থাকতেন গেন্ডারিয়ায়। পড়াশোনার শুরু সেন্ট ফ্রান্সিস স্কুলে। সেখান থেকে ১৯৫৬ সালে শিলংয়ের সেন্ট এডমন্ডস স্কুলে। তারপর কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে।
১৯৬৫ সালে ঢাকায় ফিরে আসেন লতিফুর রহমান। ঢাকায় এসে ১৯৬৬ সালে ডব্লিউ রহমান জুট মিল ট্রেইনি হিসেবে কাজ শুরু করেন। দেড় বছর কাজ শেখার পর নির্বাহী হিসেবে যোগ দেন, কাজ করেন ১৯৭১ সাল পর্যন্ত।
১৯৭২ সালে তিনি সবকিছু নতুন করে শুরু করেছিলেন প্রায় শূন্য হাতে। নিজের হাতে তৈরি বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক গ্রুপ ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান ছিলেন। ট্রান্সকম গ্রুপের মধ্যে রয়েছে, ট্রান্সকম বেভারেজ, ট্রান্সকম ইলেকট্রনিক্স, এসকেএফ ফার্মাসিটিক্যালস, ট্রান্সকম ফুড, ট্রান্সকম ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, ট্রান্সকম কনজ্যুমার প্রোডাক্ট ও মিডিয়াস্টার। ছিলেন চা বাগানের সাথেও সম্পৃক্ত।
লতিফুর রহমান দৈনিক প্রথম আলোর পরিচালনা প্রতিষ্ঠান মিডিয়াস্টারের চেয়ারম্যান এবং দ্য ডেইলি স্টারের পরিচালনা প্রতিষ্ঠান মিডিয়াওয়ার্ল্ডের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন।
লতিফুর রহমান আইসিসি প্যারিসের নির্বাহী বোর্ডের সদস্য, আইসিসি বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ব্র্যাকের পরিচালনা কমিটির সদস্য। তিনি বাংলাদেশ বেটার বিজনেস ফোরাম এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উপদেষ্টা কমিটির সদস্য। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাত বারের প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ সরকারের ট্রেড বডি রিফর্মস কমিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী বোর্ডের সদস্য ছিলেন।
ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে নীতি-নৈতিকতা, সুনাম আর সততার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১২ সালে তিনি পান বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড, যা ব্যবসা-বাণিজ্যের জগতে নোবেল বলে খ্যাত।
লতিফুর রহমানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান,
গভীর শোক প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। শোকবার্তায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের অর্থনীতিতে লতিফুর রহমানের অবদানের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
গভীর শোক প্রকাশ করে মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে পৃথক শোকবার্তা পাঠিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ, তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক ও একই মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম তাঁর শোকবার্তায় মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেছেন শিল্পপতি লতিফুর রহমান। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। শোকবার্তায় তিনি বলেছেন, লতিফুর রহমানের মৃত্যু দেশ ও জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁকে হারিয়ে আমরা শোকাহত।