বরগুনার বেতাগী উপজেলার ৯৪নং পূর্ব গাবতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তার অনিয়ম দুর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতার কারণে স্কুল বন্ধ হওয়ার উপক্রম বলে জানা গেছে।
জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন প্রায়ই স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন। একই অবস্থা সহকারী শিক্ষকদেরও। এছাড়া স্কুলের নামে বরাদ্ধকৃত প্রায় ২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। আর এ অনিয়ম দুর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতার কারণে কমে গেছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। ফলে স্কুলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ১ম ও ২য় শ্রেণিতে মোট ৮ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে। ২য় শিফটে ৩য় শ্রেণির কোনো শিক্ষার্থীই আসেনি। ৪র্থ শ্রেণিতে ১ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে। এসময় প্রধান শিক্ষক দাবি করেন, এবারের ৫ম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় ৫ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে। স্কুলটিতে মোট ৪৬ জন শিক্ষার্থী আছে বলেও জানান তিনি। কিন্তু সরেজমিনে প্রাক-প্রাথমিকের ১২ জন শিক্ষার্থীর একজনকে উপস্থিত পাওয়া যায়নি। এমনকি প্রাক-প্রাথমিকের কোনো হাজিরা খাতাও নেই। প্রথম ও তৃতীয় শ্রেণির হাজিরা খাতায় ১৩ নভেম্বরের পরে নেই কোনো শিক্ষার্থীর উপস্থিতি। দ্বিতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির হাজিরা খাতায় ৩০ আগস্টের পরে কোনো শিক্ষার্থীর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, বিদ্যালয়ের তিনটি শ্রেণিকক্ষের দুটিতে নেই কোনো বেঞ্চ বা শিক্ষা সরঞ্জাম। মাত্র একটি কক্ষে কয়েকটি বেঞ্চ ও দুটি করে চেয়ার টেবিল দেখা গেছে।
এদিকে, স্কুলটিতে ৫টি শিক্ষকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ৩ জন। তাদের উপস্থিতিতেও রয়েছে গরমিল, নেই কোনো হাজিরা খাতা। সহকারী শিক্ষক কামরুন্নাহার সাথী ১২ নভেম্বর থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত ছিলেন অনুপস্থিত।
কামরুন্নাহরা সাথীর অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
স্থানীয় অভিভাবকদের অভিযোগ করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, প্রধান শিক্ষক নিয়মিত স্কুলে আসেন না। ফুলঝুড়ি বাজারে তার একটি লাইব্রেরি দোকান আছে। তিনি নিয়মিত সেখানেই বসেন। মাঝে মাঝে এসে খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান। তার বড় ভাই ইউপি সদস্য ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হওয়ায় স্থানীয়রা কোনো প্রতিবাদ না করে তাদের সন্তানদের দূরবর্তী স্কুলে ভর্তি করেছেন।
অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও জানান, সরকারি স্কুলের এই অবস্থার জন্য দায়ী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার। তাদেরকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে তারা বছরের পর বছর এই অনিয়ম করে আসছে।
স্কুলের বিষয়ে বরাদ্ধকৃত ২ লাখ টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ করার সময় বাড়িয়ে এনেছেন। কিন্তু এ কথার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি তিনি।
এ বিষয়ে বেতাগী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মিজানুর রহমানের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
বেতাগী উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।