‘প্রশ্নপত্র যখন কক্ষে যায়,তখনই ফাঁস হয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক |

যারা পরীক্ষা কেন্দ্রে ডিউটি করছেন তাদের সহযোগিতা ছাড়া প্রশ্নফাঁস সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন। তিনি বলেন, পরীক্ষা কেন্দ্রে যারা ডিউটি করেন তাদের সহযোগিতা ছাড়া প্রশ্নফাঁস সম্ভব নয়। কেন্দ্র থেকে যখন পরীক্ষার কক্ষে প্রশ্ন পাঠানো হয় তখনই কোনো দুষ্টু লোক প্রশ্নফাঁস করেন। প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত গ্রেপ্তার হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ ১৪ জনকে রোববার (১১ই ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন গোয়েন্দা পুলিশের এ কর্মকর্তা।

যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, যাদেরকে ধরেছি তারা ফেক এবং ফাঁস হওয়া প্রশ্ন নিয়ে ম্যাসেঞ্জার,হোয়াটস অ্যাপ,ইমুতে গ্রুপ তৈরি করে ছেড়ে দিতো। প্রথম দিকে ফাঁস প্রশ্ন ফেক বলে দাবি করেন তিনি।

আবদুল বাতেন বলেন, আসামিরা পরীক্ষার আগের দিন ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁস করে শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করে। পরেরদিন পরীক্ষা শুরুর ৩০-৪০ মিনিট আগে কেন্দ্র থেকে বিভিন্নভাবে প্রশ্ন সংগ্রহ করে। সেগুলো ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার, ইমো এবং হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ থেকে শিক্ষার্থীদের কাছে এগুলো ছড়িয়ে দেয়া হয়। এর বিনিময়ে তারা বিকাশ ও রকেটের মাধ্যমে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা আদায় করে।

তিনি বলেন, প্রশ্ন যখন পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে হলে যায় ওই সময়টাতে কেউ এর ছবি তুলে আসামিদের পাঠায়। এই সময়টা পরীক্ষার ৩০-৪০ মিনিট আগে। এই সময়ের আগে যেসব প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার কথা শোনা যায় সেগুলো ভুয়া প্রশ্ন। তৃণমূল পর্যায় থেকে অর্থাৎ পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে কারা প্রশ্নের ছবি তুলে ফাঁস করছে, কারা এই চক্রের সঙ্গে জড়িত তাদের কাছে যাওয়া খুব কঠিন।

আসামিরা হচ্ছেন মো. রাহাত ইসলাম, মো. সালাহউদ্দিন, মো. সুজন, মো. জাহিদ হোসেন, মো. সুফল রায় ওরফে শাওন, মো. আল-আমিন, মো. সাইদুল ইসলাম, মো. আবির ইসলাম নোমান, মো. আমান উল্লাহ, মো. বরকত উল্লাহ, আহসান উল্লাহ, মো. শাহাদাৎ হোসেন ওরফে স্বপন, ফাহিম ইসলাম এবং তাহসিব রহমান।

এদের মধ্যে আমান উল্লাহ, আহসান উল্লাহ এবং বরকত উল্লাহ ৩ ভাই। তারা প্রতিদিন ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে প্রশ্ন ফাঁস করেছে। আহসান সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী।

তাদের কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ এবং ২৩ টি স্মার্টফোন এবং ২ লাখ ২ হাজার ৪০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

আসামিরা যাদের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করছে সুনির্দিষ্টভাবে কারো নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওরা শত শত হাজার হাজার চেইন। কখনো চট্টগ্রাম থেকে প্রশ্ন পাঠানো হয়, কখনো আরেক জেলা থেকে। তাদের শনাক্ত করা কঠিন।

সম্পতি একটি পরীক্ষার প্রশ্ন সেদিন সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে ফাঁস হয়েছে। তদন্তে ৩০-৪০ মিনিট আগে ফাঁসের তথ্য পাওয়া গেলে এতো আগে প্রশ্ন কীভাবে ফাঁস হল? জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন ফাঁস রোধের পরামর্শ দেন আবদুল বাতেন। তিনি বলেন, শুধু শিক্ষার্থী নয়, পরীক্ষার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত প্রতিটি কর্মকর্তার মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ করলে সুফল পাওয়া যেতে পারে।

প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনায় শিক্ষা বোর্ড কিংবা মন্ত্রণালয়ের কারও সংশ্লিষ্টতা পেয়েছেন কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এপর্যন্ত তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে। কয়েকজনের মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। তাদের মোবাইলে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত অনেক আলামত তাৎক্ষণিকভাবে পেয়েছে পুলিশ।

গত বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে প্রাথমিক ও অষ্টম শ্রেণি সমাপনী পরীক্ষার সকালে বিভিন্ন ফেইসবুক পেইজ ও গ্রুপে প্রশ্ন ও উত্তর ছড়িয়ে পড়ে। একই ঘটনা ঘটছে এবার এসএসসি পরীক্ষায়, প্রতিটি পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়ছে ফেইসবুক গ্রুপ-মেসেঞ্জারে। এর আগের পরীক্ষাগুলোতে পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টাখানেক প্রশ্ন ফাঁস হলেও শনিবার ঘণ্টা দেড়েক আগেই কয়েকটি ফেইসবুক গ্রুপে দেওয়া হয় গণিতের বহুনির্বাচনী প্রশ্নপত্রের উত্তরসহ ছবি। উল্লেখ্য, এ বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় আগের পাঁচ দিনের মতো শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) গণিতের প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ অনুযায়ী, সকাল ৮টা ৫৯ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রুপে গণিতের ‘খ-চাঁপা’ সেটের প্রশ্নপত্রটি পাওয়া যায়।

গত কয়েকবছরে কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি ও পুলিশি তৎপরতায় প্রশ্নফাঁসের অন্যতম সূতিকাগার বিজি প্রেস অনেকটাই নিয়ন্ত্রনে এসেছে বলে জানা যায়। তবে, ট্রেজারি থেকে কেন্দ্রের প্রশ্ন নেয়ার পথে ও নেয়ার পরে কতিপয় নামধারী শিক্ষক তা স্মার্টফোনের মাধ্যমে কপি করে ছড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা: শিক্ষক-শিক্ষার্থী বহিষ্কার - dainik shiksha ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা: শিক্ষক-শিক্ষার্থী বহিষ্কার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা: শিক্ষক-শিক্ষার্থী বহিষ্কার - dainik shiksha ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা: শিক্ষক-শিক্ষার্থী বহিষ্কার অবন্তিকার আত্মহত্যা: সাতদিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্নের আশ্বাস জবি উপাচার্যের - dainik shiksha অবন্তিকার আত্মহত্যা: সাতদিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্নের আশ্বাস জবি উপাচার্যের হয়রানির প্রতিকার চেয়েও ফল পাননি অবন্তিকা, অভিযোগ মায়ের - dainik shiksha হয়রানির প্রতিকার চেয়েও ফল পাননি অবন্তিকা, অভিযোগ মায়ের নতুন শিক্ষাক্রম: শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে মিলছে না মূল্যায়ন - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম: শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে মিলছে না মূল্যায়ন মূল্যায়ন বুঝলেও নৈপুণ্য অ্যাপে চ্যালেঞ্জের মুখে শিক্ষকরা - dainik shiksha মূল্যায়ন বুঝলেও নৈপুণ্য অ্যাপে চ্যালেঞ্জের মুখে শিক্ষকরা ‘পড়তে ও লিখতে’ শেখা প্রকল্প কেনো - dainik shiksha ‘পড়তে ও লিখতে’ শেখা প্রকল্প কেনো please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024721622467041