প্রশ্নফাঁস স্বীকার, তবে পরীক্ষা বহাল

মোশতাক আহমেদ |

এসএসসি পরীক্ষায় কিছু বিষয়ের নৈর্ব্যক্তিক (এমসিকিউ) অংশের প্রশ্নপত্র পরীক্ষা শুরুর আগমুহূর্তে ফাঁসের প্রমাণ পেয়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি। অবশ্য কমিটি ‘ফাঁস’ শব্দটি ব্যবহার না করে বলেছে, কিছু বিষয়ে পরীক্ষা শুরুর আগমুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ঘনিষ্ঠ দলে (ক্লোজ গ্রুপ) প্রকাশিত হয়, যার সঙ্গে মূল নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্রের মিল রয়েছে।

প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পেলেও ‘সামগ্রিক বিবেচনায়’ কমিটি কোন বিষয়ে পরীক্ষা বাতিল না করার সুপারিশ করেছে। কমিটির যুক্তি হলো, ওই সব ঘনিষ্ঠ দলে পরীক্ষার্থী খুবই কম। এতে প্রায় ২০ লাখ পরীক্ষার্থী প্রভাবিত হয়নি। এছাড়া কোন বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল করে নতুন করে প্রচলিত পদ্ধতিতে নেওয়া হলে আবারও প্রশ্নপত্র ফাঁসের আশঙ্কা রয়েছে।

আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির যাচাই বাছাই শেষে তৈরি করা প্রতিবেদনে এসব কথা রয়েছে। আজ মঙ্গলবার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কমিটির প্রধান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর।

গত ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে এসএসসির লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি। এবার শুরু থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটে। পরীক্ষা শুরুর আগে থেকে পরীক্ষা চলাকালীন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে পারেনি সরকার। ১৭ দিন লিখিত পরীক্ষা ছিল। এর মধ্য আবশ্যিক বিষয়ের ১২ টি প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে।
একাধিক শিক্ষাবিদ মনে করেন পরীক্ষা শুরুর সামান্য আগে প্রশ্ন ফাঁস হলে তাকে ফাঁসই বলতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্টদের দায় নিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিউটের সাবেক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রথমত কতক্ষণ আগে এং কয়জন প্রশ্নপত্র পেল, সেটা বড় কথা নয়। কথা হলো, প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে এবং সেই প্রশ্নে পরীক্ষা নিলে সেটা আর পরীক্ষাই থাকে না। এর দায় মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের স্বীকার করতে হবে। অবশ্য তিনি পুনরায় পরীক্ষা নেবার বিপক্ষে। তার মতে, এতে পরীক্ষার্থীদের আরও কষ্ট দেওয়া হবে।

এসএসসির প্রথম দুই দিনের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের পর ব্যাপক সমালোনার মুখে ৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীরকে প্রধান করে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ যাচাই বাছাইয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়।

গত ১১, ১৮ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনটি সভা করে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে। কমিটি সূত্রে জানা গেছে, তারা পর্যালোচনা করে দেখেছে, সামাজিক যোগাযোগর মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা সারা দেশে ঘটেছে, এমন তথ্য তারা পায়নি।

তবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ দলে পরীক্ষা শুরুর আগেভাগে কিছু প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এগুলোর সঙ্গে মূল নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের মিল রয়েছে। এ ধরনের একেকটি ঘনিষ্ঠ দলে ১০ থেকে ১০০ সদস্য থাকতে পারে। কমিটির মতে, এবছর পরীক্ষা শুরুর আধঘন্টা আগেই পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ বাধ্যতামূলক ছিল। পরীক্ষা শুরুর আগেভাগে কিছুসংখ্যক পরীক্ষার্থীর প্রশ্ন পাওয়ার সুযোগ থাকলেও তারা খুব বেশি লাভবান হতে পারেনি। অল্পসংখ্যক পরীক্ষার্থী কিছু সুবিধা পেলেও এ জন্য পরীক্ষা বাতিল করা হলে প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী বিপদে পড়বে, যা যুক্তিসংগত হবে না।

কয়টি বিষয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে না বললেও তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭ ফেবরুয়ারি ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র সকাল ৯ টা ৫৩ মিনিটে এক ব্যক্তির মোবাইল ফোনে পাওয়ার তথ্য দেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক। পদার্থ বিজ্ঞানের প্রশ্নপত্র চট্টগ্রামে ১৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯ টা ২৫ মিনিটে কয়েকজনের মোবাইলে পাওয়ার তথ্য দেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাদের সঙ্গে যেসব পরীক্ষার্থী ছিল তাদের খুঁজে বের করে তাদের ফল বাতিলসহ আইনি ব্যবস্থা নিতে বলেছে কমিটি।

প্রশাসনিক কমিটির প্রথম সভা আজ

এসএসসিসহ পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে উচ্চ আদালতের করে দেওয়া প্রশাসনিক কমিটির প্রথম সভা আজ (মঙ্গলবার) বিকেল পাঁচটায় বুয়েটে অনুষ্ঠিত হবে। কমিটির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ সোহেল রাহমান এ কথা জানান।

সূত্র: প্রথম আলো


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032639503479004