প্রশ্নফাঁসের ঘটনা এড়াতে আরও কৌশলী হচ্ছে প্রাথমিক অধিদপ্তর

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের প্রথম ধাপে সাতক্ষীরায় লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা থেকে একটি চক্র এ প্রশ্নফাঁস করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় সাতক্ষীরার স্থানীয় পাঁচ ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতাও পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা থেকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে জানিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) মহাপরিচালক এ এফ এম মনজুর কাদির। ২য় ধাপে যাতে প্রশ্নফাঁসের ঘটনা পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য আরও কৌশল অবলম্বন করা হবে।

শনিবার (২৫ মে) মনজুর কাদির সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিয়োগ পরীক্ষার প্রথম ধাপে সাতক্ষীরায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য-প্রমাণ আসেনি। এ ঘটনার বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

মহাপরিচালক বলেন, ‘যে স্থানে প্রশ্নফাঁসের ঘটনা শোনা যাচ্ছে, সেখানে সেদিন পরীক্ষা ছিল না, দ্বিতীয় ধাপে সাতক্ষীরায় নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে। এ কারণে প্রতিবেদন পাওয়ার আগে কোনো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে পরবর্তী ধাপে যেন এমন ঘটনা কেউ না ঘটাতে না পারে, সেজন্য আরও কৌশল অবলম্বন করা হবে।’

জানা গেছে, শুক্রবার দেশের মোট ১১ জেলায় সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৬ লাখ প্রার্থী এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। নিয়োগ পরীক্ষার আগে সাতক্ষীরার একটি কোচিং সেন্টার থেকে র‌্যাব প্রশ্নের উত্তর বলে দেয়ার সময় পরীক্ষার্থী, অভিভাবক এবং স্থানীয় চক্রের সদস্যসহ ২৯ জনকে আটক করে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত ২১ জনকে ২ বছর করে দণ্ড দেন। এদের মধ্যে ব্যাংক কর্মকর্তা এবং প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক আছেন।

অন্যদিকে পটুয়াখালীতে নকল সরবরাহের সময় ধরা পড়া এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ১ মাসের দণ্ড দেয়া হয়েছে। লক্ষ্মীপুরেও সোলায়মান নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। তিনি ফেসবুকে কথিত প্রশ্ন আপলোড করেছিলেন, যার সঙ্গে মূল প্রশ্নের মিল পাওয়া গেছে বলে দাবি পরীক্ষার্থীদের।

অনিয়মের দায়ে পাবনায় ৮ জন আটক এবং ৪ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন জেলায় পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে বেশ কয়েকজনকে আটক ও বহিষ্কারের খবর পাওয়া গেছে।

আটকদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, প্রশ্নপত্র সাতক্ষীরার নয়, ঢাকা থেকে ফাঁস করা হয়েছে। সাতক্ষীরায় রাতভর মোবাইল ফোনে প্রশ্ন সংগ্রহ করে উত্তর লিখে দেয়া হয় পরীক্ষার্থীদের।

সন্দেহ করা হচ্ছে, দেশের অন্যান্য জেলায়ও ফাঁসকৃত প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিন্তু তৎপরতার অভাবে কোথাও ধরা পড়েনি। কেউ কেউ বলছেন, সাতক্ষীরা থেকেও ফাঁস হতে পারে। তবে গ্রেফতার ব্যক্তিদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মূল হোতাদের বের করা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মনজুর কাদির বলেন, ‘ঢাকা থেকে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ আমাদের কাছেও এসেছে। কিন্তু সিস্টেম অনুযায়ী ঢাকা থেকে প্রশ্নফাঁসের কোনো সুযোগ নেই।’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার আগের রাত (বৃহস্পতিবার) ৭-৮টায় প্রশ্নপত্র চূড়ান্ত করা হয়। পরীক্ষা ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রশ্ন পাঠানো হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কোনো অভিযোগ এড়িয়ে যেতে চাই না, দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষার আগে আমরা আরও বেশি কৌশলী হব। কোনোভাবেই যাতে পরীক্ষার আগে প্রশ্নফাঁস না হয় সেটিই আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ থাকবে।’

উল্লেখ্য, সারা দেশে তিন পার্বত্য জেলা বাদে ৬১ জেলার ২৪ লাখ ১ হাজার ৯১৯ জন প্রার্থী প্রায় ১২ হাজার পদের বিপরীতে এই পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। রাজস্বখাতভুক্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-২০১৮’ লিখিত পরীক্ষার সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথম ধাপে ২৪ মে, দ্বিতীয় ধাপে ৩১ মে, তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা ২১ জুন এবং চতুর্থ ধাপের পরীক্ষা হবে ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028080940246582