পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস ‘যুগ যুগ ধরে চলে আসছে’ মন্তব্য করে দেশব্যাপী সমালোচনার মুখে থাকা শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের পাশেই দাড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতালি সফরের বিষয়ে সোমবার ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মন্ত্রী কি নিজে প্রশ্ন পত্র ফাঁস করতে গেছে, না কি সচিব গেছে?
“দেখুন প্রশ্নপত্র ফাঁস, এটা কোনো নতুন কিছু না, এটা কিন্তু সব সময় যুগ যুগ ধরেই চলে এবং কখনও প্রচার হয় কখনও প্রচার হয় না, এটা হল বাস্তবতা।
“এবারে যেটা হচ্ছে, এখন সমস্যা হয় গেছে প্রযুক্তি আমরা ব্যবহার করছি। আর এ প্রযুক্তি আমাদের সুযোগও করে দেয় আবার সমস্যাও তৈরি করে দেয়।”
বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষাসহ নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে ব্যর্থদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না- মাছরাঙ্গা টিভির সাংবাদিক রেজওয়ানুল হক রাজার করা প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে পরীক্ষার কতক্ষণ আগে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে ওই সাংবাদিকের কাছে জানতে চান প্রধানমন্ত্রী।
“আমি একটা কথা আপনাকে বলি, যে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে এটা কতদিন আগে ফাঁস হয়েছে সেটা বলতে পারেন? সাধারণত কতদিন আগে? কুড়ি মিনিট আগে?
“এখানে কিন্তু একটা প্রশ্ন আছে, যখন প্রশ্নপত্র যায় হলে বা যে প্রতিষ্ঠানে, সে প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পরে সেগুলো খোলা হয় এবং সেটা বিতরণের জন্য সবকিছু খুলে রাখা হয়। এখন সেখানে যদি কেউ চট করে ফটো নিয়ে মোবাইল ফোনে সেটাকে ছড়িয়ে দেয়, সেটা আপনি কী করবেন?”
গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। চলতি এসএসসি পরীক্ষায় প্রায় প্রতিটি বিষয়ে প্রশ্নপত্রই পরীক্ষা শুরুর কয়েকঘন্টা আগে ফেইসবুকে চলে আসে।
পরীক্ষার সকালে বিভিন্ন ফেইসবুক পেইজ ও গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ছে প্রশ্নপত্র পরীক্ষার সকালে বিভিন্ন ফেইসবুক পেইজ ও গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ছে প্রশ্নপত্র
ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে সরকার পরীক্ষা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগ থেকে ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে একদিন তা বাস্তবায়নের পর ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।
ওই প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, “একবার কথা হল ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাবে, ইন্টারনেট বন্ধ হলেই যে সব সমাধান হবে তা তো না। তাহলে মোবাইল ফোন-টোন, ডিজিটাল সিস্টেম টোটালি ব্লক করে দিতে হবে। আমাদের তো সবকিছু ডিজিটাল পদ্ধতি, তো সেটা হলে পরে কী অবস্থাটা? এটা চিন্তা করে দেখেন।”
প্রশ্ন ফাঁসকারীদের ধরিয়ে দিলে শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন সরকার প্রধান।
“আপনাদের একটা কথা বলি, একটা বের করে দিন যারা এটা করছে, সাথে সাথে আমরা শাস্তি দেব। কারণ আমরা চাই না এভাবে প্রশ্ন ফাঁস হোক বা এই বদনামটা হোক।”
এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আরেকটা প্রশ্ন আমার মনে জাগে। এই যে কুড়ি মিনিট আগে বা ধরলাম এক ঘণ্টা বা দুই ঘণ্টা আগে যদি প্রশ্ন ফাঁস হয়ে থাকে, এখানে একটা প্রশ্ন আমার যে, আমাদের এত বেশি ট্যালেন্টেড কে আছে?
“কারণ এক ঘণ্টা আগে সাধারণত পরীক্ষার হলে যাওয়ার জন্য ছাত্ররা প্রস্তুতি নেয়, হয় পথে থাকে বা যায় সেখানে প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে আধা ঘণ্টা আগে যাওয়ার কথা।”
আধাঘণ্টা আগে প্রশ্ন ফাঁস হলেও পরীক্ষার্থীরা ওই প্রশ্ন পেয়ে লাভবান হচ্ছে না বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
চলতি এসএসসি পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষাকক্ষে বসা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কোনো পরীক্ষার্থী হলে পৌঁছাতে না পারলে তাকে আর পরীক্ষার হলে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
শেখ হাসিনা বলেন, “ওই সময়ে বই খুলে উত্তর বের করা, ওখানে বেশ কয়েকশ উত্তর থাকে, সেখান থেকে কয়েকটা আসে। উত্তরটা সে খুঁজে বের করে কীভাবে? এ কথাটার উত্তর কেউ দিতে পারবে কি না তা জানার আছে। … এত ট্যালেন্ট এমন ফটোজেনিক (ফটোগ্রাফিক) মেমোরি কার আছে “
“অভিযোগগুলো আমাদের ওপর দেওয়া হচ্ছে, একটা সুর তুলে দেওয়া হচ্ছে যে প্রশ্নপত্র ফাঁস।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা কোনো দিন ঠিক না। কিন্তু এজন্য মন্ত্রীকে গালি দিতে হবে, সচিবকে গালি দিতে হবে। তাকে চলে যেতে হবে। রিজাইন করার সুর তোলা হয়েছে। সচিব আর মন্ত্রী গিয়ে তো প্রশ্নপত্র ফাঁস করে নাই।
“আপনারা সাংবাদিকরা যারা নিউজ করেন, আপনারা নিশ্চয়ই জানেন তো আপনারা দয়া করে করে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তাদের যদি ধরিয়ে দেন তাহলে আমরা তাদের শাস্তি দেব, অবশ্যই শাস্তি দেব।”
এমসিকিউ পদ্ধতির প্রশ্ন বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে জনমত তৈরিতে সাংবাদিকদের প্রতিবেদন করারও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, টিক মার্ক (এমসিকিউ) বেশি সমস্যা। ওটা তুলে দেব।
সরকারের কোনো ‘দোষ না পেয়ে’ এখন প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে ‘খোঁচাখুঁচি’ করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।