প্রশ্নফাঁসের বিরুদ্ধে এখন ব্যবস্থা হচ্ছে: ঢাবি উপাচার্য

ঢাবি প্রতিনিধি |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে সমালোচনার মধ্যে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান দাবি করেছেন, ‘এরকম ঘটনা আগেও ঘটত। তখন ব্যবস্থা নেওয়া হতো না, এখন হচ্ছে।’

মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ভবনের কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিসে ঘ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার ফল ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন তিনি।

এবার ঘ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠার পর পরীক্ষা বাতিলের দাবি উঠলেও তা অগ্রাহ্য করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে মামলা করেছে, তাতে গ্রেফতার হয়েছেন ছয়জন।

প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য বলেন, ‘আমরা এখন অনেক এগিয়েছি, এখন কিন্তু অনেক কাছে নিয়ে আসছি। এখন তো বলা হচ্ছে যে, কী জানি শুনলাম ৯টা ১৭, ৯টা ১৮, এরকম শুনলাম (পরীক্ষা শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে)।আগে কখনও কখনও শুনতাম দুইদিন-একদিন আগে। ক্রমান্বয়ে ক্লোজ করে যাচ্ছি কিন্তু। আমরা এখন এমন জায়গায় আসছি, যে রেহাই পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

গত শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যাম্পাসের বাইরে ৮১টি কেন্দ্রে ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শুরুর ৩১ মিনিট পরই হাতে লেখা প্রশ্নপত্রের ১৪টি ছবি সাংবাদিকদের হাতে আসে।


পরে যাচাই করে দেখা যায়, এ প্রশ্নপত্র পরীক্ষা শুরু হওয়ার ৪৩ মিনিট আগে (সকাল ৯টা ১৭ মিনিটে) এক শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোনে আসে।

এবার প্রশ্নফাঁস হয়েছে বলে স্বীকার করছেন কি না, এক সাংবাদিকের প্রশ্নে সরাসরি উত্তর এড়িয়ে উপাচার্য বলেন, ‘এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি বড় সাফল্য এবং সক্ষমতা সেটি হল যে এটি ধরে ফেলতেছি, আইডেন্টিফাই করা যাচ্ছে এবং আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে। ওই দিন কিন্তু তাৎক্ষণিক ধরে ফেলছে, শুধু ধরেনি প্রক্টর অফিসে এনে প্রক্টর জিজ্ঞাসাবাস করে আইনি কাঠামোর মধ্যে নিয়মিত মামলা হয়েছে ‘

অন্য দেশে এ ধরনের ঘটনায় দায়িত্বশীলদের পদত্যাগের কথা তুলে এক সংবাদকর্মী জানতে চান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন দায়ীদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না?

জবাবে উপাচার্য পাল্টা প্রশ্নে বলেন, ‘এই ছেলে তুমি নতুন আসছ? এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কি কোনোদিন এগুলার বিচার হইত? এগুলায় কোনোদিন এরেস্ট হইছে? মামলা হইছে? এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো মামলা করতেছে, গ্রেফতার করাচ্ছে এবং সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষার হল থেকে ডিভাইসসহ ধরে নিচ্ছে, ভর্তি বাতিল করতেছে। (আগে) কবে উদাহরণ পেয়েছ?’

প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ তদন্তে তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ। কমিটির দুই সদস্য হলেন জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন ইমদাদুল হক ও সহকারী প্রক্টর মাকসুদুর রহমান।

তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছেন জানিয়ে অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, তদন্ত কমিটিও সাংবাদিকদের দেওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে বলেছে, ডিজিটাল জালিয়াতি হয়েছে এবং সেই ডিজিটাল জালিয়াতিগুলো চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে বলেছে।

ফাঁস করা প্রশ্ন পেয়ে যারা পরীক্ষা দিয়েছে, তাদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবে, এ প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, ‘এখন যেটা যেভাবে চিহ্নিত হবে, সেটা বাতিল হয়ে যাবে। এই বিষয়ে জিরো টলারেন্স ইউনিভার্সিটির।’

২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে তা হয় ১৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আর এবছর ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে তা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ২৬ দশমিক ২১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

এর মধ্যে বিজ্ঞান শাখা থেকে পাসের হার ২৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ, ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে ১৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং মানবিক থেকে ৪৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

পাসের হারের এমন অস্বাভাবিক বৃদ্ধির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উপাচার্য বলেন, ‘এটা একেবারেই সত্য আমাদের অন্যান্য যে ইউনিটগুলো, সেই ইউনিটের দ্বিগুণ কিন্তু। এটা দেখার পরে, জানার পরে আমাদের প্রশ্ন ছিল, এটা ডিন ম্যাডাম ভালো বলতে পারবেন। যতটুকু আমি অবগত হয়েছি, সেটা হলো বিশেষ করে ইংলিশ এবং বাংলাদেশ অ্যাফেয়ার্স এই দুটোর প্রশ্ন তুলনামূলকভাবে বেশ সাবলীল এবং সেটিতে ভালো নম্বর পেয়েছে। ফলশ্রুতিতে এটি ঘটেছে।’

সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্যের সঙ্গে তদন্ত কমিটির প্রধান উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহম্মদ সামাদ, ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়ক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম এবং অনলাইন ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক হাসিবুর রশিদ উপস্থিত ছিলেন।

প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় মানুষের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে আস্থাহীনতা তৈরি হবে বলে মনে করেন কি না- প্রশ্ন করা হলে অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘না, মানুষের মধ্যে আস্থার জায়গাটা আরও শক্ত হলো। মানুষ আরও আস্থাশীল হয়েছে যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন জিরো টলারেন্সে আছে। এখানে কোনো খারাপ কাজ, অশুভ কাজ করে পার পাওয়া যায় না।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036499500274658