প্রশ্নফাঁসের ৮ হোতার অবৈধ সম্পদের তালিকা করছে সিআইডি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসে সম্পৃক্ত ১২৫ জনের মধ্যে সরাসরি আর্থিক সুবিধা ভোগ করেছেন আটজন। শিক্ষাজীবনেই প্রশ্ন বিক্রির টাকায় রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন তারা। কিনেছেন দামি গাড়ি ও জমি, বানিয়েছেন বাড়ি। ব্যাংক হিসাবেও যোগ করেছেন কয়েক কোটি টাকা। অবৈধ অর্থে গড়া এসব সম্পদের তালিকা তৈরি করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। শিগগিরই এসব সম্পদ জব্দের জন্য আদালতে আবেদন করবে সংস্থাটি। শুক্রবার (১৬ আগস্ট) বণিক বার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন নিহাল হাসনাইন।

আট বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে অর্থ আয়ের পর ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল থেকে ছাত্রলীগের নেতা মহিউদ্দিন রানা ও অমর একুশে হল থেকে আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন পরীক্ষার হল থেকে ইশরাক হোসেন নামে এক পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়। এরপর প্রায় দুই বছর তদন্ত করে প্রশ্নফাঁস চক্রের ৪৭ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। এদের মধ্যে ৪৬ জনই ঢাকার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তদন্ত ও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে পাওয়া তথ্যে প্রশ্নফাঁসের এ মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭ শিক্ষার্থীসহ মোট ১২৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে সিআইডি।

প্রশ্নফাঁস চক্রের সদস্যদের মধ্যে আটজনের ব্যাংক হিসাবে বিপুল অর্থ লেনদেনের তথ্য পেয়েছে সিআইডি। দুই বছর তদন্তের পর তাদের আসামি করে মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইনে আরেকটি মামলা করা হয়। মামলায় আসামি করা হয়েছে জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা চাঁপাইনবাবগঞ্জের হাফিজুর রহমান, বিসিএস নন-ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত নড়াইলের ইব্রাহিম, বিকেএসপির সহকারী পরিচালক রাজবাড়ীর অলিপ কুমার বিশ্বাস, বিএডিসির সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা সিরাজগঞ্জের মোস্তফা কামাল, নাটোর জেলার ক্রীড়া কর্মকর্তা পাবনার রাকিবুল হাসান এছামী, ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম, সাতক্ষীরার রিমন হোসেন ও আইয়ুব আলী বাঁধন।

এ বিষয়ে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, প্রশ্নফাঁসের মামলা নিয়ে তদন্তের একপর্যায়ে অর্থ পাচারের বিষয়টি সামনে আসে। তদন্তে দেখা যায়, এ চক্রের আটজন সদস্য সরাসরি আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন। প্রশ্নফাঁসের টাকায় তারা অবৈধ সম্পদ গড়েছেন। আটজনের প্রত্যেকেরই সম্পদের হিসাব পৃথকভাবে তৈরি করা হচ্ছে। অবৈধ অর্থে গড়া এসব সম্পদ জব্দের জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যেই আদালতে আবেদন করা হবে।

মামলার এজাহারে এদের মধ্যে সাতজনের ব্যাংক হিসাব, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায়, জনতা ব্যাংক কর্মকর্তা হাফিজুর রহমানের উত্তরার প্রাইম ব্যাংকের হিসাবে ২০১০ থেকে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে জমা হয়েছে প্রায় ২ কোটি ২ লাখ টাকা। উত্তরার সিটি ব্যাংকের হিসাবে তিনি ২০১৬ থেকে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২২ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ টাকার লেনদেন করেছেন। এ ছাড়া হাফিজুরের জনতা ব্যাংকের হিসাবে জমা হয়েছে ৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

প্রশ্নফাঁসের আরেক কারিগর ইব্রাহিমের সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখায় ২৮ লাখ ৩৮ হাজার টাকা, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের যশোর শাখায় ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এলিফ্যান্ট রোড শাখায় প্রায় ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা জমা হয়েছে। পাশাপাশি তিনি একটি হোন্ডা ভেজেল গাড়িও কিনেছেন। এছাড়া ইব্রাহিমের স্ত্রীর উত্তরা ব্যাংকের নড়াইল শাখায় ১ কোটি ৩৯ লাখ ৬১ হাজার টাকা জমা রাখা হয়েছে। অর্থাৎ ইব্রাহিমের ব্যাংক হিসাবে মোট প্রায় ৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। এসব টাকা প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে আয় করা বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ইব্রাহিম।

বিকেএসপির কর্মকর্তা অলিপ বিশ্বাসের মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এলিফ্যান্ট রোড শাখার হিসাবে ১৪ লাখ ৪০ হাজার, একই ব্যাংকের আরেক হিসাবে প্রায় ১ কোটি ৮ লাখ, ব্র্যাক ব্যাংকে ২১ লাখ, জনতা ব্যাংকে ৩৯ লাখ ৩৩ হাজার, উত্তরা ব্যাংকে ৪০ লাখ ৮৬ হাজার, ডাচ-বাংলা ব্যাংকে ৩৫ লাখ ও রূপালী ব্যাংকে ৩৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা জমা হয়েছে। এছাড়া তিনি ব্র্যাক ব্যাংকের এলিফ্যান্ট রোড শাখায় মায়ের নামে ৭০ লাখ টাকার এফডিআর করেছেন। সব মিলিয়ে তিনি ও তার মায়ের হিসাবে লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ২৯ লাখ টাকার বেশি।

অন্যদিকে বিএডিসির কর্মকর্তা মোস্তফা কামালের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সাতমসজিদ রোড শাখায় ১৫ লাখ ৭ হাজার টাকা ও ইসলামী ব্যাংকের মিরপুর শাখায় ১৭ লাখ ৭৩ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে। এ ছাড়া নাটোরের ক্রীড়া কর্মকর্তা রাকিবুল হাসানের হিসাবে ২৬ লাখ ৭০ হাজার ও ৩৮তম বিসিএসে উত্তীর্ণ আয়ুব আলীর ব্যাংক হিসাবে ৬০ লাখ টাকা জমা হয়েছে।

ব্যাংক হিসাবের বাইরেও জমি, বাড়ি ও গাড়ি কিনেছেন প্রশ্ন ফাঁসের আট কারিগর। এদের মধ্যে ইব্রাহিম নড়াইলের নড়াগাতী থানার তালবাড়িয়া গ্রামে গড়ে তুলেছেন ডুপ্লেক্স বাড়ি। এছাড়া খুলনার মুজগুন্নি আবাসিক এলাকায় জমি কিনে ছয়তলা ভবন নির্মাণ করেছেন তিনি। এর বাইরে গোপালগঞ্জেও বেশ কয়েক বিঘা জমি কিনেছেন ইব্রাহিম।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029990673065186