প্রসঙ্গ নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

করোনা দুর্যোগে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার যে বেহাল দশা তা সবার সামনে উন্মোচিত হয়েছে। প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের মানসম্মত দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সরকারি চিকিৎসালয়গুলো তাদের সীমিত ক্ষমতা নিয়ে এখন অবধি করোনা দুর্যোগে শামিল হলেও বেসরকারি হাসপাতালগুলো তা দেখাতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।

সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম, দুর্নীতি, সেবা প্রকল্পে গাফিলতিসহ সব ধরনের সঙ্কট ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা দুর্যোগে যথাসম্ভব তার নজরদারি অব্যাহত রাখলেও সব দিক রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। দুর্নীতি আর দুর্বৃত্তায়নে মহামারির দুঃসময়কে যে বিপর্যয়ের মধ্যে টেনে নিয়ে গেছে তাও লোকসম্মুখে এসেছে। রিজেন্টের সাহেদ থেকে আরম্ভ করে জেকেজি হেলথ কেয়ারের ডা. সাবরিনার করোনা নমুনা পরীক্ষা নিয়ে যে অমানবিক ব্যবসা মানুষকে তা হতবিহ্বল করে দিয়েছে।

ব্যবসায়িক স্বার্থ ন্যক্কারজনকভাবে অসুস্থ মানুষের স্বাস্থ্য ও প্রাণ ঝুঁকিকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে। এমন সব পঙ্কিল অধ্যায় আর চরম বাণিজ্যিক পুঁজির একচেটিয়া আধিপত্যকে সমূলে বিনাশ করাই শুধু নয়, তার চেয়েও বেশি পুরো স্বাস্থ্য পরিষেবাকে নতুনভাবে ঢালে সাজিয়ে একে গণমুখী এবং জনবান্ধব করা অত্যন্ত জরুরি।

সোমবারে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাপ্তাহিক মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় নতুন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সেবার আধুনিক প্রকল্প তৈরির প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভার এই বৈঠকটি দেশের ইতিহাসে এই প্রথম। খুলনায় একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির জন্য উত্থাপিত প্রস্তাবনাটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে এই চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়টি তার নতুন কর্মপ্রকল্পে এগিয়ে যাবে আগামীতে।

মহতী এই উদ্যোগটি যেন সব ধরনের স্বচ্ছতা, গণমুখিতা এবং নীতি নৈতিকতায় তার নতুন কর্মযোগকে শাণিত করতে পারে সেটাই হবে অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। এখানে স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে অনবচ্ছেদভাবে সম্পৃক্ত থাকবে জ্ঞানচর্চার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। পাশাপাশি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের নবতর এবং সময়োপযোগী গবেষণা প্রকল্পে নতুন ধারা সূচনা করার মহান ব্রত নিয়ে এই স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার সর্বোচ্চ পাদপীঠটি তার লক্ষ্যকে নির্ধারণ করবে। অতীতের সমস্ত ভুল-ভ্রান্তি এবং ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে শিক্ষা নিয়ে আধুনিক আন্তর্জাতিক মানসম্মত একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে যা যা প্রয়োজন সবটাই আমলে নিতে হবে।

২০১৮ নির্বাচনী অঙ্গীকারে বিভাগীয় শহরগুলোতে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির যে রূপরেখা ছিল, সেটারই প্রথম উদ্যোগ হিসেবে খুলনা বিভাগে এই বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালটি তৈরির প্রকল্প অনুমোদিত হয়। ক্রমশ অন্যান্য বিভাগীয় শহরে তা সম্প্রসারণের কর্মপরিকল্পনাও হাতে নেয়া হবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে মানসম্মত শিক্ষক, গবেষক এবং বিশেষজ্ঞ তৈরির মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই এই চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুরু করা হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পকে তার প্রাসঙ্গিকতায় নতুনভাবে সাজানো গোছানো হবে বলে মন্ত্রিসভার বৈঠক থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। সময়ের প্রয়োজনে এই যুগোপযোগী পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে দেশের অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজে মানসম্মত চিকিৎসা ছাড়াও গবেষক ও বিশেষজ্ঞ তৈরিতে নতুন করে অবদান রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। বর্তমানে সারাদেশে চিকিৎসা শিক্ষার উন্নত মান নির্ধারণে নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয় তার যথাযথ ভূমিকা পালনে এগিয়ে যাবে, এটাই প্রত্যাশা।

নতুন এই উদ্যোগ আধুনিক ও আগামীর বাংলাদেশ তৈরির ক্ষেত্রে সমস্ত অব্যবস্থাপনাকে সমূলে উৎখাত করে নতুন এক নজির উপস্থাপন করুক এটাও সকলের প্রত্যাশা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030808448791504