প্রাণ এসেছে প্রাণের বইমেলায়

নিজস্ব প্রতিবেদক |

আতঙ্কের কালোমেঘকে উপেক্ষা করে বইপ্রেমীরা ভিড় জমাচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। গত বৃহস্পতিবারের রাজনৈতিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকা, সারা দেশ এবং অমর একুশে গ্রন্থমেলায় যে কালোমেঘের আভাস সৃষ্টি হয়েছিল তা কেটে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠেছে মেলা প্রাঙ্গন।

আজ শনিবার (১০ই ফেব্রুয়ারি) মেলায় দেখা যায় পাঠক ও লেখকদের উপচে পড়া ভিড়। মেলায় শিশু কিশোর, তরুণসহ সব বয়সের পাঠক ও লেখকদের দেখা য়ায়। পাঠকরা এসেছিল তাদের পছন্দের লেখকদের বই কিনতে আর লেখকরা এসেছিলেন বইয়ের প্রচারণার জন্য। গত বৃহস্পতিবারের রাজনৈতিক ঘটনার আতংকে যারা গতকাল মেলায় আসতে একটু ভয় পাচ্ছিলেন তারা আজ নির্ভযে মেলায় এসেছেন।

মেলায় আসা তানহা ইসলাম নামের এক দর্শনার্থী জানান, ‘গত বৃহস্পতিবারের খালেদা জিয়ার রায়ের জন্য গতকাল (শুক্রবার) মেলায় আসতে ভয় হচ্ছিল। কিন্তু আজ সে ভয় কেটে গেছে। তাই দুই মেয়েকে নিয়ে মেলায় এসেছি।’

সিসিমপুর প্রকাশনীর ম্যানেজার আতিকুর রহমান বলেন, ‘আজকে মেলায় দর্শনার্থীর ভিড় চোখে পড়ার মতো এটা ঠিক। তবে রাজনৈতিক কর্মসূচিও এখনো ওইভাবে শুরু হয়নি, তাই বলা যাচ্ছে না সামনে মেলা কী রকম হবে। তবে আশা করি মেলা রাজনৈতিক কর্মসূচির প্রভাব মুক্ত থাকবে। তাহলে বেচাকেনার অবস্থাও স্বস্তিদায়ক।’

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতির বই।

শনিবার দিন অনেক স্কুল প্রতিষ্ঠানসহ অফিস বন্ধ ও মেলায় শিশুপ্রহর থাকায় সকাল থেকেই ছিল কচিকাঁচা ও অভিভাবকদের ভিড়। বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত মেলার শিশুপ্রহরে অভিভাবক-শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাসে মুখরিত ছিল মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণ। এ সময় মেলায় দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। খুদে পাঠকদের পদচারণায় মুখর ছিল গ্রন্থমেলার বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চত্বর। বাবা-মা, ভাই-বোনসহ নিকট আত্মীয়দের হাত ধরে মেলায় এসেছে তারা। এ দিন মেলার শিশু চত্বরের সিসিমপুরের আয়োজনে শিশুদের জন্য নির্মল বিনোদনে আগ্রহ বাড়ে মেলায়। সকাল থেকেই অভিভাবকদের সাথে শিশু-কিশোরদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

শিশুচত্বরে তারা হালুম, টুকটুকি, শিকু, ইকরিদের দেখেছে। এতে আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ে কোমলমতিরা। সকাল থেকেই মেলায় বেচাকেনা ছিল ভালো। ফলে গত কয়েকদিনের দুঃখ ভুলে স্বস্তি ফিরে পান প্রকাশক-বিক্রেতা ও স্টল মালিকেরা।

জানতে চাইলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে রেজা পাবলিকেশনস এর স্বত্বাধিকারী মো. রেজা বলেন, গত কয়েকদিনের তুলনায় দর্শনার্থী বেড়েছে। বেচাকেনাও বেড়েছে। মনে হচ্ছে মেলায় পূর্ণতা এসেছে।

এ দিকে বিকেলে মেলার দ্বিতীয় পর্বে ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। এ পর্যন্ত মেলায় রেকর্ডসংখ্যক দর্শনার্থীর উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। বিকালে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দুটি প্রবেশ পথেই দেখা যায় বিরাট দর্শক সারি। ভেতরে প্রবেশের জন্য অপেক্ষমান রবিউল ইসলাম উচ্ছাস প্রকাশ করে বলেন, ‘বন্ধুরা মিলে মেলায় এসেছি। মেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে ভালো লাগছে।’

মেলায় হুমায়ূন পরিারের বই: এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এসেছে হুমায়ূন আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের লেখা বিভিন্ন বই এবং সেগুলো বিক্রি বইয়ের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসগুলোর মধ্যে দেয়াল, মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প ভালো বিক্রি হচ্ছে বলে জানা জানান প্রকাশকরা। এছাড়া হুমায়ূন আহমেদের ভাই জাফর ইকবালের লেখা বই ‘সাইক্লোন’, অপর ভাই আহসান হাবীবের ‘সত্যি অ্যাডভেঞ্চার’, তার স্ত্রী গুলকেতিন খানের লেখা ‘চৌকাঠ’ উপন্যাসগুলো ভালো বিক্রি হচ্ছে বলে জানান প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা।

অন্যান্য লেখকদের বই: হাসান আজিজুল হকের ‘আমার ইলিয়াস’, ইমদাদুল হক মিলনের ‘মায়ানগর’, ড.মোহম্মদ আমীনের ‘বঙ্গবন্ধুর বাণী’, সিরাজুল ইসলামের ‘পিতার হুকুম’, আবুল মাল আব্দুল মুহিতের ‘সংকট ও সুযোগ’, সৈয়দ আজিজুল হকের ‘মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটগল্প সমাজচেতনা জীবনের রূপায়ন’, জাফর ইকবালের শিশুতোষ বই ‘বড় হবে ঝিলমিল’ মাসুদ মাজহারের সমাজ-সংগ্রাম-বীক্ষণ’ বইসমূহ বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রকাশকরা।

আজকের বই: অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আজ ১৩০টি নতুন বই এসেছে। তারমধ্যে ১৬টি উপন্যাস, ১৫টি গল্পগ্রন্থ, প্রবন্ধ ৬টি, ছড়ার বই ৬টি, শিশুসাহিত্য ৩টি, গবেষণা ৪টি, জীবনীগ্রন্থ ৩টি, রাজনীতি ৩টি। এছাড়া, ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘অনলাইন জীবন ও অন্যান্য’, আজিজুর রহমানের স্মৃতির পাতায় বইগুলো অন্যতম।

শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতা: অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ৯টায় গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন। সকাল ১০টায় শিশু কিশোর সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচনও সম্পন্ন হয়।

মূলমঞ্চের আয়োজন : বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় রশীদ রবি গুহ, মুনীর চৌধুরী, সরদার ফজলুল করিম শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মফিদুল হক ও এম এম আকাশ। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও ডীন বেগম আক্তার কামাল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সানজীদা খাতুন। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে সেখানে।

শিশু চত্বরে শিশুপ্রহর: আজ বেলা ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মেলায় শিশুপ্রহর চলে ৪র্থ দিনের মতো। গতকালের ৩য় দিনের মতো আজকের শিশুপ্রহরও বেশ জমজমাট ছিল। ফুলের কলি যেন ছুটোছুটি করছে মেলা প্রাঙ্গন জুড়ে। এমনটাই ছিল আজকের শিশুপ্রহরের দৃশ্য। শিশুপ্রহরের বিক্রেতারা বলেন, গতকালের মতো আজকেও মেলায় অনেক শিশু এসেছে। তারা আনন্দের সাথে ঘুরে ঘুরে পছন্দের বই কিনছে।

৩য় শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাব্বি এসেছে তার মায়ের সাথে বইমেলায়। মেলায় এসে সে জানায়, অনেক ভালো লাগছে মেলায় এসে। এখানে অনেক কার্টুন আছে। আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে সিসিমপুর মঞ্চ। সেখানে আমি অনেক নেচেছি।’ ‘দিচ্ছি পাড়ি মামার বাড়ি’ও ‘ইকরিদের নতুন খেলা’ নামের দুটি বই তাকে কিনে দিয়েছে বলে তার মা রেহানা জানান।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের স্টল: এবারে বইমেলার বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গনে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে একটি স্টল। সেখানে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পড়ার জন্য বেশ কিছু নতুন বই প্রকাশ করেছে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা। সেখানে গিয়ে জানা যায়, ২০১১ খ্রিস্টাব্দ হতে তারা বাংলা একাডেমির সহযোগিতায় স্পর্শ ব্রেইল প্রকশনার মালিক নাজিয়া জাবিনের পৃষ্ঠপোষকতায় বইমেলায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য এ আয়োজন করে আসছে। এ বছর নতুন ১৪টি বইসহ মোট ৬১ টি সাহিত্যের বই প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তারমধ্যে জাফর ইকবালের ‘আঁখি এবং আমরা কজন’ ‘আমি তপু’, সোনিয়া হকের ‘অনন্তন্দ্রিা’, লুৎফর রহমান লিটনের ‘ঝ্যাং আর প্যাং’ বইগুলো অন্যতম।

স্টলে অবস্থানরত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাহিনুল হক জয় দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর জন্য অন্যান্য সাহিত্যের বইয়ের মতো প্রতিটি স্টলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতির বই রাখা প্রয়োজন। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে এটা আমাদের অধিকার।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0060808658599854