প্রাথমিক শিক্ষক পদায়নে সঙ্কট কেটে যাচ্ছে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

একে একে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় অবশেষে কাটতে শুরু করেছে সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের সঙ্কট। মামলা জটিলতা নিরসন হওয়ায় ইতোমধ্যেই ৩২ জেলায় শিক্ষকের যোগদান, প্রশিক্ষণ ও পদায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আরও ১২ জেলায় পদায়ন হচ্ছে চলতি সপ্তাহেই। তবে এখনও হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকায় বাকি ২৯ জেলার নিয়োগ কার্যক্রম নিয়ে চরম উদ্বেগে আছেন চাকরি পেয়েও কর্মস্থলে যোগদানে ব্যর্থ হওয়া শিক্ষকরা। যদিও মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর সকলকে আশ্বস্ত করে বলছে, উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। সকলেই যোগদান করতে পারবেন। সোমবার (২ মার্চ) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন বিভাষ বাড়ৈ।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়,  আর আগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় পাস করেও যোগদানে বিলম্ব হওয়ায় আন্দোলনে নামেন ৪০ জেলার নিয়োগ প্রত্যাশীরা। অবিলম্বে যোগদান ও পদায়ন নিশ্চিত করাসহ তিন দফা দাবিতে ঢাকায় বিক্ষোভও করেছেন শিক্ষকরা। জানা গেছে, নিয়োগ পরীক্ষায় সঠিকভাবে কোটা অনুসরণ করা হয়নি অভিযোগ তুলে দেশের ৪০ জেলায় রিট করেন চাকরি পেতে ব্যর্থ হওয়া প্রার্থীরা। এরপর আদালতের রায়ের কারণে নিয়োগ পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে পাস করা প্রার্থীদের যোগদান ও পদায়ন স্থগিত হয়ে যায়।

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ জুলাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। পরে ওই বছরের ১ থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশ থেকে ২৪ লাখ ৫ জন আবেদন করেন। গত বছর সারাদেশে প্রথম ধাপে ২৪ মে, দ্বিতীয় ধাপে ৩১ মে, তৃতীয় ধাপে ২১ জুন এবং চতুর্থ ধাপে ২৮ জুন লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় ৫৫ হাজার ২৯৫ জন পাস করেন।

আরও পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষক পদায়নে সঙ্কট কেটে যাচ্ছে

স্থগিত ৪১ জেলার প্রাথমিকের নতুন শিক্ষকদের মার্চে পদায়নের উদ্যোগ

দ্রুত যোগদানের দাবিতে চলা আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. শাওন নাজিউর বলেছেন, নিয়োগ পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে পাস করেও ৪০ জেলার প্রার্থীদের যোগদান স্থগিত রাখা হয়েছে। একের পর এক আদালতে রিট হচ্ছে আর আমাদের নিয়োগ কার্যক্রম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ছে। সকল পরীক্ষায় মোকাবেলা করে আমরা পাস করেছি, তার মধ্যে ২০ জেলায় নিয়োগ ও পদায়ন দেয়া হয়েছে। অথচ আমাদের অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বঞ্চিত নামে ফেসবুকে একটি গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। তার মাধ্যমে দেশের নিয়োগ বঞ্চিত ৪০ জেলার প্রার্থীরা একত্রিত হয়ে কর্মসূচি পালন করছেন। শিক্ষকরা তিন দফা দাবিও তুলেছেন।

দাবির মধ্যে আছে দ্রুত নিয়োগ নিশ্চিত করে পদায়ন, মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী এ বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে যোগদান কার্যকর করা এবং প্রাথমিক শিক্ষা সেক্টরের নিয়োগ বারবার কেন বিলম্বতি হয়-এ বিষয়ে দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আইনের আওতার আনা। দাবি আদায়ে মানববন্ধন শেষে আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন বরাবর একটি  স্মারকলিপিও দিয়েছেন।

এদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর আইনি পদক্ষেপ নিয়ে দ্রুত যোগদান নিশ্চিত করতে কাজ করছে বলে জানা গেছে। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা রোববার নিশ্চিত করেছেন, আদালতের মামলা জটিলতা নিরসন হয়ে গেছে ৩২ জেলায়। এর ফলে এসব জেলায় শিক্ষক পদায়ন প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু করা হয়েছে।

তার তাগেই ২০ জেলায় যোগাদন ও পদায়ন দেয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই আরও ১২ জেলার বিষয়ে আদালতের আদেশ পাওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা। জানা গেছে, মন্ত্রণালয় থেকে উচ্চ আদালতে আপিল করায় এ পর্যন্ত মোট ৩২ জেলার নিয়োগের স্থগিতাদেশ বাতিল হয়েছে। এখন এসব জেলায় চূড়ান্তভাবে পাস করা প্রার্থীদের যোগদান, প্রশিক্ষণ ও পদায়নের কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া বাকি ২৯ জেলার স্থগিতাদেশ বাতিলে আপিল করা করেছে অধিদপ্তর। আগামী সপ্তাহে এসব জেলার ক্ষেত্রে রায় পাওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেছেন, আদালতের স্থগিতাদেশ বাতিল হওয়ায় ৩২ জেলায় নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হচ্ছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে বাকি ২১ জেলায় যোগদান কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে। মার্চের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দেশের সকল জেলায় সহকারী শিক্ষকদের নিয়োগ দেয়া সম্ভব হবে। এ জন্য তারা সর্বোচ্চভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন বলেছেন, নীতিমালা অনুযায়ী প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। যারা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারেনি, তাদের মধ্যে একশ্রেণির প্রার্থী আদালতে গিয়ে মামলা করেছে। তার প্রেক্ষাপটে আদালত থেকে ৪১ জেলার নিয়োগ কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে। আমরা শক্ত হাতে সব মামলা মোকাবেলা করছি। আমাদের আইনজীবীরা প্রমাণ আদালতে দাখিল করেছেন। এ কারণে নতুন করে আর কোন জেলায় এ নিয়োগ-সংক্রান্ত মামলা গ্রহণ করা হচ্ছে না।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050308704376221