বদলি চাকরি জীবনের একটি অংশ। ছাত্রজীবন, চাকরি জীবন, দাম্পত্য জীবন, অবসর জীবন, মৃত্যু এভাবে হয়তো চাকরিজীবীদের জীবনচক্র হয়ে ওঠে! আবার জীবনের জন্য চাকরি; চাকরির জন্য জীবন নয়, এ কথাও সত্য।
প্রাথমিকের নারী শিক্ষকরা স্বামীর নিজ জেলায় বদলি হতে পারলেও স্বামীর কর্মস্থল এলাকায় বদলি হওয়ার স্বপ্ন সফল হয়েছে সম্প্রতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক বদলি নীতিমালা-২০১৮ জারি হওয়ায়। যাঁরা সেই সুযোগ পেলেন, সেটা তাঁদের জন্য নি:সন্দেহে আনন্দের। ধন্যবাদার্হ যাঁরা সেই সুযোগ করে দিলেন।
কিন্তু সে নীতিমালার একটি লাইনে ‘তবে স্বামী বা স্ত্রী বেসরকারি চাকরিজীবী হলে এই সুবিধার অন্তর্ভুক্ত হবেন না’ পীড়াদায়ক ও বৈষম্যমূলক মনে হয়েছে। এদেশের নামীদামী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে সেশনজট এবং সসীম সরকারি চাকুরির জন্য বেসরকারি চাকরিকে জীবনের অস্থিত্বের অবলম্বন করেন অনেকে অনন্যোপায় হয়ে । তাঁরা যে অযোগ্য সরকারি চাকরির জন্য তা বলা যায় না।
এই তো কয়েকদিন হলো মাত্র। দুটি দাম্পত্য জীবন ভেঙে গেলো আমার চোখের সামনে। মূল কারণ, স্বামী বা স্ত্রী বেসরকারি চাকুরে। স্ত্রী সরকারি চাকুরে এবং স্বামী বেসরকারি চাকুরে হওয়ায় সন্তান লালন পালন সহ স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক পারিবারিক দ্বন্ধ চরমে। স্বামী যদি তাঁর কর্মস্থলের কাছে স্ত্রীকে বা স্ত্রী যদি স্বামীর কর্মস্থলে স্বামীকে আনতে পারতেন, তবে তাঁদের এই সমস্যা হয়তো হতো না। সন্তানরা এখন এসবের ভিকটিম হচ্ছে। তাদের তো কোন দোষ ছিল না!
আমার এক আত্মীয়ের ছেলে ব্রিটেনে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে বিজনেস ল নিয়ে। এখন সে দ্বিতীয় বর্ষে। তাঁকে সরকার থেকে চাকুরির অফার দেয়া হয়েছে বার্ষিক আঠার হাজার পাউন্ডের বেতনে। সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। কারণ, এই চাকুরি সে বেসরকারী ভাবে করলে বার্ষিক চল্লিশ হাজার পাউন্ড কম হলেও পাবে। অামাদের দেশের বেসরকারি চাকুরি নিশ্চয় এমন না কিংবা সরকার বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থায় পড়ান না; চাকরি অফার করেন না।
এদেশের সার্বিক অগ্রগতিতে বেসরকারি চাকরিজীবীদের যদি ভুমিকা থাকে তবে বেসরকারি চাকুরে হওয়ার কারনে তাঁদের পারিবারিক জেলে খাটানো জীবন কাম্য হতে পারেনা।তাঁদের সন্তানরা ছোট বেলা থেকে ব্রাহ্মণ-চণ্ডালের পারিবারিক স্মৃতি নিয়ে বড় হওয়ার সুযোগ আমাদের দেওয়া হয়তো ঠিক না।দাম্পত্য সুখ- অসুখ,সন্তান সরকারি, বেসরকারি চাকুরি নির্বিশেষে নিশ্চয় সবার সমান। জীবনটাতো একটাই। একবার ভোগের। ভুপেন হাজারিকার গানের মতো,বলো কী তোমার ক্ষতি? জীবনের অথৈ নদী পার হয় তোমাকে ধরে দুর্বল মানুষ যদি? এক দেশ। এক আকাশ। এক ভাষা। অথচ একই দেশের মানুষে মানুষে কত ভেদাভেদ, নিয়ম, অনুশাসন।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, শাহজালাল মহাবিদ্যালয়, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ।
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]