প্রাথমিক শিক্ষক বদলিতে স্বংয়ক্রিয় পদ্ধতি প্রয়োগের চিন্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য অনলাইনে বদলি আবেদন নেয়া হবে। সফটওয়্যারের মাধ্যমে শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত বদলি কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে সফটওয়্যারের পাশাপাশি নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। তবে নতুন পদ্ধতি চালুর আগে পুরনো নীতিমালার অধীনেই শিক্ষক বদলি করা হবে।

জানা গেছে, শিক্ষক বদলি নীতিমালা ও সফটওয়্যার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে চার সদস্যের কমিটি নীতিমালা তৈরির কাজ করছে এবং সফটওয়্যার তৈরির দেখভাল করছে।

পরিপূর্ণভাবে প্রয়োগের উপযোগী হলে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের যে কোনো সময় নতুন নীতিমালার আলোকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বদলি কার্যক্রম শুরু করার চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ।

এমপিওভুক্তির জন্য প্রতিষ্ঠান যাচাইতে সফটওয়্যারের সহযোগীতা নেয়ার মতোই বদলির ক্ষেত্রেও একই কথা বলা হচ্ছে। বাস্তবে এর কতটুকু সফল হবে তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন শিক্ষকরা। এমপিওভুক্তি নির্ভুল করতে বুয়েটের সফটওয়্যারের ওপর ভরসা করার কথা বলা হলেও বাস্তবে ডজন ডজন ভুল ধরা পড়েছে। এ নিয়ে বেকায়দায় রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।   

জানা গেছে, বর্তমানে শিক্ষকরা বদলির জন্য উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে আবেদন করেন। আন্তঃবিভাগ ও সিটি কর্পোরেশনে বদলির জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। ফলে প্রতিবছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাস বদলি কার্যক্রমে প্রাথমিক শিক্ষা খাতে বড় ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি হয়। বদলি নিশ্চিত করতে অনেক শিক্ষক ক্লাস ফেলে তদবিরে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে ঘিরে একশ্রেণির বদলির দালালও তৈরি হয়েছে। শিক্ষকনেতাদের অনেকে টাকার বিনিময়ে বদলি করেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে। প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছেও তাদের যেতে হয়।

তবে, সারাবছর বদলি করা হলে সরকারি হাইস্কুল ও কলেজের মতোই অবস্থা তৈরি হবে। সারাবছরই বদলির তদবির চলবে। সারাবছরই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে বদলির জন্য ভীড় জমবে। এখন যেটা মাত্র তিনমাস হয়। 

জানা যায়, স্বয়ংক্রিয়ভাবে শিক্ষক বদলির একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। এটির ওপর মতামত নেয়া হবে। এ লক্ষ্যে শিগগিরই বৈঠক হচ্ছে বলে জানা গেছে। প্রস্তাবিত নীতিমালায় বিশেষ প্রয়োজনে শিক্ষকদের বদলি কার্যক্রম বছরজুড়ে অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে সাধারণ বদলি আগের মতোই রয়েছে। বদলির আবেদনে শিক্ষকরা পদায়নের তিনটি কর্মস্থলের নাম দেবেন। এরপর নীতিমালা অনুসারে সফটওয়্যার আবেদনকারীর পদায়নস্থলের নাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে চিহ্নিত করবে। এতে বলা হয়, একটি কর্মস্থলে একজন শিক্ষককে ন্যূনতম তিন বছর থাকতে হবে। এরপর শূন্য থাকা সাপেক্ষে তিনটি বিদ্যালয়ে বদলির জন্য তিনি আবেদন করতে পারবেন। জেলা সদর ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত স্বামী বা স্ত্রীর কর্মস্থলে বদলি হওয়ার সুযোগ থাকবে। তবে এ ধরনের ইস্যুতে চাকরিজীবনে একবার সুবিধা নেয়া যাবে। উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশনের বাইরে থেকে সর্বাধিক ১০ শতাংশ শূন্য পদে সংশ্লিষ্ট শহরে বদলি হওয়া যাবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উপজেলার বিদ্যালয়ের বাইরে থেকে বদলি শিক্ষকদের হালনাগাদ তালিকা রেজিস্টারে সংরক্ষণ করবেন। তবে বৈবাহিক কারণে বদলির ক্ষেত্রে এ শর্ত প্রযোজ্য হবে না।

প্রতিবন্ধী শিক্ষক, নদীভাঙন অথবা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শিক্ষকের বসতভিটাবিলীন হলে ও শিক্ষকের ওপর নির্ভরশীল প্রতিবন্ধী সন্তান থাকলে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এছাড়া বিভাগীয় অথবা জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষকরা বদলির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। তবে বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত শিক্ষিকা, বিবাহ বিচ্ছেদজনিত মামলা থাকলে একবার এ সুবিধা গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া প্রশাসনিক কারণে বদলি, সমন্বয়, পারস্পরিক সমঝোতায়, সংযুক্তি, বিশেষ কারণে বছরজুড়ে সুবিধামতো যে কোনো স্থানে বদলি হওয়া যাবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.005094051361084